ঢাকা: নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, গত ১৬ বছর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচনকে খারাপ করার ভূমিকায় ছিল। এবার হয়তো শক্তিশালী অবস্থায় থাকবে না।
সোমবার (০৬ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সংলাপের ওঠে আসা নানা মতামতের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় ইসির তত্ববধায়নে সব প্রার্থীকে এক মঞ্চে এনে তাদের নির্বাচনি এজেন্ডা তুলে ধরার ব্যবস্থা করবো। একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে কিছু কিছু বাহিনী গেছে। পাশপাশি এর বাইরেও গত ১৬ বছরে সংস্কৃতির যে পরিবর্তন হয়ে তাতো আমরা রাতারাতি সংশোধন করতে পারি না। গত ১৬ বছরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হয়তোবা ছিল নির্বাচনে, কিন্তু তারা কোনো ভূমিকায় ছিল। তারা তো নির্বাচনকে খারাপ করার কাজটা করেছে। অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে থেকে। এবারও হয়তো অতটা শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে না। কিন্তু নির্বাচন ভালো করার জন্য কাজ করবে। আমাদের যা যা সক্ষমতা আছে জাতীয়ভাবে, এমনকি আমরা স্কাউটকে কাজে লাগাতে পারি।
তিনি বলেন, পর্যবেক্ষক নিবন্ধন পেতে তিনশর বেশি আবেদন করেছে। আগের সময়ে যারা ছিলো সবাইকে বাদ দিয়েছি। এখন মতাদর্শ থাকতেই পারে। এমন কাউকে বাছাইয়ে বাদ দিইনি। সেটা তো থাকতেই পারে। আমরা গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। কোনো পর্যবেক্ষণ পেলে আমরা তা দেখবো। তিনশ আবেদন থেকে বাছাই করে ৭৩টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। এটা আরো কমবে। আবার অনেক কমিয়ে ফেললে পর্যবেক্ষণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
সীমানা নিয়ে তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ছিলে ১০ শতাংশ ভোটারের ব্যবধানে সীমানা করা। কিন্তু বাস্তবতায় আমরা সেটা করতে পারিনি। কারণ দুইশো’র মতো আসনে কাটাছেঁড়া করতে হতো। যেখানে সম্ভব সেখানে হাত দিয়েছি। আমরা ইউনিয়ন, পৌরসভা ভাঙিনি। সিটি ভেঙেছি। উপজেলা তো ভেঙেছেই।
ভোটার তালিকার বিষয়ে তিনি বলেন, বাড়িবাড়ি যাওয়াটা বাধ্যতামূলক নয়। ১৮ বছর হলে আমি অনলাইনে ভোটার হতে পারি। তারপর শুধু অফিসে গিয়ে আঙ্গুলের ছাপ দিতে হবে। এখন দুটো সমস্যা থাকতে পারে। একটা হচ্ছে এখনো বাদ পড়া ভোটার থাকতে পারে। আরেকটা হচ্ছে মৃত ভোটার থাকতে পারে। এক্ষেত্র এটা নিয়ে আমাদের আগামী কাজ করতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার নিয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, এটা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। আমি দুই ডজনের অধিক নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি। অর্ধেকের বেশি একই কথা বলেছে যে এআই-এর কারণে বর্তমানে নির্বাচন অবাধ হতে পারে, তবে সুষ্ঠু নয়। তারা বলছেন ৫০ শতাংশের অধিক অপপ্রচার ট্রেসই করা যায় না। বিটিআরসির চেয়ারম্যানের সঙ্গেও কথা বলেছি, মেটা তাদের পলিসি অনুযায়ী আমাদের চোখে যেটা মনে হচ্ছে সঠিক নয়, তারা এটাকে ডিসকোয়ালিফাই করছে না।
তিনি বলেন, ইউরোপিয় ইউনিয়ন চার মিলিয়ন ইউরোর একাট ফান্ড করেছে। ২৭৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি আমাদের সরকার কর্তৃক বাজেট আছে। যার তুলনায় ওদের ফান্ড কিছুই না। টেকনোলজিক্যাল প্লাটফরম ডেপলয় করার সক্ষমতা তাদের নেই। ইউএনডিপির সে সক্ষমতা আছে। আমরা সেটা নিচ্ছি। এছাড়া পুলিশ, বিটিএমসি, বিটিআরসি, গোয়েন্দা সংস্থা সবাইকে এক করে আমরা একটা কাঠামো দাঁড় করাচ্ছি। সেন্ট্রালি এবং গ্রাউন্ড লেবেলে। আশা করি এতে যেটা হবে তথ্যের অবাধ প্রবাহ হবে।
এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের কৌশল হলো আমরা রেস্টিক্টিভ কোনো মেথডে যাবো না। যে শাট ডাউন করে দেওয়া, ব্যাড উইথ কমিয়ে দেওয়া এগুলো আমরা করতে যাবো না। এটা এক দুই দিন সমাধান দিতে পারে। তিন চার মাসে ধরে এ কর্মকাণ্ড চলবে তখন কীভাবে করবো। প্রথামিকভাবে আমরা যাদের ট্রেস করতে পারবো, তাদের আমরা আইনি ব্যবস্থা নেবো। আর বাকিটা আমাদের সত্য তথ্যের প্রবাহ বাড়িয়ে মোকাবিলা করতে হবে। ভালো তথ্য দিয়ে খারাপ তথ্যকে মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের ইনসিটিউশনাল ক্যাপাসিটি, অর্গানাইজেশনাল ক্যাপাসিটি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করে, নতুন প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্ত করে যেগুলোকে স্পটিং এবং কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরি করার, কোলাবোরেটিং অ্যাপ্রোচের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাচ্ছি।
প্রবাসীদের ভোট নিয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটাররা যদি তাদের ঠিকানা লিখতে ভুল করেন, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে এক জায়গায় আট-দশজন থাকেন, যেই ঘরের ঠিকানা নেই। বিকল্প হিসেবে পিক আপ পয়েন্ট থেকে নিতে পারেন কিনা, সেটা ভাবছি। ভোটারকে ঘোষণাপত্র দিতে হবে যে আমার ভোট আমিই দিয়েছি, কারো প্ররোচনায় দিইনি। প্রবাসীদের ব্যালটে না ভোটসহ ১১৬টা প্রতীক থাকবে। খামে ব্যালট পাঠানো হবে, তিনি ভোট দিয়ে আবার পাঠিয়ে দেবেন। সেটা রিটার্নিং অফিসারের কাছে চলে যাবে। ভোটের দিন এ ব্যালট গণনা হবে।
ইইউডি/জেএইচ