ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

গাজার জলসীমায় ফ্লোটিলার একটি জাহাজ, এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৪৪, অক্টোবর ২, ২০২৫
গাজার জলসীমায় ফ্লোটিলার একটি জাহাজ, এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’নৌবহরের একটি নৌযান

গাজা অভিমুখে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নৌবহরে থাকা ৪০টির নৌযানের মধ্যে অন্তত ২৪টি নৌযান এখনও ইসরায়েলি বাহিনীর হস্তক্ষেপের বাইরে আছে। এর মধ্যে একটি নৌযান গাজার জলসীমায় প্রবেশ করেছে।

বৃহস্পতিবার ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার জানিয়েছে, চলমান নৌযানের মধ্যে মিকেনো নামের একটি জাহাজ বর্তমানে গাজার আঞ্চলিক জলসীমায় অবস্থান করছে। তবে নৌযানটি ইতোমধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা আটক হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাকি ২৩টি নৌযান গাজা উপকূলের কাছাকাছি প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।

বুধবার রাতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করা এবং বিশ্বব্যাপী মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হওয়া নৌবহরের বেশ কয়েকটি জাহাজে অভিযান চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ নেয়। ৪০টিরও বেশি বেসামরিক নৌযান এবং প্রায় ৫০০ কর্মী এই নৌবহরে অংশ নেন। এর মধ্যে অন্তত ১৩টি জাহাজকে ইসরায়েলি বাহিনী সাগরে আটক করে এবং যাত্রীদের ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়।

ইসরায়েল আগে থেকেই জানিয়েছিল, গাজামুখী এই বহরকে আটকাতে তারা যেকোনো পদক্ষেপ নেবে। তাদের দাবি, এই স্বেচ্ছাসেবীরা ‘আইনসম্মত নৌ অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করছে’, যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বেআইনি।

২০০৭ সালে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ইসরায়েল বিভিন্ন মাত্রায় উপত্যকায় অবরোধ চালিয়ে আসছে। তখন থেকেই গাজার অধিবাসীরা কার্যত ফাঁদে আটকা, যেখানে খাদ্য, পণ্য ও সহায়তার প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।

বুধবার যা ঘটেছিল

ফ্লোটিলা সংগঠকদের মতে, ইসরায়েলি নৌবাহিনী বুধবার রাতে গাজার উপকূল থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে বহরের জাহাজগুলোতে উঠে পড়ে। এর আগে তারা যোগাযোগ ব্যবস্থা কেটে দেয় এবং সিগন্যাল জ্যাম করে।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক জানান, আটক হওয়া জাহাজগুলোতে ৩৭টি দেশের ২০১ জন কর্মী ছিলেন। এর মধ্যে কেবল স্পেনেরই ৩০ জন, ইতালির ২২ জন, তুরস্কের ২১ জন এবং মালয়েশিয়ার ১২ জন ছিলেন।

তিনি বলেন, এখনও প্রায় ৩০টি জাহাজ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বাধা এড়িয়ে গাজার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

সংগঠকদের তথ্যমতে, এই জাহাজগুলো গাজার উপকূল থেকে মাত্র ৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।

বুধবার রাতে ইতালি, আর্জেন্টিনা ও তুরস্কসহ বিভিন্ন শহরে নৌবহরের কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে।

দিনের শুরুতে কর্মীরা জানান, টহলবিহীন নৌযান ও ড্রোন বহরকে অনুসরণ করছিল, যা উত্তেজনা বাড়ায়।

ফ্লোটিলা কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে (জিএমটি ১৭:৩০) ‘আলমা’, ‘সিরিয়াস’, ‘আদারা’সহ একাধিক নৌযানকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি বাহিনী বেআইনিভাবে আটক করে।

তাদের অভিযোগ, অভিযানের আগে ইসরায়েলি বাহিনী সচেতনভাবে যোগাযোগব্যবস্থা নষ্ট করে যাতে বিপদসংকেত পাঠানো বা লাইভ সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে নৌবাহিনীর এক নারী কর্মকর্তা ফোনে ফ্লোটিলার সদস্যদের সতর্ক করেন। তিনি জানান, নৌবহর একটি ‘নিষিদ্ধ অবরুদ্ধ এলাকায়’ ঢুকছে এবং যে কোনো সহায়তা গাজার জন্য কেবল ‘স্থাপিত চ্যানেলের মাধ্যমে’ পাঠানো যেতে পারে।

ইসরায়েলের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন ঘোষণা করেন, আটককৃত কর্মীদের ইয়োম কিপ্পুর শেষ হওয়ার পর ইসরায়েল থেকে বিতাড়ন করা হবে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ জাহাজের ডেকে বসে আছেন, চারপাশে ইসরায়েলি সেনারা।

সুমুদ ফ্লোটিলা সম্পর্কে যা জানা গেছে

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আগস্টের শেষ দিকে স্পেন ও ইতালি থেকে যাত্রা শুরু করে। পথে গ্রিস ও তিউনিসিয়ায় থামে। শুরুতে ৫০টির বেশি নৌযান এবং ৪৪টি দেশের শত শত কর্মী এতে যোগ দেন। কেবল আমেরিকারই ২৪ জন অংশ নেন, যাদের মধ্যে কয়েকজন প্রাক্তন সেনাও আছেন।

যাত্রাপথে ড্রোন হামলা ও অচিহ্নিত নৌযানের আক্রমণের অভিযোগ ওঠে। এর ফলে কিছু জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফিরে যায়। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে পৌঁছার সময় বহরে ৪৪টি জাহাজ বাকি ছিল।

স্পেন ও ইতালি নৌবাহিনী পর্যন্ত এগুলোর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে যুক্ত হয়। বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো সংযমের আহ্বান জানায়।

অন্যান্য দেশের প্রতিক্রিয়া

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, তিনি ইসরায়েলের এই ‘ভয়-ভীতি ও দমননীতি’র তীব্র নিন্দা করছেন।

আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সায়মন হ্যারিস একে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেন এবং আটক নাগরিকদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো তার দেশের দুই নাগরিক আটক হওয়ার পর ইসরায়েলি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছেন এবং বাণিজ্যচুক্তি বাতিল ঘোষণা করেছেন।

ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল বলেছেন, এটি ‘গণহত্যাকে খাদ্যাভাবে সম্পূর্ণ করার উদ্দেশ্য’।

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে সরাসরি ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

সূত্র: আল জাজিরা

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।