বাহারি প্রজাতির গাছপালা আর জীববৈচিত্র্যের সমারোহ যেন মন কাড়ে ভ্রমণ পিপাসুদের। দখিনা জনপদের কাছে এটি এখন পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে- চর দিঘল, চর জমির, চর সুফী, চর আলীম, চর পাতিলা ও কুকরী-মুকরী নিয়ে কুকরী-মুকরী রেঞ্জ। ৬ হাজার ৪৩০ হেক্টর এলাকায় রয়েছে কেওড়া, গোলপাতা, সুন্দরী, কাঁকড়া, গেওয়া, বাইন, রেইন ট্রি, আকাশমনি ও মেহগনির সমারোহ। যেখানে জীবিত গাছের সংখ্যাই প্রায় সাড়ে ৩ কোটি।
পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে এখানে একের পর এক স্থাপনা গড়ে উঠছে। ইতোমধ্যে পাখি পর্যবেক্ষন কেন্দ্র, ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন হয়েছে। এখন চলছে একটি টুরিস্ট হোটেল নির্মাণ কাজ।
দর্শনীয় স্থান হিসেবে রয়েছে নারিকেল বাগান, বালুর ধুম, লাল কাঁকড়া, সাগর পাড়ে প্রকৃতিকভাবে গড়ে উঠা সি-বিচ ও সাগরের গর্জন। নারিকেল বাগানের কাছে বন বিভাগ পর্যটকদের জন্য চেয়ার বসিয়েছে। সেখানে বসেই সাগরের উত্তাল ঢেউ ও অতিথি পাখি দেখা যাবে।
এছাড়াও কুকরীর বিভিন্ন বাঁক থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা যাবে।
সাগরের কোল ঘেঁষা এ দ্বীপে ১৯৭৩ সালে বনায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে সবুজ বেষ্টনী। তাই ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেয়ে আসছে কুকরী-মুকরীর ১৮ হাজার মানুষ। সিডর ও আইলায়তেও বড় কোনো ক্ষতি হয়নি এখানে।
কুকরী-মুকরীর বাসিন্দারা জানান, দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিশেষ করে শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন মানুষ। এখানে পিকনিকসহ নানা বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে যোগাযোগ, থাকা ও খাওয়ার সু-ব্যবস্থা না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় মানুষ ভ্রমণ পিপাসুদের।
কুকরীর বাসিন্দা সাগর ও রমিজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, কুকরী-মুকরী অনেকটা সুন্দরবনের মতই দেখতে, বাহারি প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য নজর কাড়ে মানুষের।
ঘুরতে আসা মাকসুদ, অলক, নাজিম ও রাশেদ বলেন, কুকরীর সৌন্দর্যের কথা আগে শুনেছি, তবে আসা হয়নি, এখন এখানে এসেই মুগ্ধ হলাম। কি নেই এখানে, সব কিছুই যেন সুন্দরবনের মতই।
কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল হাসেন মহাজন বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন এরিয়ার মধ্যে কুকরী-মুকরী একটি নান্দনিক সৌন্দর্যের স্পট। এখানে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে হাজার হাজার মানুষ ঘুরতে আসেন। কিন্তু তারা পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না। তাই এখানে হোটেল, মোটেল, রিসোর্টসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ জরুরি হয়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে বন বিভাগ কুকরী-মুকরী রেঞ্জের বিট অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, কুকরী-মুকরী সুন্দরবনের মতই। এখানে হরিণ, বানর, ভাল্লুকসহ নানা প্রজাতির প্রাণী ও নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি রয়েছে। শুধু সুপেয় পানি, খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থার স্বল্পতা রয়েছে, বন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে একটি ট্যুরিস্ট হোটেল নির্মাণ করেছে। এখন শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলেই দেশের মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে কুকরী-মুকরী।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৭
জেডএম/