ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

গৃহহীনদের ঘর বরাদ্দ হচ্ছে স্বাবলম্বীদের নামে

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
গৃহহীনদের ঘর বরাদ্দ হচ্ছে স্বাবলম্বীদের নামে

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় ১৬টি ঘর গৃহহীনদের পরিবর্তে স্বাবলম্বীদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাড়িগুলো গৃহহীন ও হতদরিদ্রদের নামে বরাদ্দ পাওয়ার কথা ছিল। দুই রুম বিশিষ্ট প্রতিটি একতলা ছাদের পাকা ঘর নির্মাণে ইতোমধ্যেই ৪ লাখ টাকা করে খরচ করা হয়েছে।

ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় ১৬টি ঘর গৃহহীনদের পরিবর্তে স্বাবলম্বীদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাড়িগুলো গৃহহীন ও হতদরিদ্রদের নামে বরাদ্দ পাওয়ার কথা ছিল।

দুই রুম বিশিষ্ট প্রতিটি একতলা ছাদের পাকা ঘর নির্মাণে ইতোমধ্যেই ৪ লাখ টাকা করে খরচ করা হয়েছে।
 
‘সাতক্ষীরা জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত গৃহহীনদের পুনর্বাসনে আশ্রয়স্থল হিসেবে গৃহ নির্মাণ ও ‍সুপেয় পানি সংরক্ষণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অনিয়ম করে ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়।

প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়িঘর না দিয়ে স্বাবলম্বীদের নামে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘরগুলো বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানায় স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
 
মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা গেছে, অনিয়ম করে জলবায়ু ট্রাস্টের ৫ কোটি টাকা ব্যয় করে প্রকৃত গৃহহীনদের পরিববর্তে স্বাবলম্বীদের নামে ঘর নির্মাণ করার কারণে প্রকল্পটি থেমে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট এই প্রকল্পে অর্থায়নও করছে না। অর্থ ছাড় না পাওয়ায় প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন  হওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অনিয়ম করে ১৬টি ঘর স্বাবলম্বী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের নামে বরাদ্দের কারণে প্রকল্পে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড। ১৬টি পরিবারের নামে ১৬টি ঘর নির্মাণ কাজ অবশেষে বন্ধ রাখা হয়েছে। অথচ ১৬টি ঘর নির্মাণে ৫ কোটি টাকার মধ্য থেকে ইতোমধ্যেই ৬৪ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। এই ৬৪ লাখ টাকা ছাড় স্থগিত রেখেছে জলবায়ু ট্রাস্ট। ১৬টি ঘরের অনিয়মের কারণে থেমে গেছে পুরো ৩৩৭টি ঘর নির্মাণ কাজ।
 
মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল ইউনিয়নের আশুতোষ সরকার,পিতা মৃত হীরালাল সরকার; রণজিত মল্লিক, পিতা তারাপদ মল্লিক; মৃতুঞ্জয় মিস্ত্রী, পিতা পুলিন মিস্ত্রী; বিমল চন্দ্র মিস্ত্রী, পিতা মৃত দামেদার মিস্ত্রী; চিত্ত রঞ্জন সরকার, পিতা অন্ন সরকার; অরবিন্দ মন্ডল পিতা মৃত কালিপদ মন্ডল; আশুতোষ সরকার পিতা অনিল সরকার; উদয় রঞ্জন বিশ্বাস পিতা মৃত হরি পদ বিশ্বাস; জহির উদ্দিন গাজী পিতা মৃত মুছা সরদার; অশোক রায় পিতা মৃত অনন্ত রায়; আনন্দ কুমার দাশ পিতা মৃত হরি পদ দাশ; অরুন সরকার পিতা মৃত হরেন সরকার; আব্দুল মান্নান বিশ্বাস, পিতা আব্দুল বিশ্বাস  ও আকরাম বিশ্বাস, পিতা সাকাত আলী বিশ্বাসের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ এরা কেউ ঘর পাওয়ার যোগ্য না। সবাই স্বাবলম্বী ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। এমনকি জলবায়ুর কারণে এরা কেউ ক্ষতিরও শিকার হননি।

অনিয়ম করে স্বাবলম্বীদের ঘর বরাদ্দ দেওয়ার কারণে এখন প্রকল্পে অর্থায়ন করতে চাইছে না জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড।  

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়,  শুরু থেকেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে ৪০০টি ঘর নির্মাণ এবং ১০টি পুকুর খননের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এসব ঘর যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত গৃহহীন চিহ্নিত করা হয় ৩৩৭টি। এর মধ্যেও ১৬টি পরিবার প্রকৃত গৃহহীন না।   তবে জলবায়ু ট্রাস্টের চোখে ধরা পরে এই ১৬টি ঘর। যে কারণে আবারও সংশোধন করতে হয় প্রকল্পের কাজ। ফলে বার বার বেড়েছে প্রকল্পের সময় এবং ব্যয়।
 
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক প্রকল্পের আওতায় ১৬ ঘর নির্মাণ বাবদ ৬৪ লাখ টাকা ছাড় স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে বাকি ৩৩৭টি গৃহ নির্মাণ ও পুকুর খনন ব্যয়ের অবশিষ্ট ৫ কোটি ৭৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা ছাড় করার জন্য বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট বরাবর সুপারিশও করেছেন সচিব।
 
অনিয়ম করে ১৬টি ঘর নির্মাণ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার আলী নূর বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। ’
 
তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী ছারোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের আওতায় ৪০০টি ঘর নির্মাণ করার কথা ছিলো। পরে যাচাই-বাছাই করে ৩৩৭টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যেও আরও ১৬টি ঘর নির্মাণ নিয়ে কথা উঠেছে। সেই লক্ষ্যে আমরা ১৬টি ঘর নির্মাণের টাকা দেব না। যাদের নামে বরাদ্দ তাদের পরিশোধ করতে হবে। জলবায়ু ট্রাস্টের টাকায় ঘর পাওয়ার যোগ্যদের মধ্যে এরা পড়ে না। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৬
এমআইএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।