ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

১২ নভেম্বর এলেই আঁতকে ওঠে লক্ষ্মীপুর উপকূলের মানুষ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৬
১২ নভেম্বর এলেই আঁতকে ওঠে লক্ষ্মীপুর উপকূলের মানুষ

১৯৭০ সালের ভয়াল ১২ নভেম্বরে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া দশ বছরের কিশোর শহিদুল ইসলাম এখন প্রায় বৃদ্ধ। ওই দিনের সেই মহাপ্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে তার বাবা নুরুল হক মাস্টার, ভাই আবুল কালামসহ ১৮ জন কৃষি শ্রমিক নিহত হয়েছেন। বাবা-ভাইয়ের মরদেহও খুঁজে পাননি তিনি।

লক্ষ্মীপুর: ১৯৭০ সালের ভয়াল ১২ নভেম্বরে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া দশ বছরের কিশোর শহিদুল ইসলাম এখন প্রায় বৃদ্ধ।

ওই দিনের সেই মহাপ্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে তার বাবা নুরুল হক মাস্টার, ভাই আবুল কালামসহ ১৮ জন কৃষি শ্রমিক নিহত হয়েছেন।

বাবা-ভাইয়ের মরদেহও খুঁজে পাননি তিনি।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চর জাঙ্গালিয়া গ্রামের বাসিন্দা বেঁচে যাওয়া সেই শহিদুল কান্নায় ভেঙে পড়ে স্মৃতিচারণ করেন সেদিনের।

তিনি বলেন, ভয়াল ওই দিনে কমলনগরের চরকাদিরা ভূলুয়া নদী সংলগ্ন খামার বাড়িতে বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে ছিলেন তিনি। তারা তিনিজন ছাড়াও আরও ১৫ জন কৃষি শ্রমিক ওই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ওই দিন সন্ধ্যার দিকে নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পায়। রাত ৮টার দিকে শুরু হয় ঘ‍ূর্ণিঝড়। তীব্র বাতাসে ঘর ভেঙে পড়ে।

এদিকে পানি বাড়তে থাকে। বাঁচার জন্য সবাই ভাঙা ঘরের চালায় অবস্থান নেন। তিনি একটা কাঠের বাক্সের ভেতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে থাকেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ধেয়ে আসে পানির ঢল। চোখের সামনে ঢেউ ভাসিয়ে নেয় তার বাবা-ভাইসহ ১৭ জনকে। পরের দিন সকালে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূর থেকে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।

সেই দিনের ভয়াবহ দুযোর্গের কথা মনে পড়লে আজও এলাকার মানুষের মন ও পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। আঁতকে উঠে উপকূলীয় এলাকার মানুষ। সেদিনের স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় স্বজন হারানোদের।

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর রাতে লক্ষ্মীপুরসহ উপকূলীয় জেলা গুলোতে মহ‍াপ্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। এ রাতে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।

এর আঘাতে চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা ৮ থেকে ১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। পানির স্রোতে ভেসে যায় নারী শিশু ও বৃদ্ধসহ অসংখ্য তাজা প্রাণ।

স্বজন হারানো মানুষগুলো জানান, সেদিন রেডিওতে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেওয়া হয়। কিন্তু উপকূলে পর্যাপ্ত রেডিও ছিল না। যাদের ছিল তারা বিশ্বাস করেনি। ওইদিন সকাল থেকেই গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। সন্ধ্যা থেকে হালকা বাতাস শুরু হয়। গভীর রাতে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২২ কিলোমিটার। ঝড় আর পাড়াহসম স্রোতে উপকূল লণ্ড ভণ্ড হয়ে যায়। চারদিকে লাশ আর লাশ ভাসতে থাকে। সে রাতে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।

দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাসে লক্ষ্মীপুরের রামগতির মেঘনা উপকূলীয় চরআবদুল্লাহ কমলনগরের ভুলুয়ানদী উপকূলীয় চরকাদিরাসহ নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় হানা দেয় এ ঘূর্ণিঝড়।

চারিদিকে পচা গন্ধে মানুষ লাশের কাছে যেতে পারেনি। ৩-১০ ফুটের জলোচ্ছ্বাসের কারণে মাটি দেওয়া যায়নি মৃত মানুষগুলোকে। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লাখ লোকের প্রাণহানির ঘটনার দুই দিন পর সরকারিভাবে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হয়।

পরবর্তীতে সরকারি হিসেবে লোকজনের ক্ষতি ৪৭ লাখ, ঘর-বাড়ি বিনষ্ট বা ধ্বংস ৪ লাখ, গবাদি পশু ও হাঁস মুরগির মৃত্যু ৭ লাখ ৮ হাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধবংস হয়েছে তিন হাজার পাঁচশ’।


প্রতি বছর ১২ নভেম্বর এলেই নির্দিষ্ট কিছু সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে। এর মধ্যে ঢাকার লক্ষ্মীপুর জেলা সমিতি, ঢাকার রামগতি উপজেলা সমিতিসহ বেসরকারি সংস্থা ডর্প এর নাম উল্লেখ করার মত।

এ ধরনের সংগঠনগুলো মিলাদ মাহফিল, কোরআনখানী ও নিহতদের স্মরণে স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।

বেসরকারি সংস্থা ডর্প মিডিয়া ম্যানেজার আ হ ম ফয়সল বলেন, ১৯৭০ এর ১২ নভেম্বরের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাসের ফলে দেশে প্রায় ১০ লাখ লোকের প্রাণহানির ঘটনাকে চির স্মরণীয় করে রাখতে ১২ নভেম্বরকে ‘জাতীয় দূর্যোগ দিবস’ ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আসছে বেসরকারি সংস্থা ডর্প। এটি ঘোষণা করা হলে যে শুধু তাদের স্মরণ করা হবে তাই নয়, দিবসটি পালন করতে গিয়ে সবার মধ্যে দুর্যোগ প্রতিরোধে সচেতনতাও সৃষ্টি হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।