ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

হাঁটা আর গল্পের ছলে বখরা আদায় ফুটপাতে

রীনা আকতার তুলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
হাঁটা আর গল্পের ছলে বখরা আদায় ফুটপাতে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শুক্রবার দুপুর ১২টা। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের ফুটপাতে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। এর মধ্যে দেলোয়ার নামে একজন  ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ফুটপাতে টহল দিচ্ছেন।

ঢাকা: শুক্রবার দুপুর ১২টা। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের ফুটপাতে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা।

এর মধ্যে দেলোয়ার নামে একজন  ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ফুটপাতে টহল দিচ্ছেন।

ট্রাফিক পুলিশ কেন ফুটপাতে? এই অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে দেখা মেলে অন্য কিছুর। আসলে ফুটপাত থেকে ঘুরে ঘুরে চাঁদা নিচ্ছেন তিনি।

‘ফুটপাতে কি করছেন’, প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে অনেকটাই হতবাক দেলোয়ার। তিনি জানালেন, ‘ডিউটি করছি’। আর কি করছেন? ‘কিছু না’, বলে দ্রুত ফুটপাত ত্যাগ করেন তিনি।

সরেজমিনে শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত গোলচত্বরে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মিরপুর গোলচত্বর থেকে মিরপুর ১৪ নম্বর যেতে হাতের ডান পাশে ফুটপাতে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। সকল বয়সীদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক, শীতের কাপড়, জুতা, চশমা,  কম্বল, শিশুদের খেলনা সবই মিলবে এই ফুটপাতে।

ফুটপাত ঘুরে আরো দেখা মেলে, ফুটপাতে অস্থায়ী এই দোকানগুলোর কারণে পথচারীদের চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছে। পুরো ফুটপাত হকারদের দখলে। এই ফুটপাতে আরো দেখা মেলে, একজন ট্রাফিক পুলিশ ফুটপাতের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখছেন। রাস্তায় দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও তিনি সময় দিচ্ছেন হকারদের সাথে।   ভালোভাবে খেয়াল করে দেখা যায়, হাঁটা আর গল্প করার ছলে  চাঁদা নিচ্ছেন তিনি। এছাড়া একই ফুটপাতে আরো চার জন পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন।

ফুটপাতে জুতার  ব্যবসা করেন মো. হুমায়ুন ও তার ভাই লাল মিয়া। বাড়ি নড়াইল।   দুই ভাই বাংলানিউজকে বলেন,  ৫ বছরের ব্যবসা। প্রতিদিনই দোকান খোলেন তারা। শুধুমাত্র স্টেডিয়ামে খেলা থাকলে কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকে।

পুলিশকে চাঁদা দেন, উত্তরে লাল মিয়া বলেন, এমনে তো আর ব্যবসা হয় না। ব্যবসা করতে টাকা তো লাগবোই।

ট্রাফিকের ফুটপাতে টহল দেয়, না চাঁদা তোলে, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না আপা। আমি বলতে পারমু না। আপনি তো আইছেন ব্যবসা বন্ধ করতে। গরিবের পেটে লাথি মাইরা কি লাভ।

লাল মিয়ার পাশে শিশুদের কাপড়ের ব্যবসা করেন কাওসার আহমেদ। বাড়ি কুমিল্লা। তিনি বলেন, তিন বছর ধরে এই এলাকায় ব্যবসা করি। বসার কোনো জায়গা নাই। সরকার বসার কোনো জায়গা দিলে ফুটপাতে ব্যবসা করতাম না। এ সময় হকারদের পুনর্বাসনের দাবিও জানান তিনি।  

এই ফুটপাত দিয়ে হেঁটে মিরপুর ১৪ নম্বরের দিকে যাচ্ছিলেন দুই নারী। ইয়াসমিন আহমেদ ও তারানা বেগম। তারা বাংলানিউজকে বলেন, দেখেছেন তো কি অবস্থা। ফুটপাত হাঁটার জন্য দেওয়া হয়েছে। আর হকাররা দখল করে ব্যবসা করছে। হাঁটতে খুব সমস্যা হয়।

ফুটপাত দখল ও চাঁদাবাজির বিষয়ে কথা হয় পল্লবী ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার ফাতেমা ইসলামের সাথে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন,পথচারী ও যাত্রীদের চলাচলের  সুবিধার জন্য আমরা সব সময় ৫০ গজ দূর পর্যন্ত রাস্তার আশেপাশে যেন যানজট না হয় সেভাবে কাজ করে থাকি। এছাড়া কোনো ট্রাফিক পুলিশ যদি চাঁদাবাজির সাথে জড়িত থাকে তবে প্রমাণ সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।

ফুটপাত দখলের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য অত্র এলাকার আঞ্চলিক কর্মকর্তাসহ আমরাও কাজ করে থাকি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
আরএটি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ