বস্তাগুলো উঠাতে দেখে পেছনের বগিতে থাকা খুলনা রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আসামাত্রই চোরাকারবারীদের প্রধান যুবকের সঙ্গে চললো কানাঘুষা। এরপর পুলিশ সদস্যরা ট্রেনের সিটে গিয়ে বসলে তাদের সামনেই ট্রেনের সিলিং ফাঁকা করে ছাদের পাটাতনে ঢুকে গেলো দুই শিশু।
নাম না প্রকাশের শর্তে চোরাচালান দলের এক সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, ১৫-২০টি বস্তায় অন্তত অর্ধকোটি টাকার ভারতীয় শাড়ি ও থ্রি-পিস রয়েছে। ওই মালামালের মালিকের বাড়ি নাভারণে। মালামালগুলো খুলনা নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত খুলনা জিআরপি পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভাই আমি ভালো কাজ করি, সম্প্রতি এক নারীর গহনা কুড়িয়ে পেয়ে তাকে ফেরত দিয়েছি। ’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীমান্তপথে চোরাচালানের মাধ্যমে আনা ভারতীয় পণ্যের বড় বড় চালান নাভারণ রেলস্টেশন কিংবা ঝিকরগাছা এলাকায় নিয়ে জড়ো করা হয়। এরপর বেনাপোলগামী ট্রেনে তুলে অল্প সময়ের মধ্যেই ট্রেনের সিলিং কিংবা ফাঁকফোকরে ঢুকিয়ে ফেলে চোরাচালানিরা। এরপর ট্রেনটি বেনাপোল থেকে বিকেল সাড়ে ৩টায় খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে গেলে চোরাচালানের মালামালও নিরাপদে খুলনা কিংবা যশোরে পৌঁছে যায়। এতে বেনাপোল রেলস্টেশনে দায়িত্বপালনকারী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কিংবা অন্য কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আসে না।
জানা গেছে, রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) ঘুষ বাণিজ্যে ও তাদের আশকারায় বেনাপোল-যশোর-খুলনা রুটে চলাচলকারী কমিউটার ট্রেন এখন চোরাচালানিদের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। এই রুটের কমিউটার ট্রেনে অবাধে চোরাচালান করতে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ট্রেনগুলোত প্রতিদিন পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মাদক, অস্ত্র, সোনা, কাপড়, কিসমিস, নিম্নমানের চা পাতা, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য। চোরচালানিদের দৌরাত্ম্যে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। এ বিষয়ে জানা শর্তেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয় না।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ৬টায় একটি কমিউটার ট্রেন খুলনা থেকে বেনাপোলের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। বেনাপোল থেকে যশোর হয়ে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল ৯টায়। অপর একটি ট্রেন খুলনা থেকে বেলা ১২টায় ছেড়ে বেনাপোলে পৌঁছে আড়াইটায়। বিকাল সাড়ে ৩টায় ট্রেনটি বেনাপোল থেকে ছেড়ে যশোর ও খুলনার উদ্দেশে রওনা হয়। পথিমধ্যে বেনাপোল, নাভারণ, ঝিকরগাছা, যশোর ও নওয়াপাড়া থেকে চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা ট্রেনে উঠে বেনাপোলে গিয়ে ফিরতি ট্রেনে বস্তায় করে বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য ছাড়াও মাদকদ্রব্য নিয়ে আসে। এতে ট্রেনের বগিগুলোর অধিকাংশ জায়গা দখল করে রাখা হয়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন এ রুটে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবৈধভাবে আনা এসব পণ্য বহনে ব্যবহার করা হয় নারীদের। কোনো কোনো নারী টাকার বিনিময়ে আবার কেউ নিজেরাই সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে কাজ করছে।
সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রেনে দায়িত্বরত জিআরপি পুলিশ বিষয়টি জেনেও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয় না। টহলরত পুলিশ চোরাচালানিদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েই সন্তুষ্ট। ফলে চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা উল্টো যেন তাদের মালপত্রই পাহারা দেয় রেল পুলিশ!
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
ইউজি/আরআর