পবিত্র রমজান মাসে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে সারামাস ইফতারের জন্য যত খেজুর লাগে, সব এই বাগান থেকেই বিনামূল্যে দেওয়া হয়। সত্যিই তিনি যেমন অর্থবৈভব ও বিত্তের অধিকারী তেমন বড় দানবীর ও মহৎ হৃদয়ের অধিকারী।
তার জীবন সম্পর্কে তিনি একটি গল্প বলেন, ‘আমি নিতান্ত অসহায় গরিব ছিলাম। এতোটাই গরিব ছিলাম যে- একবার মাদ্রাসা থেকে একটি শিক্ষা সফরের ব্যবস্থা করা হল। ভ্রমণের জন্য জনপ্রতি মাত্র এক রিয়াল করে ধার্য্য করা হয়েছিল। আমার কাছে অর্ধেক রিয়ালও ছিল না। বাসায় গিয়ে খুব কান্নাকাটি করলাম। কিন্তু পরিবারের কেউ এক রিয়ালের ব্যবস্থাও করতে পারলেন না।
শিক্ষা সফরের একদিন আগে ক্লাসে প্রশ্নোত্তর পর্বে সঠিক উত্তর দেওয়ায় জনৈক দয়ালু ফিলিস্তিনি শিক্ষক আমাকে একটি রিয়াল দিলেন। রিয়ালটি পেয়ে আমি সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেলাম, শিক্ষা সফরে নাম লেখানোর জন্য। পরমানন্দে শিক্ষা সফরে শরিক হয়ে গেলাম। আমার দুঃখ আনন্দে পরিণত হয়ে গেল। আনন্দের পুলক কয়েকমাস পর্যন্ত আমার মনে লেগে ছিল।
এর অনেকদিন পর যখন আমি পরিণত বয়সে উপনীত হলাম। তখন জীবনে অনেক সুখ-সমৃদ্ধি এলো। আল্লাহ তাআলা আমাকে অঢেল ধন-সম্পদ দান করলেন। তখন আচমকা একদিন সেই দয়ালু শিক্ষকের কথা মনে পড়ল।
ভাবলাম, আমার প্রিয় শিক্ষক আমাকে রিয়ালটা দান করেছিলেন না ঋণ দিয়েছিলেন? কারণ, সে সময় রিয়াল পাওয়ার আনন্দের আতিশয্যে কিছুই জিজ্ঞেস করার সুযোগ হয়নি৷
কিন্তু এখন দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। দ্রুত সেই মাদ্রাসায় গেলাম। ফিলিস্তিনি উস্তাদের কথা জিজ্ঞেস করলাম। কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় অনেক কষ্টে তার ঠিকানা খুঁজে বের করলাম। শেষমেষ পৌঁছে গেলাম তার ঘরে।
দেখলাম, উস্তাদজির অবস্থা সংকটাপন্ন। তিনি বড় অসহায়। চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে বহুদিন আগে। এখন কপর্দকহীন তিনি। আমি আমার পরিচয় দিয়ে বললাম, উস্তাদজি! আমি আপনার কাছে অনেক বড় ঋণী।
অবাক বিস্ময়ে বললেন, ‘সত্যি! আমি কি সত্যিই কারো কাছে অর্থ পাই? আমার তো মনে পড়ে না। ’ বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না তিনি।
বললাম, আপনার কি মনে পড়ে আজ থেকে অনেক বছর আগে এক ছাত্রকে আপনি একটি রিয়াল দিয়েছিলেন?
মনে করতে কষ্ট হচ্ছিল তার। একথা ওকথার পর মনে করতে পারলেন। তখন স্মিত মুখে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা! তুমি কি আমাকে তালাশ করেছ ওই এক রিয়াল পরিশোধ করার জন্য? আমি বললাম, জ্বী উস্তাদজি!
এরপর আমি আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে একটি নতুন গাড়িতে উঠালাম। গাড়িতে করে নিয়ে এলাম একটি সুন্দর বাগানবাড়ির ভেতর। তারপর বললাম, উস্তাদজি! এই হলো আপনার ঋণ পরিশোধ। এই বাড়ি ও গাড়ি আপনার। সঙ্গে থাকবে মাসিক সম্মানী ভাতা।
আমার কথা শুনে তিনি যারপরনাই আপ্লুত ও বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, মাত্র এক রিয়ালের বিনিময়ে এতো বড় বাড়ি! এতো দামি গাড়ি! কী করে সম্ভব!!
বললাম, ‘উস্তাদজি আপনি আমাকে যে রিয়াল দিয়েছিলেন তা এর থেকেও অনেক বেশি ছিল। সেই আনন্দ এখনো আমি আমার হৃদয়ে অনুভব করি৷’
এরপর শায়খ রাজিহি বলেন, মানুষের কষ্ট লাঘব করুন, মানুষকে খুশি করুন। আল্লাহ প্রতিদান দেবেন।
লেখক: কর্মকর্তা, বাংলাদেশ দূতাবাস, রিয়াদ, সৌদি আরব
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৮
এমএমইউ/আরএ