মৌলভীবাজার: বিশেষ কোনো খাবার সর্বপ্রথম তৈরি হয় কৌতূহলবশত। এটার সাথে ওটা মিশালে বা ওটার মধ্যে এ উপাদানটি ঢেলে দিলে কেমন হবে – এ জাতীয় কৌতূহল থেকে কোনো বিশেষ খাবারের উৎপত্তি।
বিখ্যাত খাবারই হোক বা অবিখ্যাত - সৃষ্টির সূচনালগ্নে সবগুলোই একটা ‘সন্দেহ’র অদৃশ্য মোড়কে আটকানো থাকে। মনে করা যাক- সদ্য তৈরি হলো একদম নতুন কোনো খাবার বা রেসিপি। অর্থাৎ ইতোপূর্বে এ খাবারটি আর কখনো তৈরি হয়নি। এ অবস্থায় যিনি খাবারটি তৈরি করলেন তারও কিছুটা সন্দেহ থেকেই যাবে – ‘আজ খাবারটি ভালো হবে তো’ এ জাতীয় বাক্যে।
আর যিনি ইতোপূর্বে কখনই এ খাবারটি দেখেননি বা নাম শুনেননি তিনিও চোখে-মনে সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে খাবারটির দিকে হাত বাড়াবেন। যদি সেই খাবারটি ‘সুস্বাদ’ হয় তবে তো কথাই নেই! পুনরায় আবারও চেখে দেখতে মন চাইবে তার। আর ‘অসুস্বাদু’ হলে ওই একবার মুখে নেওয়াটাই ভুল ছিল বলে প্রমাণিত হবে। তাই নতুন খাবার মানেই সন্দেহসুলভ দৃষ্টিভঙ্গির সম্প্রসারণ। এমন সব নতুন খাবারে চোখ আটকে যাওয়া বিস্ময়ের বড় কোনো ব্যাপার নয়। কেননা, এমন পরিস্থিতিতে মানুষ স্বভাবসুলভ সন্দেহ হঠাৎ মাথা চাড়া দেয়। তারপরও সব সন্দেহের অবসান ঘটিয়ে শেষাবধি চোখটা গিয়ে পড়লো- দুই নারী চা শ্রমিকের বানানো ‘জাম্বুরসখা’র দিকে।
বিষন্ন দুপুর তার ক্লান্তি ছড়িয়ে রেখেছে প্রকৃতির পরতে পরতে। এর মাঝে দুই নারী শ্রমিক পাকার রাস্তার কাজ করতে করতে তখন তাদের ‘লাঞ্চ বিরতি’। স্থানীয় সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাধীন কালীঘাট চা বাগানের পাকা রাস্তাটির সংস্কারের কাজ করছিলেন তারা।
‘এটা কী পাতিচখা?’ -এ প্রশ্নটি নিয়ে সম্প্রতি তাদের কাছে যেতে দুইজনেই বেশ বিব্রত!
নিজেকে গণমাধ্যমকর্মীর পরিচয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টায় সফল হলাম। কেননা, একে তো ভরদুপুর রোদে চা গাছের নিচে দুই তরুণীর খাবার তৈরির আয়োজন। তার ওপর একজন যুবকের আকস্মিক অনুমতিহীন অনুপ্রবেশ। কিংবা পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারী এবং যানবাহনের জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া যাত্রীর তীর্যক দৃষ্টি এসব মিলিয়ে অবস্থা জটিল! খাবার নয়, অবস্থানজনিত সন্দেহের তাপে প্রথমেই যেনো কিছুটা দগ্ধ হতে হলো।
পরিস্থিতি যতই বিব্রত হোক – এই বিশেষ খাবারটির আদ্যপান্ত জানতেই হবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর বিব্রতবোধের আবরণ থেকে বেরিয়ে একজন বললেন- ‘না, ওটা জাম্বুরাচখা। ’ বলেই পরস্পর পরস্পরের দিকে মৃদু হাসি ছড়ালেন।
জানা গেল, তাদের একজনের নাম সোনাক্ষী নায়েক এবং অপরজনের নাম সুবর্ণা নুনিয়া।
তারা জানালেন, চা পাতার কুঁড়ির সাথে চানাচুর, পেঁয়াজ, মরিচ প্রভৃতি মিশিয়ে তৈরি পাতিচখা। আর জাম্বুরার সাথে চানাচুর মিশিয়ে তৈরি হয় জাম্বুরাচখা। এখন আমরা জাম্বুরা খোসা থেকে বের করছি। একটু পরে চানাচুর মেশাবো। তার সাথে একটু লেবু, মরিচ, পেঁয়াজ প্রভৃতি দিয়ে তৈরি করবো এই খাবারটি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২২
বিবিবি/এএটি