তিনি রাশিয়াভিত্তিক সংগঠন ইউনাইডেট মুসলিম উম্মাহ ফাউন্ডেশন ও ঢাকাস্থ ফিলিস্তিন দূতাবাসের আমন্ত্রণে এ সফরে আসছেন।
সফরে ইউনাইটেড মুসলিম উম্মাহ ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দেবেন তিনি।
আল-আকসা মসজিদের গ্রান্ড মুফতি (সর্বোচ্চ ইমাম) চলতি সফরে আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে এবং টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাবেন। একথা জানিয়েছেন ইউনাইটেড মুসলিম উম্মাহ ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ড. কাজী এরতেজা হাসান।
তিনি বলেন, গ্রান্ড মুফতি শেখ মুহাম্মদ আহমেদ হোসেনের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে নতুন ইতিহাস তৈরি হবে। তার মতো বুজুর্গ ব্যক্তির আগমনে বিশ্বের বুকে ইসলামপ্রিয় জাতি হিসেবে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হবে।
ড. কাজী এরতেজা হাসানের ভাষায়, আল-আকসা মসজিদের গ্রান্ড মুফতির আগমনে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের সেতুবন্ধ দৃঢ়তর হবে। মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।
বায়তুল মুকাদ্দাস হচ্ছে ইসলামের ১ম কিবলা এবং মক্কা ও মদিনার পরে তৃতীয় পবিত্র স্থান। হজরত রাসুলে করিম (সা.) মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদুন্নবি ও বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের উদ্দেশে সফরকে বিশেষভাবে সওয়াবের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা অন্য কোনো মসজিদ সম্পর্কে করেননি।
প্রসঙ্গত, হিজরতের পর বায়তুল মুকাদ্দাসই ছিল ইসলামের প্রথম কিবলা। বায়তুল মুকাদ্দাস দুনিয়ার অসংখ্য ভূখণ্ডে মতো কোনো সাধারণ ভূখণ্ড নয়। এ ‘পবিত্র গৃহ’ থেকেই খাতামুন্নাবিয়্যিন হযরত মুহাম্মদ (সা.) মিরাজে গমন করেছিলেন। বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদ এবং তার আশপাশের এলাকা নবিগণের পবিত্র স্মৃতিবিজড়িত। এ পবিত্র নাম শুধু একটি স্থানের সঙ্গে জড়িত নয়, বরং এ নাম সব মুসলমানের ঈমান ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এখানে রয়েছে অসংখ্য নবি-রাসুলের মাজার। ইসলামের এ নগরী ওহি ও নবীগণের দ্বীন প্রচারের কেন্দ্রভূমি। তাই এ পবিত্র নগরীর প্রতি ভালবাসা প্রতিটি মুমিনের হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত। হযরত ইব্রাহিম (আ.) কাবাঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর হযরত ইয়াকুব (আ.) জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন। এরপর হযরত সুলায়মান (আ.) এ পবিত্র মসজিদের পুনর্নির্মাণ করেন। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর খিলাফতকালে পুরো বায়তুল মুকাদ্দাস এলাকা মুসলমানদের অধিকারে আসে। ১০৯৬ সালে খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা সমগ্র সিরিয়া ও ফিলিস্তিন দখল করে নেওয়ার পর বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের ব্যাপক পরিবর্তন করে একে গির্জায় পরিণত করে। এরপর ১১৮৭ সালে মুসলিম বীর ও সিপাহসালার সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি জেরুজালেম শহর পুনরায় মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন। সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবির হাতে পরাজিত হওয়ার পর খ্রিস্টশক্তি পিছু হটলেও ইহুদিচক্র বায়তুল মুকাদ্দাসের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি অব্যাহত রাখে। তারা ফিলিস্তিন থেকে শুরু করে সুদূর মদিনা পর্যন্ত সারা মুসলিম এলাকা নিয়ে বৃহত্তর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করে। তারা তাদের খারাপ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য তুরস্কের তৎকালীন শাসক সুলতান আবদুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে জমি কেনার অনুমতি চায় এবং এর বিনিময়ে তারা তুরস্কের সব বিদেশি ঋণ পরিশোধ করে দেবে বলে অঙ্গীকার করে। সুলতান তাদের এ ষড়যন্ত্রমূলক প্রস্তাব মানেননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইহুদিরা গোপনে জমি কিনতে থাকে। ১৯১৭ সালে ইংরেজরা ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে ও ১৯২০ সালে সেখানে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং স্যার হার্বার্ট স্যামুয়েল নামক একজন ইহুদিকে সেখানে বৃটিশ কমিশনার নিযুক্ত করে। এ জমি কেনায় বহিরাগত ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনের দুয়ার খুলে যায়। সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্র ইহুদিবাদী উগ্র সংস্থাগুলোকে ফিলিস্তিনে বসবাস ও জমি কেনার জন্য কোটি কোটি ডলার দেয়। ফলে অতি অল্প দিনের মধ্যে বহু সংখ্যক ইহুদি ফিলিস্তিনে স্থায়ী বসতি স্থাপন করে। ইহুদিদের সংখ্যা বাড়তে থাকার কারণে আরব মুসলমানদের সঙ্গে দাঙ্গা-হাঙ্গামা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়। অবশেষে বৃটিশ সরকার ফিলিস্তিনকে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এর ফলে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে জায়নবাদী (ইহুদিবাদী) অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভের পর ইহুদিরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে। তাদের অত্যাচারে জর্জরিত আরবরা জীবন বাঁচাতে দলে দলে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। এসব সত্ত্বেও তখনও বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের দখলে ছিল। কিন্তু আরবদের দুর্বলতার মুখে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে তা হাতছাড়া হয়। ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগণ দীর্ঘদিন ধরে তাদের আবাসভূমি ও আল-কুদস (বায়তুল মুকাদ্দাস) উদ্ধারের জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সংগ্রামে দিশেহারা হয়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মধ্যে ভাঙন ধরানোর জন্য ফিলিস্তিনের একটি ক্ষুদ্র অংশে সীমিত স্বায়ত্তশাসনের কথা বলে কিছু সংখ্যক নেতাকে বিভ্রান্ত করেছে। তথাকথিত শান্তি আলোচনার সুযোগে তারা একে একে ফিলিস্তিনের প্রকৃত সংগ্রামী নেতাদের হত্যা করে চলছে এবং ফিলিস্তিনের নতুন নতুন এলাকা দখল করে ইহুদি-বসতি সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে। এমনকি ফিলিস্তিনে মানবিক ত্রাণসহায়তা পৌঁছাতে পর্যন্ত তারা বাধা দিয়েছে এবং দিয়ে চলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৮
এসএইচ/জেএম