নয়াদিল্লি : স্কুলে গেলে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দিনে জমা পড়বে ১০ রুপি করে। সেই টাকা হাতে আসবে স্নাতক হওয়ার পর।
স্রেফ এই ‘বাণিজ্যিক’ ফর্মুলাতেই উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েদের জীবন বদলে দিচ্ছেন ৭৮ বছরের বিজেন্দ্র ওরফে সাম সিং।
এক সময় ভারতের একটি বহুজাতিক সংস্থার প্রধান পদে ছিলেন সাম সিং। উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর জেলার অনুপসেহারের বাসিন্দা।
কর্মজীবন শেষ করে ১৯৯৭ সালে গ্রামে ফিরে সাম সিং চমকে যান। গ্রামের কোনো মেয়েই স্কুলে যায় না।
২০০০ সালে সাম সিং শুরু করলেন পরদাদা-পরদাদি এডুকেশনাল সোসাইটি, মেয়েদের দিনবদলের জাদুদণ্ড। ‘বাণিজ্যিক’ ফর্মুলার সঙ্গে দিনে তিনবার পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা, রান্না আর পরিবেশনের ভার ছাত্রীদের উপরেই।
প্রথাগত লেখাপড়ার পাশাপাশি রয়েছে হাতেকলমে শেখার ব্যবস্থা, যা কিনা খুলে দিতে পারে মেয়েদের আয়ের রাস্তা।
২০০০ সালে মাত্র ৩৫ জনকে নিয়ে শুরু হওয়া স্কুলে এখন পড়ে অন্তত ১ হাজার মেয়ে। পড়াশোনার শেষে অনেক মেয়েই ফ্যাশন ডিজাইনিং, শিক্ষকতাসহ নানা পেশার হাত ধরে স্বনির্ভর হয়েছেন।
সাম সিংয়ের কথায়, মেয়েদের আর্থিক ও সামাজিকভাবে স্বনির্ভর করার কাজটা বাণিজ্যিকভাবেই করার কথা ভেবেছি আমি।
স্কুল চালাতে মাসে খরচ ১০ লক্ষ রুপি। অবসরের পর পাওয়া টাকায় কাজ চলবে না। তাই সাম বন্ধু আর বহুজাতিক সংস্থার সহকর্মীদের কাছ থেকে সাহায্য তুলছেন। স্কুলের মেয়েদের তৈরি হস্তশিল্প বিক্রি করেও টাকা জোগাড় করছেন সাম সিং।
৭৮ বছরের সাম সিংয়ের আপাতত ভাবনা, তার মৃত্যুর পর কী হবে স্কুলের ভবিষ্যৎ? তার ভরসা স্কুলের সাবেক ছাত্রীরা। স্কুল থেকে পাস করে বেরনোর সময় যারা প্রথা মেনে একটা করে গাছ পুঁতে দিয়েছেন স্কুলচত্বরে, নামহীন একটা প্রজন্মের নিজস্বতা চিনে নেওয়ার প্রতীক হিসেবে।
ভারতে নারীদের সাক্ষরতার হার ৪৩ শতাংশ আর নাবালিকা অবস্থাতেই বিয়ে হওয়াটাই যেখানে রীতি, সেখানে সাম সিংয়ের একাকী উদ্যোগ যে কতটা জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাংলাদেশ সময় : ১৭৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১২