কলকাতা: সিপিএমের সাবেক বিধায়ক প্রদীপ তা এর মৃতদেহে শ্রদ্ধা জানালেন বাম নেতারা। বুধবার রাতেই প্রদীপ তা এর মৃতদেহ কলকাতায় নিয়ে আসা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে বউবাজার থেকে তার লাশ নিয়ে শোক মিছিল শুরু হয়। সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর রাজ্য দফতরে নিয়ে যাওয়া হয় তার লাশ। সেখানে প্রয়াত এই নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান সিটুর রাজ্য সম্পাদক শ্যামল চক্রবর্তীসহ অন্যান্য নেতা-নেত্রীরা।
সেখান থেকে সিপিএমের রাজ্য দফতর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে আনা হয় এই নিহত নেতার লাশ।
বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যসহ বামফ্রন্টের নেতা-নেত্রী ও কর্মী-সমর্থকরা সেখানে
এই প্রয়াত নেতাকে শ্রদ্ধা জানান।
পরে ডিওয়াইএফআই এর রাজ্য দফতর ঘুরে মৃতদেহ বিধানসভা ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিধানসভার বাইরে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হল সাবেক বিধায়্ক প্রদীপ তা-কে। নজিরবিহীনভাবে এদিন স্পিকার বিমান ব্যানার্জি বা ডেপুটি স্পিকার সোনালী গুহ কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
আশ্চর্যজনকভাবে চিত্রসাংবাদিকদেরও এদিন ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় নি। বিরোধী দলনেতা সুর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘যে টেবিলের ওপরে রেখে বিধায়কদের শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় তার কাপড়ও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে কারো অঙুলি হেলনে।
তিনি বলেন, ‘বিধানসভায় যে শ্রদ্ধা জানানোর রীতি তা লঙ্ঘিত হয়েছে। যে গেট দিয়ে ঢোকার কথা সেই গেট দিয়ে ঢোকানো হয়নি। শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের যথাযথ ব্যবস্থা ছিল না। সরকার পক্ষের একজন প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলন না। এটা রাজনীতি ও দলতন্ত্র।
ক্ষোভে বিরোধীরা বিধানসাভার বাইরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এদিন সাবেক স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমও এই ঘটনার নিন্দা করেন। এদিন বিধানসভার কর্মীরা সাবেক বিধায়ক প্রদীপ তা’কে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
স্পিকার বিমান ব্যানার্জিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় তিনি জানতেন না। পাড়ায় তার একটি জরুরি মিটিং ছিল তাই তিনি প্রতিদিন যেমন সাড়ে ১১টায় ঢোকেন তা না করে ১২টা ০৫ মিনিটে ঢুকেছেন। তার সচিব ছিলেন, তিনি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন।
ক্যামেরাম্যানদের কেন ঢুকতে দেওয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্যামেরা না হলে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন হয় না, ব্যাপারটা তার জানা নেই। বিধানসভার সঙ্গে যুক্ত নন এমন কারোর সেখানে ঢোকার অনুমতি নেই।
এদিকে, বর্ধমানে দুই সিপিএম নেতার মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলার আবেদন গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ন প্যাটেল ও সমৃদ্ধ চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
বৃহস্পতিবার সকালে আদালতের কাজ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুব্রত মুখার্জি নামে এক আইনজীবী দুই সিপিএম নেতার মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত চেয়ে এই ডিভিশন বেঞ্চে মৌখিক আবেদন জানান।
তিনি বলেন, ‘গতকাল সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ তা ও জেলা কমিটির সদস্য কমল গায়েনের মৃত্যুর পর সরকার পক্ষ থেকেই তিন রকমের বক্তব্য পেশ করা হয়।
কয়েকজন মন্ত্রী জানান, এলাকা দখল করতে গেলে জনরোষে ওই দুই সিপিএম নেতার মৃত্যু হয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সিপিএমের গোষ্ঠী কোন্দলেই ওই দুই সিপিএম নেতার মৃত্যু হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়া পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জানান, দুই রাজনৈতিক দলের গোলমালের ঘটনার পরেই ওই দুই নেতার মৃত্যু হয়েছে। ’
সরকারি পক্ষ থেকেই একটি ঘটনা নিয়ে পরস্পর বিরোধী মন্তব্যের জের টেনে আবেদন জানানো হয় যাতে এই ঘটনার সিবিআই তদন্ত করানো হয়।
হাইকোটের ডিভিশন বেঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই বিষয়ে নিয়ম মেনে পিটিশন ফাইল করলে ওই আইনজীবীর বক্তব্য শোনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১২