রোববার (১৫ ডিসেম্বর) প্রকাশিত তালিকার মধ্যে রাজশাহী বিভাগে রয়েছে এক থেকে ১৫৪টি তালিকা। এসব তালিকায় কয়েকশ’ ব্যক্তির নাম রয়েছে।
আশ্চর্যজনকভাবে ৮৯ নম্বর তালিকায় (ক্রমিক নম্বর ৬০৬) নাম এসেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর রাজশাহীর কৃতিসন্তান অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুসহ পাঁচজনের। অথচ এই পাঁচজন এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ৭১’র যুদ্ধের সময় থেকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও আদর্শের মানুষ। ফলে এ তালিকা নিয়ে দেখা দিয়েছে অসঙ্গতি।
স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকাটিতে নাম রয়েছে তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অ্যাডভোকেট মহসিন আলীর। নাম এসেছে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামেরও। তার পরিবারের পাঁচ সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত হন। ওই সময় আব্দুস সালাম পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসরদের ভয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে অবস্থান করেন।
৮৯ নম্বর তালিকায় থাকা পাঁচজনের মধ্যে বাকি দু’জন হলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ ও পুলিশ কর্মকর্তা এস এস আবু তালেব। যদিও এই তালিকার মন্তব্যের ঘরে লেখা রয়েছে তাদের অব্যাহতি দিতে জেলা কমিটি আবেদন করেছিল। এর বাইরে আর কোনো তথ্য নেই। সেই হিসেবে ধরা যায়, এই পাঁচ ব্যক্তি রাজাকার বা স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন না বলেই তাদের অব্যাহতি দিতে আবেদন করা হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক ওয়ালিউর রহমান বাবু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন তাদের নাম যদি এই তালিকায় ভুলক্রমেও এসে থাকে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। সময় নষ্ট না করে বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে প্রকাশিত তালিকা সংশোধনের দাবি জানান তিনি।
এদিকে, তালিকায় এসব ব্যক্তির নাম যেভাবেই আসুক না কেন সেটি লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের পরিবারের সদস্য কবি আরিফুল হক কুমার। তিনি বলেন, এসব ব্যক্তির নাম কেন এই তালিকায় আসবে? যারা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন, আবার যিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর—তার নাম কীভাবে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়? ভুল তথ্য যাচাই-বাছাই করে দ্রুত তালিকা সংশোধনের দাবি জানান তিনি।
যদিও প্রকাশিত তালিকায় প্রকৃত স্বাধীনতাবিরোধীদের অনেকেরই নাম রয়েছে। এদের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন ডিন আহম্মেদ মোহাম্মদ প্যাটেল (বর্তমানে কানাডায় রয়েছেন), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন, ড. মোহাম্মদ ওয়াসিম, জিল্লুর রহমান, রাজশাহী মহানগরীর খোরশেদ আলম, আব্দুস সোবহান, খন্দকার আব্দুল বাকিসহ আরও অনেকে রয়েছেন। আবার নাম রয়েছে কিন্তু ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি এমনও রয়েছেন বেশ কয়েকজন।
৪১ নম্বর তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, রাজশাহী বিভাগের নটোর জেলার সিংড়া থানার অন্তর্গত ভুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল আজিজের রাজাকার ও দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। কিন্তু কাদের নামে অভিযোগ করা হয়েছিল তা নেই তালিকায়। একই অবস্থা আরও কয়েকটি ক্রমিক নম্বরে। ৪৪ নম্বর তালিকায় রাজশাহীর রাজাকার খোরশেদ আলমের মাধ্যমে দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা বলা হলেও বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি।
রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক আহম্মেদ শফিউদ্দিন বলেন, ৭১-এ স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধাদের দুষ্কৃতকারী মনে করতো রাজাকাররা। তাহলে রাজাকার খোরশেদের করা অভিযোগ কী ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে? যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে এটি হাস্যকর। যদিও আমি তালিকাটা দেখিনি।
রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের দাবি, তালিকাটি সম্পূর্ণ নয়। এটি ওই সময়ের তালিকার একটি খসড়া হতে পারে। আবার কপি-পেস্টও হতে পারে। কোনো অনুসন্ধান ছাড়াই নামগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তাই এ তালিকা সংশোধন জরুরি হয়ে পড়েছে।
এর আগে, রোববার (১৫ ডিসেম্বর) একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পথঘাট চেনাতে ও মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে, তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রথম দফায় ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকার, আলবদর ও আলশামসের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এদিন সকালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যদের নামের তালিকা প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। অন্যদের নামের তালিকাও শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯
এসএস/একে