ঢাকা: গ্রাম পুড়ছিল, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আগুনে। পুড়ছিল গ্রামের বিছানা-ঘর-আহার্য-বসতি।
জ্বলন্ত গ্রামে থেকেও মানবতার প্রতীক হয়ে ওঠা সেই একজন হলেন বিহারের পঞ্চাশোর্ধ্ব শাইল দেবী। গত রোববার (১৮ জানুয়ারি) তিনি রচনা করেছেন মানবতার এই অনবদ্য গল্প।
পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সেদিন পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে প্রায় পাঁচ হাজার লোক শাইল দেবীর আজিজপুর গ্রামে এসে ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনদের, বিশেষত পুরুষদের খুঁজে খুঁজে ব্যাপক পিটুনি দিতে থাকে। তাদের নির্মম পিটুনিতে প্রাণ হারায় চারজন। পুড়ে ছাই হয়ে যায় ২৫টি ঘর। এই তাণ্ডবে মৃত্যু ভয়ে যখন আক্রান্তরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছিল, শাইল দেবী তখন ‘ধর্ম-বর্ণ’ ভুলে ‘মনুষ্যপ্রেম’কে শিরোধার্য মেনে ১০ জন ভিন্ন ধর্মের লোককে তার ঘরে আশ্রয় দেন।
শাইল দেবী বলেন, ভিন্ন ধর্মের লোক হওয়া সত্ত্বেও আমি এ দশজনকে আশ্রয় দিয়েছি, কারণ আশ্রয় না পেয়ে সেদিন তাদের মরতে হতো।
তিনি বলেন, হামলাকারীদের আমি মিথ্যাও বলেছি। বলেছি, আমি কোনো ভিন্ন ধর্মের লোককে আশ্রয় দিইনি। তারপরও আক্রমণকারীরা আমার ঘরে প্রবেশ করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি তাদের ফিরিয়ে দিয়েছি।
শাইল দেবীর ঘরে আশ্রয় নিয়ে প্রাণে বেঁচে যাওয়া আশ মোহাম্মদ নামে ষাটোর্ধ্ব এক প্রৌঢ় বলেন, সৃষ্টিকর্তা যেন আমাদের জন্য তাকে দূত হিসেবে পাঠিয়েছেন।
অবশ্য, সহিংসতা থেমে যাওয়ার পর শাইল দেবীর প্রতিবেশীরা তাকে শাসিয়েছিলেন বলে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন তিনিও।
মানবতার এই নতুন প্রতীক বলেন, সহিংসতার পর হামলাকারীরা আমাকে শাস্তি দিতে পারে ভেবে আমিও ভয়ে পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই পরে আমার দুই কন্যা ও এক পুত্রকে মোহাম্মদের বাড়িতে রেখেছিলাম। পরে প্রশাসনিক আশ্বাসে আমি বাড়ি ফিরে আসি।
শাইল দেবীর এই সাহসিকতা ও বীরত্বগাঁথা এখন সকল ধর্মের সকল বর্ণের মানুষের মুখে মুখে। খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জিতেন রাম মানিজীও শাইল দেবীর বন্দনায় মেতেছেন। তার সঙ্গে দেখা করে দিয়েছেন অর্ধলাখ রুপির সম্মাননাও।
বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৫