ঢাকা: সরকারের পক্ষ থেকে দেশে সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ বলা হলেও নতুন একটি জরিপে তা ২১ শতাংশ কমে ৫০ শতাংশ হয়েছে। পঠন, লিখন, গাণিতিক দক্ষতা প্রয়োগের সমন্বয়ে প্রশ্নের ওপর জরিপ করে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠনগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযান তাদের ‘এডুকেশন ওয়াচ-২০১৬’ এর গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের উপস্থিতিতে সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি মিলনায়তনে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
‘সাক্ষরতা, দক্ষতা ও জীবনব্যাপী শিক্ষা: টেকসই উন্নয়নের চতুর্থ লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে সাক্ষরতার হার দেখানো হয়েছে ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ।
চলতি বছরের আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের আগের দিন গত ৭ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গণশিক্ষা মন্ত্রী ফিজার জানিয়েছিলেন, দেশে সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ।
এডুকেশন ওয়াচের প্রতিবেদনে সাক্ষরতার হার কমে গেলেও মন্ত্রী সেটাকে ভুল বলেননি। তিনি বলেন, ওনাদেরটাকেও ভুল বলবো না, ওনারা তো গবেষণা করেছেন। ওটাকে বর্জন করবো না, অবশ্যই ভালো দিকগুলো গ্রহণ করব।
২০১৮ সালের মধ্যে নিরক্ষরদের তালিকা নিয়ে এসে তাদের শিক্ষিত করে তোলা হবে বলে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী।
গণসাক্ষরতা অভিযানের চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের প্রতিনিধি মারিও রনচি, ইউনেস্কো বাংলাদেশের এডুকেশন প্রোগ্রাম বিশেষজ্ঞ সুন লি, গণসাক্ষরতা অভিযানের সহ-সভাপতি ড. মনজুর আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, সাক্ষরতার দিকে নজরটা খুবই কম।
গবেষণায় দেখা যায়, নিরক্ষরতার হার ৫০. ৯ শতাংশ, প্রাক-সাক্ষরতার হার ১২.৮ শতাংশ, প্রারম্ভিক স্তরের সাক্ষরতার ৩৩ শতাংশ এবং উচ্চতর স্তরের সাক্ষরতার হার ৩৩. ৯ শতাংশ।
সারা দেশে ১১ ও তদূর্ধ্ব বছর বয়সী সকল জনগোষ্ঠী এই গবেষণার অন্তর্গতরূপে বিবেচিত হয়েছে। ২৭০টি গ্রাম/মহল্লা থেকে তিন হাজার ৫১০টি খানায় জরিপকাজ পরিচালনা করা হয়। এসব খানার ১১ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ১১ হাজার ২৮০ জনের ওপর গবেষণার লক্ষ্য অনুযায়ী জরিপ পরিচালনা করা হয়।
গবেষক দল ২০১৬ সালের ১২ মে থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত তথ্যসংগ্রহ করে বলে জানান এডুকেশন ওয়াচের প্রধান গবেষক সমীর রঞ্জন নাথ।
গবেষণায় দেখানো হয়, ধীরগতিতে ০.৭ শতাংশ হারে সাক্ষরতার বিভিন্ন স্তরে অগ্রগতি অর্জন করেছে। এই হারে চলতে থাকলে সাক্ষরতা দক্ষতার প্রাথমিক স্তরে পৌঁছাতেই ৪৪ বছর এবং অগ্রসর পর্যায়ে উন্নীত হতে লাগবে ৭৮ বছর।
সাক্ষরতার লক্ষ্য অর্জনে ‘সবার জন্য শিক্ষা’আন্দোলন ইতিবাচক প্রভাব রেখেছে। তবে বিদ্যালয়ে গমনোপযোগীদের সাক্ষরতা দক্ষতার প্রাথমিক স্তরে পৌঁছাতে আরও ১৫ বছর এবং অগ্রসর স্তরে পৌঁছাতে আরও ৩৬ বছর লাগবে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষাই সাক্ষরতা অর্জনের প্রধান উৎস হিসাবে দেখানো হলেও বিদ্যালয়ের শিক্ষার নিম্নমান উঠে এসেছে।
আইসিটি ও ডিজিটাল পঠন সামগ্রীর প্রাপ্যতা এবং তার ব্যবহার নতুন আশার সঞ্চার করছে। ৭৮ ভাগেরও বেশি মোবাইল ব্যবহার করে এবং ৬২ শতাংশ টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখে। ইন্টারনেটের ব্যবহার মূলত দেখা গেছে ফেসবুক ব্যবহারসহ অন্যান্য বিনোদনের কাজে।
সুপারিশ জাতীয়ভাবে নির্ধারিত সাক্ষরতার সংজ্ঞা পুনঃনির্ধারণ করে একটি জাতীয় মূল্যায়ন ভিত্তিক সাক্ষরতা পারিমাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়।
বিদ্যালয়ভিত্তিক শিক্ষার মান উন্নত করা; মাধ্যমিকস্তরে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের হার বাড়ানো, চাহিদা অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদী কোর্সের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে বলা হয়।
মোবাইল, টেলিভিশন, মুদ্রণ মাধ্যম, বিশেষ করে ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবনব্যাপী শিক্ষার বিস্তার ঘটানোর সকল সম্ভাবনাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
এমআইএইচ/এমজেএফ