ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফুটপাতের দোকানিদের মাসিক চাঁদা ১০ হাজার (ভিডিও)

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
ফুটপাতের দোকানিদের মাসিক চাঁদা ১০ হাজার (ভিডিও) ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফুটপাতে জামা কাপড়ের ব্যবসা করেন খলিল (৩৪) ছদ্মনাম । যাকে এক কথায় বলা হয় হকার। স্ত্রী-সন্তানসহ চারজনের পরিবার। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় পুরো সংসার তাকিয়ে থাকে তারই উপর।

ঢাকা: ফুটপাতে জামা কাপড়ের ব্যবসা করেন খলিল (৩৪) ছদ্মনাম । যাকে এক কথায় বলা হয় হকার।

স্ত্রী-সন্তানসহ চারজনের পরিবার। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় পুরো সংসার তাকিয়ে থাকে তারই উপর।

বর্তমানে ফুটপাতের ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। কষ্ট করে সংসার চালাতে হলেও ফুটপাতের দোকানের চাঁদার অঙ্কটা কমেনি বরং বেড়েছে। আর চাঁদা দিতে না পারলে দোকান তুলে দেওয়া হয়। ফলে পরিবার নিয়ে পড়তে হয় চরম বিপাকে।
 
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুর-১ শাহ-আলী মার্কেটের সামনের ফুটপাতে নিজ দোকানের সামনে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপাচারিতায় আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বলেন।
 
খলিল বলেন, ফার্মগেট, গুলিস্তান ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এর আগে ফুটপাতে জামা-কাপড় বিক্রি করতেন। তবে গত ২ বছর ধরে তিনি মিরপুর-১ এর শাহ-আলী মার্কেটের সামনের ফুটপাতে জামা-কাপড় বিক্রি করেন। এজন্য চাঁদা হিসেবে মাসে তাকে দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতিদিন নাইট ডিউটির জন্য ১০ টাকা, ময়লা পরিষ্কার করার জন্য ১০ টাকা ও লাইন ম্যানকে দিতে হয় ৫০ টাকা। যদি এই চাঁদা দিতে কেও ব্যর্থ হয় বা না দেয় তাহলে তিনি আর ফুটপাতে ব্যবসা করতে পারেন না।
 
তিনি আরো বলেন, ফুটপাতে দোকান দিতে কোনো পুঁজি লাগে না। আর ব্যবসাও মোটামুটি ভালো। প্রতিদিন কেনাবেচা হয় ২-৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে লাভ থাকে হাজার খানেক টাকা। তবে প্রতিদিনের চাঁদা ও মাসিক চাঁদা দেওয়ার ফলে এখন খুব কষ্ট করে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। কিন্তু এই চাঁদা না দিলে এখানকার ফুটপাতে কারো ব্যবসা করার ক্ষমতা নেই। আর ব্যবসা করতে না পারলে উপোস থাকতে হবে। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই চাঁদা দিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা করি।

তিনি বলেন, শুধু আমার একার নয়, যারা ফটুপাতে ব্যবসা করেন তাদের সবাইকে এরকম চাঁদা দিতে হয়।
 
কারা এই চাঁদা নেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের প্রভাবশালী নেতাকর্মী, পুলিশ ও কল্যাণ সমিতির নামে রাস্তার হকারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। এছাড়া একজন লাইনম্যান আছে যিনি প্রতিদিন বিকেলে এসে প্রতিদিনের চাঁদা নিয়ে যান। আর মাসিক চাঁদার টাকা সেটা আমাদের নিজে গিয়ে নেতাদের দিয়ে আসতে হয়।  
 
মিতালী হকার্স মার্কেটের সামনের ফুটপাতের পোশাক বিক্রেতা সবুজ বাংলানিউজকে বলেন, ফুটপাতে ব্যবসা করতে এখন সবাইকে চাঁদা দিতে হয়। আর চাঁদা না দিলে রাতে কোনো মাল থাকে না। তাই পেটের দায়ে চাঁদা দিয়েই ব্যবসা করছি। তবে, আমাদের চাঁদার বিষয়ে কারো সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ আছে।   আর যদি জানতে পারে আমি আপনাকে এই কথা বলছি তবে আমার সমস্যা হবে বলেও তিনি জানান।

 
রাজধানীর মিরপুর-১ এর শাহ-আলী কলেজ মার্কেট, মিতালী হকার্স মার্কেট, শাহ-আলী মার্কেট, মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট, মাজার কো-অপারেটিভ মার্কেট, মুক্ত বাংলা মার্কেট ও হাকিম টাওয়ারের সামনে রয়েছে হাজারের বেশি ফুটপাতের দোকান। যাদেরকে প্রতিনিয়ত চাঁদা দিয়েই ফুটপাতে ব্যবসা করতে হচ্ছে।    
 
এ বিষয়ে  হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ হকার্স লীগের সভাপতি এমএ কাশেম বাংলানিউজকে বলেন, হকার্স তথা যারা ফুটপাতে ব্যবসা করেন তারা খুবই কষ্টে দিনানিপাত করেন। কিন্তু এদেরও ব্যবসা করতে চাঁদা দিতে হয়। বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নামে ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। ফলে নিরুপায় হয়ে ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের চাঁদা দিতে হয়। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব হকার্সদের পুনর্বাসন প্রয়োজন। আর পুনর্বাসন হলে চাঁদা তোলাও বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে এসব চাঁদাবাজদের হাত থেকে গরীব ব্যবসায়ীরা বাঁচবে।    

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
এসজে/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ