ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

এক ছেলে হারিয়ে অনেক ছেলে খুঁজে পেলেন মাদার আলী

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
এক ছেলে হারিয়ে অনেক ছেলে খুঁজে পেলেন মাদার আলী ছবি- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

আকাশে উড়োজাহাজ উড়ে যেতে দেখেছেন বহুবার। তবে উড়োজাহাজ যেখান থেকে উড়ে আর নামে সেই বিমানবন্দর আসলে কেমন-তা নিয়ে কোনো ধারণাই ছিলো না কুষ্টিয়ার মাদার আলীর (৫৮)।

ঢাকা: আকাশে উড়োজাহাজ উড়ে যেতে দেখেছেন বহুবার। তবে উড়োজাহাজ যেখান থেকে উড়ে আর নামে সেই বিমানবন্দর আসলে কেমন-তা নিয়ে কোনো ধারণাই ছিলো না কুষ্টিয়ার মাদার আলীর (৫৮)।

ছেলে এয়ারপোর্টে ডিউটি করেন। এটা গ্রামবাসীর কাছে বেশ গর্বেই বলতেন পেশায় ক্ষেতমজুর মাদার আলী।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) সেই এয়ারপোর্টেই এসেছেন তিনি। ঘুরে দেখেছেন ছেলের প্রিয় কর্মস্থল। সবই আছে। নেই শুধু আদরের ছেলে সোহাগ আলী (৩০)।

৬ নভেম্বর। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ড্রাইভওয়েতে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের জীবনের বিনিময়ে পেশার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখেন আনসার সদস্য সোহাগ আলী। এক দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের অাঘাতে প্রাণ হারান তিনি।

গ্রাম থেকে সোহাগ আলীর বাবা মাদার আলীকে ডেকে আনা হয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইমিগ্রেশন পুলিশের পক্ষে তাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমন্ত্রণ জানান ওসি (ইমিগ্রেশন) সিনিয়র এএসপি মুকিত হাসান খান।

সেখানেই অনেকের মাঝে নিজের ছেলের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পান সন্তানহারা এই বাবা। ক্ষণিকের জন্য হলেও ভুলে যান ছেলে হারানোর শোক। ‘বাবার’ সর্বোচ্চ মর্যাদা, সম্মান আর ভালোবাসায় আপ্লুত হন তিনি।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ওসি (ইমিগ্রেশন) সিনিয়র এএসপি মুকিত হাসান খান বাংলানিউজকে বলেন, এখানে আর্মড পুলিশ, ইমিগ্রেশন পুলিশ, আনসার, সিভিল এভিয়েশন- আমরা একটা পরিবার। সবাই মিলেই আমরা বিমানবন্দরে যাত্রী পরিষেবায় কাজ করি।

গত ৬ নভেম্বর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দুর্বৃত্তের হাতে নিহত হন আনসার সদস্য সোহাগ আলী। তার মৃত্যুর ঘটনায় আমাদের মাঝে নেমে আসে ‘ভাই হারানোর’ শোক। সিদ্ধান্ত নেই। আমাদের ব্যক্তিগত সামর্থ্য নিয়ে শোকাতুর পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর।

বিষয়টি অতিরিক্ত আইজি (এসবি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী স্যার, স্পেশাল পুলিশ সুপার (এসএস) মাহবুবুর রহমান স্যারকে জানালে তারা এ উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়ার প্রেরণা দেন।

আমরা আড়াইশ’ সদস্য প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা একত্র করে তা তুলে দিই নিহত সোহাগ আলীর বাবা মাদার আলীর হাতে। কারণ তিনিও একজন বাবা। আজ এই বার্তাটাই দিচ্ছি, সোহাগ নেই। কিন্তু আমরা আছি।

আনসারের টিআই জাহিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ওসি (ইমিগ্রেশন) সিনিয়র এএসপি মুকিত হাসান খান স্যার যে উদ্যোগ নিলেন, তাতে আমাদের চোখ ভিজে এসেছে। সত্যিই দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তিনি। তার কারণে এখন পুলিশের ওপরই শ্রদ্ধা বেড়ে গেছে আমাদের।

নিহত আনসার সদস্য সোহাগ আলীর বাবা মাদার আলী বাংলানিউজকে জানান, মিরপুর উপজেলার কুর্শা গ্রামে ক্ষেতমজুরের কাজ করেন তিনি। স্ত্রীর নাম শানাহার। এক মেয়ে ও ছেলে সোহাগ আলীকে নিয়েই ছিলো তার সংসার।
 
‘আজ ছেলের কর্মস্থলে এলাম। ছেলেটা নেই। কিন্তু তা এতটুকুও অনুভব করতে দেননি এএসপি। মনে হলো যেন সেও আমার ছেলে। আমাকে খাওয়ালেন। বিমানবন্দরটা ঘুরিয়ে দেখালেন। উড়োজাহাজ খুব কাছ থেকে দেখালেন। শেষে পরিবারের জন্য এক লাখ টাকাও তুলে দিলেন। আবার বলে দিলেন কখনো কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে যেন ফোনে জানাই।

এক ছেলে হারিয়ে এএসপি মুকিত হাসান খানের নেতৃত্বে আজ আমার পাশে দাঁড়িয়েছে অনেক ছেলে- এসব বলতে বলতে আবেগে গলাটা ধরে আসে মাদার আলীর।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।