ঢাকা, মঙ্গলবার, ৮ বৈশাখ ১৪৩২, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সবার আইন না মানার প্রবণতা আছে: রাজউক চেয়ারম্যান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৫
সবার আইন না মানার প্রবণতা আছে: রাজউক চেয়ারম্যান ‘সমস্যার নগরী ঢাকা: সমাধান কোন পথে?’ শীর্ষক নগর সংলাপে বক্তব্য দেন রাজউক চেয়ারম্যান মো. রিয়াজুল ইসলাম | ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: ‘এ টু জেড’ সবার আইন না মানার প্রবণতা আছে বলে মন্তব্য করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেছেন, আমাদের জনঘনত্ব একটা সমস্যা। আর আমাদের সবারই আইন না মানার একটা প্রবণতা রয়েছে।

অনেকে বাড়ির দেয়াল দেয় রাস্তা ঘেঁষে। কিন্তু বাড়ির কলাম কিন্তু ঠিকই রাস্তা থেকে পাঁচ ফুট ভেতরে দেয়। কারণ তারা জানে আজ অথবা কাল তাদের দেয়াল ভাঙা পড়বে। তাই আমি বলতে চাই, তারা কিন্তু আইন জানে, জেনেই ওরকম করে।

সোমবার (২১ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘সমস্যার নগরী ঢাকা: সমাধান কোন পথে?’ শীর্ষক নগর সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম এ সংলাপের আয়োজন করে।

রিয়াজুল ইসলাম বলেন, নগরে বস্তি তৈরি হওয়ার জন্য মানুষই দায়ী। আমরা কাজের লোকে অভ্যস্ত। উন্নত বিশ্বে কয়টা বাড়িতে কাজের লোক আছে? কাজের মানুষদের আমরাই ঢাকা শহরে এনেছি। বস্তিগুলো তৈরি হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি। তাই আমরা নিজেরাই নিজেদের কাজগুলো কীভাবে করতে পারি, এ বিষয়েও পরিকল্পনা থাকা উচিত।

রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, আমারা সবাই একত্রিত হয়ে যদি একটা সিটি গভর্নমেন্ট হয়, ঢাকা শহরের উন্নয়নের জন্য যতগুলো সংস্থা আছে, সবাইকে এক ছাতায় নিয়ে যদি আমরা একটা প্রোপার প্ল্যানিং করতে পারি এবং সেই প্ল্যান যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলেই আমাদের সমস্যা সমাধান হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের আপাতত কোনো জমি অধিগ্রহণ করে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার কোনো টার্গেট নাই। অনেকে আমাকে বলেন যে, কোনো প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে কি না। আমি বলে দেই, ‘নো বরাদ্দ’। আমরা আপাতত কোনো প্লট বরাদ্দ দেব না। আমাদের যে জায়গাগুলো আছে, সেগুলো আমরা আমাদের নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য আবাসন ব্যবস্থা করব। এটা কিস্তিতে বা অন্য পদ্ধতিতে দেওয়া হতে পারে।

রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের তিলোত্তমা বাদ, সব বাদ। আমরা এখন একটা বাসযোগ্য নগরী চাই। কারণ আমরা এখন অতীতে যেতে পারব না। আমরা ঢাকাকে ডেমোলিশ (ধ্বংস) করে তো আর কিছু করতে পারব না। আমরা যে জায়গায় আছি, সেটাকে নিয়েই সামনে এগোতে হবে। আর এটাকেই যদি আমরা বাসযোগ্য করতে পারি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে কিছুটা দায়মুক্ত থাকব।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান। প্রবন্ধে তিনি বলেন, ঢাকা নগরের সমস্যাগুলো সমাধানে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয় না। ঢাকার বেশিরভাগ সমস্যা সমাধানে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ফলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনাগুলোও শেষ হয়ে যায়, সমাধান আসে না।

থাইল্যান্ডের একটি প্রকল্পের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মহল্লাভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হলে আগামী পাঁচ বছরে ঢাকা শহরের ৫০ ভাগ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এ সময় ঢাকার সমস্যাগুলো সমাধানে মহল্লাভিত্তিক প্রকল্প নেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ঢাকা শহর এখন একটা তাপের শহর হয়ে গিয়েছে। এটা একটা হিট চেম্বার হয়ে গিয়েছে। ধারণক্ষমতার বেশি মানুষ এখানে রয়েছে। পৃথিবীর কোনো শহরে এত মানুষ নেই। এত মানুষ নিয়ে কখনো আমরা এই শহরকে বসবাসযোগ্য করতে পারব না। এখানে একটা সিলিং দিতে হবে। আর কত মানুষ এলে এখানে সিলিং দেওয়া হবে?

সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নগর পরিকল্পনাবিদ মো. ফজলে রেজা সুমন। স্বাগত বক্তব্য দেন নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মতিন আব্দুল্লাহ। সংলাপে আরও বক্তব্য দেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন-চলতি দায়িত্ব) মো. নুরুল ইসলাম, প্রকৌশলী ও পরিকল্পনাবিদ মো. নুরুল্লাহ, স্থপতি সুজাউল ইসলাম খান প্রমুখ। সংলাপ শেষে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে ঢাকাই ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৫
ইএসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।