ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

গাজীপুরে পাসপোর্ট করতে লাগে টাকা, নয়তো তদবির

মো. রাজীব সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
গাজীপুরে পাসপোর্ট করতে লাগে টাকা, নয়তো তদবির ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নির্ধারিত ফি ব্যাংকে জমা দিয়েও এমআরপি পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। পাসপোর্ট করতে লাগে অতিরিক্ত টাকা, নয়তো কারো তদবির।

গাজীপুর: নির্ধারিত ফি ব্যাংকে জমা দিয়েও এমআরপি পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। পাসপোর্ট করতে লাগে অতিরিক্ত টাকা, নয়তো কারো তদবির।

এমনই অভিযোগের কথা জানালেন গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে করতে আসা ব্যক্তিরা।

শ্রীপুর উপজেলার বাসিন্দা মো. মনিরুজ্জামান যাবেন বিদেশে। ব্যাংকে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে এমআরপি পাসপোর্টের ফরম পূরণ করে সকাল ১০টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তাকে যখন ডাকা হলো তখন তাকে বলা হয়, আপনার ফরমে ভুল রয়েছে। ঠিক করে নিয়ে আসেন। দুইদিন ঘুরেও সেই ভুল আর ঠিক হয় না। পরে এক দালালের মাধ্যমে এক হাজার টাকা দিলেই সব ভুলই ঠিক হয়ে গেল।

পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিরা জানান, গাজীপুর শহরের ট্যাংকিরপাড় এলাকায় অবস্থিত গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। এখানে টাকা ও তদবির ছাড়া পাসপোর্ট মেলে না।

তবে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের তদবির থাকলে সহজেই পাওয়া যায় পাসপোর্ট। পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদাসহ ছোট বড় সকল স্যারকে মেনেজ করে ৩০-৪০ জন দালাল কাজ করে এ অফিসে।

সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দালালদের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা। কেউ পাসপোর্ট করতে আবেদন করলে এই ভুল সেই ভুল দেখিয়ে নানাভাবে হয়রানি করা হয় তাকে।

এতে বাধ্য হয়ে অনেকেই দালালের দ্বারস্থ হন পাসপোর্ট করতে। আবার অনেকেই তদবির করাতে যান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে। পাসপোর্ট করতে দালালকে দিতে হয় ৫ হাজার  থেকে ৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫০০ টাকা যায় ব্যাংকে আর বাকি টাকা ভাগাভাগি হয় পাসপোর্ট অফিসের ছোট বড় সব কর্মকর্তা কর্মচারীদের পকেটে।

গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কল্যাণ সাহা নামে এক দালাল জানান, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ৫-৬ হাজার টাকা দিলে পাসপোর্ট আমরা করে দেই। শুধু ছবি তোলার দিন আসতে হয়। টাকা দিলে ফরম পূরণ থেকে শুরু করে সব আমরা করে দেই। এ টাকা শুধু আমরা খাই না। প্রতি পাসপোর্টের জন্য অফিসে দিতে হয় ১ হাজার টাকা। এ টাকার ভাগ পায় অফিসের ছোট-বড় সব স্যার।

তিনি আরো জানান, এ পাসপোর্ট অফিসে ৩০-৪০ জন দালাল কাজ করে। সাধারণ মানুষ পাসপোর্ট করতে আসলে হয়রানির শিকার হন। ফলে তারা আমাদের কাছে আসে। কিছু টাকা বেশি দিতে হলেও কেউ হয়রানি পছন্দ করে না।

গাজীপুরের কানাইয়া এলাকার বাসিন্দা মো. মুকুল মিয়া জানান, নাতির জন্য পাসপোর্ট করতে ৫ দিন ধরে ঘুরছি। ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছি। ফরম পূরণ করে জমা দিতে গেলে হয়রানির শিকার হচ্ছি। পাসপোর্ট অফিসের লোকজন শুধু এই সমস্যা ওই সমস্যা দেখায়। বাধ্য হয়ে দালাল ধরেছি। কিছু টাকা খরচ হলেও ভাল। হয়রানি থেকে বাঁচা যাবে।

এ ব্যাপারে গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কোন দালাল নেই। আমি কোন দালালকে এখানে ঢুকতে দেই না। এখানে পাসপোর্ট করতে আসলে কেউ হয়রানি হয় না। সবাই হয়রানি ছাড়া পাসপোর্ট পায়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৬৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৬
আরএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ