ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মেট্রোরেলের স্বপ্ন বাস্তবায়নে রেজোদ্দিনদের রাতভর ব্যস্ততা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৬
মেট্রোরেলের স্বপ্ন বাস্তবায়নে রেজোদ্দিনদের রাতভর ব্যস্ততা ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজধানীবাসীর যখন ঘরে ফেরার সময় হয়, তখন কাজের প্রস্তুতি চলে রেজোদ্দিনদের। রেজোদ্দিনরা মূল কাজ শুরু করেন যখন কর্মব্যস্ত দিন শেষে ঢাকাবাসী বিছানায় গা এলিয়ে দেন ঠিক তখন। পুরো শহর যতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকবে ঠিক ততক্ষণ চলতে থাকবে তাদের কাজ।

ঢাকা: রাজধানীবাসীর যখন ঘরে ফেরার সময় হয়, তখন কাজের প্রস্তুতি চলে রেজোদ্দিনদের। রেজোদ্দিনরা মূল কাজ শুরু করেন যখন কর্মব্যস্ত দিন শেষে ঢাকাবাসী বিছানায় গা এলিয়ে দেন ঠিক তখন।

পুরো শহর যতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকবে ঠিক ততক্ষণ চলতে থাকবে তাদের কাজ।

রেজোদ্দিনরা রাতজাগা পাখি। তারা রাতভর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন শহরবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে।  শহরে ঘুমের মধ্যেই হেমন্তের শিশির ভেজা রাতে ঘাম ঝরিয়ে যাচ্ছেন তারা। স্বপ্নের মেট্রোরেল চালু হবে, তখন এই স্বপ্নের কারিগররা আবার হয়তো নতুন স্বপ্ন বোনা শুরু করবেন।

রাজধানীর আগারগাঁও তালতলা সড়কে পুরোদমে চলছে রাস্তাখোড়ার কাজ। রাস্তার মাঝামাঝি মেশিন দিয়ে কালো পিচের সড়কে বিশাল গর্ত করা হচ্ছে। রাতভর এই কাজ করে চলেছেন ২৮ জন শ্রমিক। তাদেরই একজন মো. রেজোদ্দিন। দিনে সড়কের ব্যস্ততা এড়িয়ে নগরবাসীর সুবিধার্থে তাদের এই রাতভর কর্মযজ্ঞ।

শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে মো. রেজোদ্দিন কাজের ফাঁকে নাস্তা খাচ্ছিলেন। সেসময় আলাপ প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে জানান, ১লা নভেম্বর থেকে মেট্রোরেলের এই প্রকল্পের কাজ চলছে। রাত ৮টার দিকে তাদের কাজের প্রস্তুতি চলতে থাকে। মূল কাজ শুরু হয় রাত ১০টায় চলে টানা সকাল ৬টা পর্যন্ত। কাজ শেষে সবকিছু গুছিয়ে সকাল প্রায় ৮টার দিকে তারা বিশ্রামের জন্য রওনা দেন বাসায়। সবমিলে নিয়মিত প্রায় ১২ ঘণ্টা রাতজাগা টানা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা।

তিনি বলেন, অনেক কষ্ট হয়, এই কামে বিরাট রিস্কও আছে।

কথা প্রসঙ্গে ৫০ বছর বয়সী ময়মনসিংহের বাসিন্দা রেজোদ্দিন জানান, তার চার ছেলেমেয়ে আছে। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে তিনজন পড়াশোনা করে আর সবার ছোট ছেলের বয়স ৬ মাস। প্রতিমাসে কোম্পানী থেকে ছুটি নেওয়া গেলেও দায়িত্বের কারণে ২-৩ মাসে একবার বাড়ি যান।

তার ভাষায়, যার দায়িত্ব বেশি তার একটু কমই ছুটিছাটা হয়। প্রত্যেক মাসে বাড়ি গেলেতো কাজে শট (কম) পরব। যার কাম করি, তারওতো সুবিধা অসুবিধা দেহন লাগব।

তবে এতোসব পরিশ্রম আর সময়মত বাড়ি যেতে না পারার আক্ষেপ ঢাকা পড়ে যায় কোম্পানির সুযোগ সুবিধার কারণে। তিনি জানান, প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক আর সাড়ে চার হাজার টাকা খাবার বাবদ পান তিনি। জরুরি প্রয়োজনে কোম্পানির কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিতে পারেন। যা আস্তে আস্তে বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, বিদেশি কোম্পনি কাজ বেশি চায় তবে তারা সেফটিটা (নিরাপত্তা) আগে দেখে।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাতে ২৮ জন শ্রমিক ও দিনে ৮ জন শ্রমিক কাজ করেন। যাদের সর্বনিন্ম মাসিক মজুরি সাড়ে ১৪ হাজার টাকা।

ছোটবেলা থেকেই রেজোদ্দিন রোড কনস্ট্রাকসনের কাজ করেন। আর এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন গত ৫ বছর ধরে। তার কর্মময় জীবনে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার বহু সড়ক তৈরির সাক্ষী তিনি। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে যেন বাড়তি উচ্ছ্বাসও কাজ করছিল।

চায়না কোম্পানি হানবেক কোম্পানি লিমিটেডের এ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক লি মিন হু। তিনিও পাশে থেকে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকদের।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম অবস্থায় ৩ কিলোমিটারের কিছু বেশি রাস্তায় ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। তিন থেকে সাড়ে তিন মাস সময় লাগবে এটা শেষ করতে। দিনে ট্রাফিক জ্যাম থাকে তাই রাতেই কাজ করতে হচ্ছে।

আপনার শ্রমিকরা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালো কাজ করে মাঝে মধ্যে নিজেরা ঝগড়া করে, আবার আনন্দও করে।

মেট্রোরেলের রুটে মাটির নিচে ও ওপরে যেসব সঞ্চালন লাইন রয়েছে, মূলত সেগুলো সরানোর কাজ চলছে এখন। তবে মেট্রোরেলের মূল কাজ শুরু হবে আগামী বছরের জুন মাসে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৬

পিএম/আরএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।