ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

ফিচার

আপন ভজন কথা, না কহিবে যথা-তথা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৭
আপন ভজন কথা, না কহিবে যথা-তথা লালন শাহের তিরোধান দিবসের শেষে কেউবা মেতেছেন খোশগল্পে, কেউ আবার তত্ত্বজ্ঞানে। ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর

ছেউড়িয়া (কুষ্টিয়া) থেকে: কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় সকালের সূর্য তখনো তার সমস্ত তেজদীপ্তি ছড়িয়ে দেয়নি। সাঁইজীর তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান শেষে সবাই চলে গেলেও তখনো রয়ে গেছে অনেকেই। কারও তখন সময় কাটছে ঘুমে। কেউবা মেতেছেন খোশগল্পে, কেউ আবার তত্ত্বজ্ঞানে। অনেকেই সুর তুলেছেন একতারায়। তার মধ্য থেকেই সবার নজর কাড়ে ফকির লালন শাহের অমিয় বাউল গান ‘আপন ভজন কথা, না কহিবে যথা-তথা, আপনাতে আপনি সাবধান’!

‘বাউল সম্রাট লালন শাহ তার প্রতিটি গানের মধ্য দিয়েই কিছু দর্শন জ্ঞান দিয়ে গেছেন মানুষকে। কেউ সেগুলো বুঝতে পারে, কেউ পারে না।

আর যে বুঝতে চায়, তার জন্য আছে দীক্ষা গ্রহণের সুযোগ। তবে দীক্ষা মানেই যে বাউল হয়ে যেতে হবে তা নয়, কেউ চাইলে এটাকে শুধু জ্ঞানের একটি আগ্রহের জায়গাও বলতে পারেন, যেখানে কেউ জোর করবে না। বরং সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দেবে লালন দর্শনের জটিল দিকগুলো। ’ বলছিলেন বাউল ফকির টুনটুন।

আলোচ্য গানের মর্মকথায় তিনি বলেন, ‘বাউলদের মধ্যে একটা কথা প্রচলিত আছে। আসলে সাধনের যে কথা, সে বড় গুপ্ত কথা, গোপন কথা। গোপনে যার সাধন করার ইচ্ছা জাগবে, এ শুধু তার কাছেই বলা যায়। ইশারা-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেওয়া যায়। ’

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ধর্মটা কী? বাউলের ‘বাও’ মানে বাতাস, ‘উল’ মানে সন্ধান। বাউল বাতাসের সন্ধান করে। নাসিকাতে চলে ফেরে। বাউল, ফকির একই স্তরেরই জিনিস। তো, আপন ধর্মকথা না কহিও যথা-তথা, তার মানে কী? আমার গুরু আমাকে যে পথ দেখিয়েছেন, সেই পথে আমি আছি কিনা জানার পর তিনি আমার যোগ্যতা বুঝে আমাকে দীক্ষা দিবেন। ’নহিরুদ্দিন ফকির ও টুনটুন ফকির।  ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগরপাশ থেকে কথা বলে ওঠেন নহিরুদ্দিন ফকির। তিনি বলেন, ‘একটা মানুষের ধ্যান-ধারণা, তার বুঝ একটা নির্দিষ্ট সীমায় না আসা পর্যন্ত তার সামনে গুরুত্বপূর্ণ কথা রাখা হয় না। তাহলে সেটা তার ধারণায় নিতে চাইবে না। বরং সে একটা কু-মন্তব্য করবে অথবা অন্যরকম ভাববে। ’

‘সে কারণেই এগুলো যোগ্যতা ও জ্ঞানের গভীরতার ওপর নির্ভর করে উত্থাপন করা হয় ও করা প্রয়োজন। কারণ ক্লাস টু’র ছাত্রের কাছে নিশ্চয়ই ক্লাস ফোর-ফাইভের পাঠ্য উপস্থাপন হয় না। উপস্থাপন করলেও সে তা সঠিক ভাবে বুঝতে পারবে না। আগে বুঝতে হবে, পরিমাপ করতে হবে তার পরিধি কতটুকু, তারপর বাকি কথা। ’

এ পর্যায়ে ফের টুনটুন ফকির বলেন, ‘যোগ্য পাত্র ছাড়া কোনো কথাই কাউকে বলা যাবে না, বলা উচিত নয়। গুরুতে মনুষ্য জ্ঞান যার, অধপতন গতি হয় তার। গুরু কখনও মানুষ না। যে গুরুকে মানুষ ভাবে সে কখনও আল্লাহ পাবে না। কোনো কিছু পাবার আশায় প্রভুকে ডাকা বা অল্লাহকে ডাকা, ধর্ম করা। হ্যাঁ, এটা অবশ্যই পাবার আশায়, সব কিছু তো প্রভু তোমায় দিয়ে রেখেছে। তুমি ইহ-জগতে আসার পূর্বেই প্রভু তোমায় দিয়েছে। তুমি জানো না তাই। ’ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর‘জ্ঞান প্রসারের মধ্য দিয়েই তুমি দেখতে পাবে তোমার কী ক্ষমতা আছে। তুমি যে আমি আমি করছো, সেই আমির কী ক্ষমতা আছে। সব ক্ষমতার উৎসই হচ্ছে প্রভু। তুমি যদি গুরুকর্ম না শিখেই গুরুকর্ম আরেকজনের কাছে ব্যক্ত করো, এটাতে বরং তোমার আরও ক্ষতি হবে। ’

টুনটুন ফকিরের কথা সূত্র ধরে নহিরুদ্দিন ফকির বলেন, ‘গুরু তো আমার চিন্তা-চেতনা-জ্ঞান। নিজের জ্ঞান-চেতনাকে যে যতো বেশি জাগ্রত করবে, সে দুনিয়া সম্পর্কে, পৃথিবী সম্পর্কে, প্রকৃতি সম্পর্কে ততো বেশি অবগত হতে পারবে, এটাই ব্যাপার। গুরু বলতে গেলে একটা ব্রহ্মশক্তি, একটা পাওয়ার। তার কথা, তার ভজন কথা যে কাউকে নিশ্চয়ই বলা যায় না। বাউলদের সাধন ভজন পদ্ধতি তো আর যে কেউ সাধারণ লোকে বুঝবে না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৭
এইচএমএস/এইচএ/

** শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।