ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতিবন্ধীদের মূলধারায় আনতে মিরপুরে ‘সুবর্ণ ভবন’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৯
প্রতিবন্ধীদের মূলধারায় আনতে মিরপুরে ‘সুবর্ণ ভবন’

ঢাকা: জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে আগামী ৫ ডিসেম্বর মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স ‘সুবর্ণ ভবন’ উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।

তিনি বলেন, মিরপুরস্থ জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন চত্বরে ১৫ তলাবিশিষ্ট ‘সুবর্ণ ভবন’ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

এই ভবনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ, পুনর্বাসন ও আবাসিক সুবিধা দেওয়া হবে। ৩০০ ছেলে ও ৩০০ মেয়ে প্রতিবন্ধীকে শিক্ষা দেওয়া ও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে।

মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে ২৮তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২১তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব ইসমাইল হোসেন, প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার উপস্থিত ছিলেন। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘অভিগম্য আগামীর পথে’।

সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য নেওয়া সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের ওপর আরোপিত বাধা, কুসংস্কার ও নেতিবাচক ধ্যানধারণা দূরীকরণে আমরা সচেষ্ট। তাদের ক্ষমতায়নে সরকার শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসাসহ নানা ধরনের সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। মানবসম্পদ হিসেবে প্রতিবন্ধীদের মেধা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের উন্নয়নের মূলধারায় আনতে আমরা সচেষ্ট। সেজন্য মিরপুরে ১৫ তলাবিশিষ্ট সুবর্ণ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে আট ধরনের প্রতিবন্ধীদের জন্য সুব্যবস্থা থাকবে।

তিনি বলেন, সুবর্ণ ভবনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে ডিজেবল কেয়ার ইউনিট, ইনপেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট, অটিজম রিসোর্স সেন্টার, নিউরো ডেভেলপমেন্টাল সমস্যাযুক্ত ব্যক্তির থেরাপিভিত্তিক সেবা ও কাউন্সিলিং, কারিগরি ও সাধারণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য স্পেশাল স্কুল ফর চিলড্রেন উইথ অটিজম, অন্যান্য প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ইনক্লুসিভ স্কুল এবং ডে কেয়ার সেন্টার।

‘এছাড়া রয়েছে শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা, ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দাপ্তরিক কক্ষ, লাইব্রেরি, মাল্টিপারপাস হল, কনফারেন্স রুম, ক্যাফেটেরিয়া, নামাজের স্থান এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উৎপাদিত বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রীর প্রদর্শন ও বিক্রয় ব্যবস্থা। ’

নুরুজ্জামান বলেন, সরকার ১২ ধরনের প্রতিবন্ধী নিয়ে কাজ করছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৭ লাখ (১৬ লাখ ৭৯ হাজার) প্রতিবন্ধী রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে প্রায় শতভাগ প্রতিবন্ধীদের ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। তাদের প্রতিমাসে ৭৫০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ৭০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত উপবৃত্তি দেওয়া হয়। বছরে এক লাখ প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রী এই সুবিধা পেয়ে থাকে।

‘বর্তমানে ১০ লাখ প্রতিবন্ধীর জন্য বরাদ্দ করা প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ হলো ৮৪০ কোটি টাকা এবং ২০০৮-৯ অর্থবছরের চেয়ে ভাতাভোগী পাঁচ গুণ বেড়েছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য বাজেট বাড়ানো হয়েছে ১৪ গুণ এবং জনপ্রতি ভাতার পরিমাণ বেড়েছে ২ দশমিক ৮ গুণ । ’

তিনি আরও বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ লাখ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য উপবৃত্তির বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে ৮০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে বাজেটের পরিমাণ বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩৯ গুণ এবং ভাতাভোগী বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৯ গুণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ করা বয়স্কভাতার পরিমাণ হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং ভাতা পাচ্ছেন ৪০ লাখ বয়স্ক মানুষ। ভাতাভোগী এ সংখ্যা ২০০৮-৯ অর্থবছরের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে। বাজেট বেড়েছে ৪ গুণ এবং জনপ্রতি ভাতার হারও বেড়েছে দ্বিগুণ।

প্রতিবন্ধী আইন ও অধিদপ্তর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী আইনের খসড়া তৈরি হয়ে গেছে। এখন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। তারা মত দিলে একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে কেবিনেটে পাটানো হবে।  যেকোনো আইন তৈরি করতে এমনিতেই দুই বছর সময় লাগে।

এছাড়া শিগগিরই প্রতিবন্ধী অধিদপ্তর ঘোষণা করা হবে বলেও জানান সমাজকল্যাণমন্ত্রী।

উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করতে আওয়ামী লীগ সরকারই ১৯৯৯ সালে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে। এরপর থেকে এ ফাউন্ডেশন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

২০১০ সালের ২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ক্যাম্পাসে ‘অটিজম রিসোর্স সেন্টার’র শুভ উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি সেখানে একটি করে প্রতিবন্ধী কর্মজীবী পুরুষ ও নারী হোস্টেল, প্রতিবন্ধী শিশু নিবাস ও অটিস্টিক স্কুলও চালু করা হয়েছে।  

এছাড়া অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর অভিভাবকদের শিশুর প্রাত্যহিক লালন-পালনের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ নানারকম সেবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

ফাউন্ডেশনের ক্যাম্পাসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শ্রবণ, বুদ্ধি ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বিদ্যালয়ও চালু রয়েছে। সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আবাসিক সুবিধাও।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৯
জিসিজি/এসএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।