ঢাকা: ইডেন মহিলা কলেজের এক নম্বর প্রবেশদ্বারে ছাত্রীরা নিজের পরিচয়পত্র দেখিয়ে কলেজে প্রবেশ করছিলেন। প্রবেশের নিয়মে মোটামোটি কড়াকড়ি থাকলেও একটু কায়দা করে ঢুকে যাওয়া ভেতরে।
সোজা কড়ইতলার ক্যান্টিন থেকে একটু বাঁকা দিকে হাঁটা দিলেই খোদেজা খাতুন হলের প্রবেশদ্বার। ঢুকার সময় কড়াকড়ি থাকলেও হলের ভেতরে তেমন কোনো নিরাপত্তা নেই। ফলে সহজেই ঢুকে পড়া।
এতে দেখা গেলো কলেজের পরিবেশের সঙ্গে তেমন কোনো মিল নেই। হলের বারান্দাগুলোতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা খাবার। বাথরুমের অবস্থাও বেশ নাজুক; নোংরা পানিতে ভেসে গেছে হলের নিচের বাথরুমটি।
দোতালা, তিন তলাতেও একই অবস্থা। তিনতলার বড় হলরুমের ভেতর থেকে একজন বেরিয়ে এসে বললেন, কাউকে খুজছেন? উত্তর না দিয়ে বারান্দায় এতো ময়লা কেন জানতে চাইলে অপরপাশ থেকে উত্তর এলো, বিড়াল এসে ছড়িয়ে গেছে!
একটু কৌশলে জানতে চাওয়া হলো, কলেজের সার্বিক পরিবেশ সম্পর্কে। উত্তরে তিনি বললেন, ভালো। তবে..!
একটু থেমে গিয়ে বললেন, আপনি?ছোট বোনকে হোস্টেলে রাখার জন্য এসেছি জানতে পেরে আশ্বস্ত হলেন তিনি। প্রশ্ন করলেন, লিগ্যাল নাকি ইলিগ্যাল?
কিছুটা বিব্রত হয়ে অবাক কণ্ঠে জানতে চাইলে উত্তর এলো, মানে আপনি কী রাজনৈতিক নেত্রীদের ছত্রছায়ায় হলে রাখবেন? নাকি ডিপার্টমেন্ট অনুযায়ী? রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ভর্তি হলে তাকে ইলিগ্যাল বলা হয়।
এরপর জানালেন, চার বছর আগে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ইলিগ্যালি হলে সিট পেয়েছিলেন তিনি। পরে আবার ডিপার্টমেন্ট পদ্ধতি অনুযায়ী নতুন করে ১২ হাজার টাকা জমা দিয়ে লিগ্যাল সিট পান।
তবে নাম জানতে চাইলে অনিচ্ছা দেখান তিনি। একই হলের আরেক ছাত্রী আরিফা ইসলাম জানালেন, এ বছর তিনি হল থেকে বের হয়ে এসেছেন। তবে যখন ছিলেন তখন নেত্রীরা জোর খাটানোর চেষ্টা করেছেন যেন রুমে আরও একজন নতুন মেয়ে উঠানো যায়। নিতে না চাইলে দেওয়া হয় হুমকিও।
জানা গেলো লাকী নামে একজন ছাত্রী নেত্রী ইলিগ্যালি ছাত্রী তুলে থাকেন ওই হলে। কথা হলো তার সঙ্গে। লাকী বললেন, নতুন কাউকে সিট দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৫ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। খুব বেশি সমস্যা হলে এক থেকে দুই হাজার টাকা ছাড়ের ব্যবস্থাও রয়েছে।
ইলিগ্যালি কেন ছাত্রীদের সিট দেওয়া হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত দল ভারী করার উদ্দেশ্যে এভাবে ছাত্রীদের উঠানো হয়। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক ক্ষমতায় উঠলে ওই ছাত্রী মিছিল মিটিংয়ে থাকতে বাধ্য। পুরো পদ্ধতিটি নিয়ন্ত্রণ করেন উর্মী ঢালী নামে কলেজের প্রাক্তণ ছাত্রী। তিনি কলেজে ছাত্রলীগ নেত্রী ছিলেন বলেও জানালেন লাকী। তবে ইলিগ্যালভাবে সিট নেওয়া ও টাকা নেওয়ার বিষয়টি বেমালুম অস্বীকার করলেন উর্মী ঢালী।
বললেন, আমি কখনোই এভাবে কারো কাছ থেকে একটি টাকাও নেয়নি। তবে আত্মীয় স্বজন তো থাকেই। রাজনীতি করার সুবাদে ছোট বোনদের জন্য হয়ত অনেক সময় থাকতে হয়। তবে লেনদেন আমি করিনি।
‘আসলে মানুষ ইডেন কলেজ নিয়ে উল্টা-পাল্টা লেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। মূলত এ কাজগুলো করে থাকে বিএনপি, জামায়াত নেত্রীরা,’ যোগ করেন উর্মী।
খোদেজা খাতুন, জেবুন্নেসা, রাজিয়া বেগম, হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.), হাসনা বেগম, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলতুন্নেসা হলসহ মোট ছয়টি হল রয়েছে ইডেন কলেজে। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, প্রতিটি হলে রয়েছে ছাত্রী নেত্রীদের আধিপত্য।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা পাঁচ কলেজের একটি এই ইডেন কলেজ। তুলনামূলক কম অভিযোগ পাওয়া যায় কলেজটির বিরুদ্ধে। তবে এ সুনামের সুবিধা কাজে লাগাচ্ছেন কলেজের ছাত্রী নেত্রীরা, এমনটাই মত সাধারণ ছাত্রীদের।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ শাসসুন নাহার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কলেজে ৩৫ হাজার ছাত্রীর জন্য সাত হাজার সিট রয়েছে। অন্যান্য কলেজের তুলনায় যা খুব ভালোভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তবে টাকা নিয়ে এভাবে ছাত্রীদের সিট দেওয়ার বিষয়টি জানা নেই। এছাড়া এ বিষয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগও নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
এএটি/আইএ