ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

৩শ’ গজেই ৯ লাখ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
৩শ’ গজেই ৯ লাখ! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মহাখালীর আমতলী ট্রাফিক সিগন্যাল থেকে কাঁচাবাজারের দূরত্ব কতই বা হবে? বড় জোর ৩শ’ গজ! এই ৩ শ‘ গজ ফুটপাত থেকে প্রতি মাসে চাঁদা আদায় হয় ৯ লাখ ২৪ হাজার!

ঢাকা: মহাখালীর আমতলী ট্রাফিক সিগন্যাল থেকে কাঁচাবাজারের দূরত্ব কতই বা হবে? বড় জোর ৩শ’ গজ! এই ৩ শ‘ গজ ফুটপাত থেকে প্রতি মাসে চাঁদা আদায় হয় ৯ লাখ ২৪ হাজার!
 
জুতা-স্যান্ডেল, তৈরি পোশাক, শীতের কাপড়, বেল্ট-মানিব্যাগ, চশমা, পান-বিড়ি-সিগারেট ও চা-বিস্কুট বিক্রির জন্য মহাখালীর এ ফুটপাতে গড়ে ওঠা ১শ’ ৪০ দোকান থেকে প্রতিদিন ৩০ হাজার ৮ শ‘ টাকা চাঁদা তোলা হয়। মাসে এই চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা!
 
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন পরিদর্শন ও দোকান মালিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।


 
সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার সকালে মহাখালী ফুটপাথের অর্ধেক দোকানই ছিল বন্ধ। যেসব দোকান খোলা ছিল তাদের সঙ্গে কথা বলেও কোন ফল হচ্ছিলো না। বেশিরভাগ দোকানি ঝামেলা এড়াতে চাঁদাবাজ ও সুবিধাভোগীদের ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হচ্ছিলেন না।
 
অবশেষে বেলা ১২ টায় কথা হয় এক যুবকের সঙ্গে। ময়মনসিংহ থেকে আসা এ যুবক তিন বছর ধরে মহাখালী ফুটপাতে ব্যবসা করছেন। ঘনিষ্ঠ একজনের সহযোগিতায় জায়গাটা পেয়েছেন তিনি। আয়ের টাকা ওই ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন। তার ভাষায়, ‘যা ইনকাম হয়, তা দিয়ে দু’জনে চলি। ’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে যেসব তথ্য এই যুবক দেন, তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ হলো-আমতলী ট্রাফিক সিগন্যাল থেকে মহাখালী কাঁচাবাজার পর্যন্ত এই ৩শ’ গজের মধ্যে ১শ’ ৪০টি দোকান আছে।
 
প্রতিটি দোকান থেকে দিনে ২শ’২০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। এর মধ্যে লাইনম্যানকেই দিতে হয় ১শ’ ৪০ টাকা। ৬০ টাকা ডিউটি পুলিশকে। বাকি ২০ টাকা দিতে হয় নাইট গার্ডকে।
 
কে এই লাইনম্যান? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাইনম্যানের নাম আব্দুল খালেক। ত্রিশ বছর আগে মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর থেকে ভাগ্যের সন্ধানে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। এই মহাখালীর ফুটপাতেই শুরু করেছিলেন দোকানদারি।
 
এখানে দোকানদারি করার সুবাদে থানা-পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে আব্দুল খালেকের। এক সময় তিনি দায়িত্ব পান সবার কাছ থেকে চাঁদা তোলার। এভাবে তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে হয়ে ওঠেন ‘লাইনম্যান’।
 
দোকানিদের দেওয়া তথ্যমতে, এই ৩শ’ গজ থেকে আব্দুল খালেক প্রতিদিন ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা চাঁদা তোলেন। এখান থেকে ৫ হাজার টাকা দেন পুলিশকে। দশ হাজার টাকা দেন নেতাদের (স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি)। বাকি ৫ হাজার টাকা নিজের পকেটে পোরেন।
 
অর্থাৎ কোনো প্রকার বিনিয়োগ ছাড়াই প্রতি মাসে দেড় লাখ টাকা আয় করছেন লাইনম্যান আব্দুল খালেক। চাঁদাবাজির অর্থে মার্কেটে দোকান দিয়েছেন। ঢাকায় থাকছেন আলিশান ফ্ল্যাটে। মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে ২৫ লাখ টাকা খরচ করে সম্প্রতি বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন!
 
চাঁদার ভাগ-বাটোয়ারা সম্পর্কে দোকানিরা জানান, দিন শেষে আব্দুল খালেক নিজে অথবা তার একজন প্রতিনিধি এসে টাকা তুলে নেন। পুলিশ আশপাশেই থাকে। চাঁদা তোলা হলেই পুলিশ তাদের ভাগের অংশ নিয়ে যায়। আর নেতাদের ভাগ আব্দুল খালেক নিজে হাতে দিয়ে আসেন। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তখন সেই দলের নেতারা চাঁদার ভাগ পান।
 
তবে এই চাঁদা দেওয়াটাকে আর অপরাধ মনে করছেন না ফুটপাতের দোকানিরা। বিষয়টিকে তারা মাসিক দোকান ভাড়া হিসেবেই দেখছেন। কষ্ট তাদের এই শুধু-ছাদহীন খোলা জায়গায় ব্যবসা করতে এসে প্রতিদিন ২শ’ ২০ টাকা হারে মাসে ৬ হাজার ৬ শ’ টাকা দিতে হচ্ছে। কোনো কোনো দিন পকেট থেকে টাকা দিয়ে খালি হাতে ঘরে ফিরতে হয় তাদের।
 
দোকানি রবিউল ইসলাম সম্রাট বাংলানিউজকে বলেন, চাঁদা দেওয়া ছাড়া তো আর ফুটপাতে ব্যবসা করা যায় না। এরপরও মাঝেমধ্যে সিটি করপোরেশন এসে আমাদের তুলে দেয়। তখন নতুন করে পজিশন নিতে গেলে এককালীন টাকা দিতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
এজেড/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ