ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩১, ১৮ জুন ২০২৪, ১০ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

মানুষের সহায়তায় স্বামীকে বাঁচানোর স্বপ্ন দেখছেন স্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২
মানুষের সহায়তায় স্বামীকে বাঁচানোর স্বপ্ন দেখছেন স্ত্রী

ফেনী: ‘নিজের কিডনি দিয়ে স্বামীকে বাচাঁতে চান, সম্ভব হচ্ছে না টাকার অভাবে!’ শিরোনামে সম্প্রতি বাংলানিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর অর্থ সহায়তা পেতে শুরু করেন কিডনির জটিল রোগে আক্রান্ত ফেনীর আবদুল গণি আরিফ।

মানুষের সহায়তায় স্বামীকে বাঁচানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন স্ত্রী জান্নাত।

তার চিকিৎসার জন্য এক লাখ টাকা অর্থ সহায়তা পাঠিয়েছে আমেরিকার জর্জিয়ার রাজধানী আটলান্টা ওয়েরফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সভাপতি ও আটলান্টা সিনিয়র ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সিনিয়র সদস্য গিয়াস ভূইয়া এ অর্থ সহায়তা পাঠান।  

বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ফেনী পৌরমেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী আনুষ্ঠানিকভাবে টাকার চেক হস্তান্তর করেন। এসময় মেয়র তার নিজস্ব তহবিল থেকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, সময় টিভির ফেনী ব্যুরো অফিসের সিনিয়র রিপোর্টার আতিয়ার সজল, ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম, বাংলানিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক সোলায়মান হাজারী ডালিম, ডিবিসি টেলিভিশনের চিত্র সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবক দুলাল তালুকদার।  

এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আরও অনেকে বিকাশ এবং নগদে অর্থ সহায়তা প্রদান করে। আরিফের চিকিৎসার জন্য মোট ২৫ লাখ টাকা খরচের কথা জানিয়েছে ডাক্তার। গত কযেকদিনে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা এসেছে। বাকি টাকা জোগাড় হলে তার পরিপূর্ণ চিকিৎসা হবে।  

আরিফকে সহযোগিতা করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন ৮৮০১৮১৮৮২৫৬৩৫ এই নাম্বারে। পাঠাতে পারেন অর্থ সহায়তা ওই নাম্বারে রয়েছে বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট। এছাড়াও অর্থ সহায়তা পাঠোতে পারেন- এমডি আব্দুল গণি, সোনালী ব্যাংক, মহিপাল শাখা, ফেনী
অ্যাকাউন্ট N0- 4010501004760

উল্লেখ্য ২০১৫ সালে আবদুল গণি আরিফের ধরা পড়ে জটিল কিডনি রোগ। গত চার বছর ধরে প্রতি সপ্তাহে দুইবার করে নিতে হচ্ছে ডায়ালাইসিস। এ কয়েক বছরে চিকিৎসার জন্য খরচ হয়েছে অর্ধকোটি টাকা। প্রতিক্ষণে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন আরিফ। তবুও থেমে যেতে চায় না তার স্ত্রী জান্নাত। নিজের একটি কিডনি দিয়ে হলেও স্বামীকে সুস্থ করতে চান তিনি। আর কিছু নয় স্বামীর সঙ্গে বাকিটা জীবন তিনি সুন্দরভাবে কাটাতে চান।  

স্বামীকে বাঁচানোর তার এই চেষ্টায় একমাত্র বাধা টাকা। তিনি নিজে স্বামীকে একটি কিডনি দিলেও তা ট্রান্সপ্লান্ট করতে ব্যয় হবে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে দীর্ঘদিনের চিকিৎসায় খরচ হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এখনও প্রতি সপ্তাহে ডায়ালাইসিস ও ওষধ খরচ মিলিয়ে ১০ হাজার টাকার ওপর খরচ হয়। আত্মীয় স্বজন ও স্বামীর বন্ধু-সহপাঠীদের সহযোগিতা নিয়ে তিনি যোগান দিচ্ছেন এ খরচ। সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা পেলে স্বামীকে একটি কিডনি দিয়ে তা ট্রান্সপ্লান্ট করে সুস্থ করে তুলতে চায় জান্নাত।  

জান্নাত বলেন, পারিবারিকভাবেই তাদের বিয়ে হয়। ২০১৫ সালে বিয়ে হওয়ার কিছুদিন পরেই স্বামীর কিডনি রোগ ধরা পড়ে। এরপর থেকে তা ধীরে ধীরে করুণ পরিণতির দিকে যেতে শুরু করে। গত চার বছর ডায়ালাইসিস দিয়ে কোন রকমে বেঁচে আছেন তার স্বামী। স্বামী অসুস্থ হওয়ায় দীর্ঘ প্রায় ৭ বছরের বৈবাহিক জীবনে তাদের কোন সন্তান হয়নি। পরিবারের সম্মত না থাকলেও জান্নাত স্বামীকে একটি কিডনি দিতে চান এবং বাকি জীবন স্বামীর সঙ্গে থাকতে চান।  

ফেনী পৌর শহরের মহিপাল মধ্যম চাড়িপুর এলাকার আব্দুল গণি আরিফ, ৩৪ বছরের টগবগে তরুণ। অথচ এই বয়সে তার শরীরের দুটি কিডনিই প্রায় অকেজো। গত চার বছর ধরে তিনি নিয়মিত সপ্তাহে দুটি ডায়ালাইসিস নিয়ে বেঁচে আছেন।  কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায়, তার পরিবারের পক্ষে সেই ব্যয় বহন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তাই জীবন বাঁচানোর করুণ আকুতি নিয়ে আরিফ বলেন, ‘সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে হয়তো সুস্থ হয়ে পৃথিবীর আলো উপভোগ করতে পারবো। ’  

আরিফ বলেন, ‘আমি ২০১৫ সাল থেকে কিডনির সমস্যায় ভুগছি। ২০১৫ সাল থেকেই আমি ঢাকা কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল থেকে ডা. হারুন আর রশিদ এবং ডা. সাকিবঊজ্জামান আরেফিনের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিয়ে আসছি। আমার দুটি কিডনিই বিকল এবং আমি ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে বেঁচে আছি। এখন ডাক্তারের পরামর্শ মতে আমার সুস্থ জীবনে ফিরে আসার একমাত্র উপায় হলো কিডনি প্রতিস্থাপন করা, যা অনেক ব্যয়বহুল এবং জটিল। আমার চিকিৎসার খরচ বহন করা আমার পরিবারের একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ’  

আরিফের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য একমাত্র উপায় কিডনি প্রতিস্থাপন। এজন্য প্রায় ২৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। তার স্ত্রী একটি কিডনি দান করতে রাজি হয়ে ফেনীর প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অঙ্গীকারনামায় সই করেছেন। কিন্তু টাকার অভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে না।

আরিফ বলেন, ‘দিন দিন আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করতে না পারলে, আমি আর বাঁচবো না। বেঁচে থাকার জন্য তিনি সমাজের সবার কাছে ভালোবাসা ও  চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চান। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।