ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফের দখল ফুটপাত, লাভের অংশ পুলিশ-নেতাদের পকেটে!

জান্নাতুল ফেরদৌসী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
ফের দখল ফুটপাত, লাভের অংশ পুলিশ-নেতাদের পকেটে! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বার বার সাঁড়াশি অভিযানের পরও নিউমার্কেটের ফুটপাত আবারো চলে গেছে হকার্স ব্যবসায়ীদের দখলে। চলছে রমরমা ফুটপাত ব্যবসা। জানা গেছে, থানার পুলিশ ও স্থানীয় নেতাদের লাইনম্যানদের সহযোগিতায় তাঁরা আবার ফুটপাতে দোকান বসিয়েছেন।

ঢাকা: বার বার সাঁড়াশি অভিযানের পরও নিউমার্কেটের ফুটপাত আবারো চলে গেছে হকার্স ব্যবসায়ীদের দখলে। চলছে রমরমা ফুটপাত ব্যবসা।

জানা গেছে, থানার পুলিশ ও স্থানীয় নেতাদের লাইনম্যানদের সহযোগিতায় তাঁরা আবার ফুটপাতে দোকান বসিয়েছেন। নিয়মিত চাঁদা দিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা করছেন তারা। এই চাঁদার অংশ যাচ্ছে পুলিশ ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতাদের পকেটে।

শুক্রবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর নিউমার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স, নুরজাহান মার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনীচক মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায় এসব তথ্য।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিউমার্কেটের ১, ২, ৩ নং গেটের নীচে আগের মতোই বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও গাউছিয়া, ধানমন্ডি হকার্সসহ আশপাশের মার্কেটগুলোর সামনের  ফুটপাতে চলছে রমরমা ব্যবসা।   তবে আগের মতো কাঠ,বাঁশ বা পলিথিনের স্থাপনা নেই।

ঢাকা কলেজের সামনে থেকে শুরু করে নিউ সুপার মার্কেটের ১ নম্বর গেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, চাঁদনী চক, রাফিন প্লাজা হয়ে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত মিরপুর রোডের দুই পাশজুড়ে ফুটপাত এখন পুরোপুরি হকারদের দখলে।

গাউছিয়ার সামনের ফুটপাতে সালাম মিয়ার (ছদ্ম নাম) পোশাকের দোকান। একটু পর পর হাঁক ছেড়ে ক্রেতাদের ডাকছেন তিনি। নানান কথার ছলে কথা হলো ব্যবসার আয়-উন্নয়ন নিয়ে। সারাদিনের উপার্জনে সংসার চলে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেমনে চলবো। লাভের টেকা তো পুলিশ আর নেতাগো দিতেই যায়। ‘

কত টাকা দিতে হয় তাদের জানতে তিনি জানান, ‘দিন আষ্টশ’ (৮শ) টাকা কইরা দেওন লাগে। ’ এই টাকা কি সরাসরি পুলিশ নেন? ‘না আমগো লাইন ম্যান আছে। হেগো কাছ থাইকা পুলিশ নেয়। নেতারা নেয়। ’

নিউমার্কেট ওভারব্রিজের নীচে বসেছেন আরেক ফুটপাত ব্যবসায়ী সিদ্দিক (ছদ্ম নাম)। তার সামনে হরেক রকম কসমেটিক্সের পসরা সাজানো। ফুটপাতে দোকান দেওয়া নিষেধ তারপরেও কিভাবে দোকান করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ আমগো দু হাত জায়গা মাইপা দিছে। আমরা দুই হাত জায়গা ভিতরে দোকান করি। ’

এজন্য কি পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়? একটু ইতস্তত করে তিনি জানান ‘ তা তো একটু আকটু দিওন লাগে। ’ কত টাকা চাঁদা দিতে হয় জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘দিন ৫শ’ কইরা দিই। তয় আমি দেই না। দোকানের টেকা তুইলা আমার খালুরে দেই হেই টেকা দেয়। ’

চিরুনি, ক্লিপ, মাথার ব্যান্ডের ছোট দোকান রফিকুলের (ছদ্ম নাম)। প্রথমে চাঁদার বিষয়টি অস্বীকার করলেও এক পর্যায়ে স্বীকার করেন ক্ষুদ্র এ ফুটপাত ব্যবসায়ী।

জানান কি পদ্ধতিতে তাদের চাঁদা দিতে হয়, ‘এই মার্কেটের উপরে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। হেইডা দেইখা আমগো মুখ চিনে রাখে লাইনম্যানরা। পরে সন্ধ্যার পর আইসা টেকা লইয়া যায়। আবার পুলিশও আইসা ডেইলি টাকা লইয়া যায়। ’

এদিকে, ফুটপাতের বেশিরভাগ জায়গা হকারদের দখলে থাকায় হাঁটাচলা করার ফুরসত নেই ক্রেতাদের। ফুটপাতের রাস্তাগুলোতে একজনের বেশি হাঁটা দায় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নিউমার্কেটের ২ নং থেকে ৪ নং গেট পর্যন্ত সাধারণ মানুষ কিংবা ক্রেতাদের চলাফেরা করা খুবই কষ্টকর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিউমার্কেটে আসা এক ক্রেতা রাফিন আহমেদ জানান, ‘ওরা (হকাররা) ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করে। আর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের। ’

শ্যামলী থেকে আসা চাকুরীজীবী এক মহিলা আফরোজা পারভিন জানান, ‘আমরা মহিলা মানুষ। মার্কেট করতে আসলে ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে বার বার বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। একজনের গায়ের সাথে আরেকজনের ধাক্কা লাগে। আর বেশি ভীড় হলে মোবাইল ফোন চুরির ঘটনাও ঘটে। ’

‘সরকার ফুটপাত ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা মার্কেট করে দিলে সাধারণ মানুষও কম টাকায় মার্কেট করতে পারে আবার হকাররাও ব্যবসা করে জীবন ধারণ করতে পারে। ’ ফুটপাত দখল নিয়ে জানতে চাইলে এমন মতামত দিলেন আরেক ক্রেতা সাবরিনা রহমান।

তবে পুলিশের চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন নিউমোর্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান।

তিনি বলেন, ফুটপাত পুরোপুরি সিটি কর্পোরেশনের দখলে। হকারদের সাথে আমাদের কোন সংযোগ নেই।   আর টাকা নেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।

ফুটপাত বেদখলে পুলিশের কোন পদক্ষেপ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, সিটি কর্পোরেশনের সাথে আমরা কথা বলছি। তাদের উদ্যোগে আমাদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে এই ফুটপাত থেকে হকারদের তুলে দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
জেডএফ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ