খুলনা: খুলনায় নির্যাতিতদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক সংহতি দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে র্যাব ও পুলিশের হাতে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা নির্যাতনকারীদের শাস্তি এবং নিজেদের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
নির্যাতিতদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক সংহতি দিবসে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ খুলনা ইউনিটের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তারা এ দাবি জানান।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব ও দিবসের বিবৃতি পাঠ করেন অধিকার খুলনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান। পরিচালনা করেন অধিকার’র ডিফেন্ডার সিনিয়র সাংবাদিক জিয়াউস সাদাত।
এ সময় বক্তারা বলেন, আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কোনভাবেই সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালাতে পারে না। সেটি গ্রেফতারের সময় হোক বা গ্রেফতারের পরে থানায় নিয়ে অথবা রিমান্ডে নিয়ে হোক। কিন্তু বিগত দিনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের দমন-পীড়ন এবং ভিন্নমত দমনের জন্য গুম, নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড চালিয়েছে। পতিত শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও আইন-শৃংখলা বাহিনীর মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। বক্তারা অবিলম্বে নির্যাতনকারী আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের শাস্তি এবং নির্যাতিতদের ক্ষতিপূরণ দিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান জানান।
মানববন্ধন চলাকালীন সমাবেশে বক্তৃতা করেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নুরুল হাসান রুবা, শিক্ষাবিদ ও নারী নেত্রী রেহানা আক্তার, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক নির্বাহী সদস্য ও খুলনা প্রেস ক্লাবের নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক শেখ দিদারুল আলম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহকারী মহাসচিব ও দৈনিক আমার দেশের খুলনা ব্যুরো প্রধান এহতেশামুল হক শাওন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক নির্বাহী সদস্য ও কালেরকণ্ঠের খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন, গণসংহতি আন্দোলনের খুলনা জেলা শাখার আহবায়ক মুনীর চৌধূরী সোহেল, খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার, পরিবেশ সংগঠন ছায়াবৃক্ষের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আলম বাদশা, পুলিশ কর্তৃক দুই চোখ উপড়ানো যুবক মো. শাহাজালাল হাওলাদার,র্যা ব কর্তৃক গুমের শিকার হয়ে ফেরত আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. ইমরান হোসেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে আহত মো. শহিদুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খুলনা জেলা ব্লাড ব্যাংকের সভাপতি শেখ ফারুক।
উপস্থিত ছিলেন একুশে টেলিভিশনের প্রতিনিধি ও খুলনা প্রেস ক্লাবের নির্বাহী সদস্য আশরাফুল ইসলাম নূর, প্রধান শিক্ষক মো. রবিউল ইসলাম, শিক্ষক মো. আব্দুল জব্বার, পুলিশ দুই চোখ উপড়ানো যুবক মো. শাহাজালাল হাওলাদারের স্ত্রী রাহিলা বেগম, সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে গুমের শিকার রুহুল আমিন খান ও আহসান হাবিব খানের ভাই মো. সাইজিদ হোসেন খান, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক মো. জামাল হোসেন, মিশারুল ইসলাম মনির, এম এ আজিম, অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক মাসুম বিল্লাহ ইমরান, সাখাওয়াত হোসেন স্বপন, ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল রিপন, সাংবাদিক এম রুমানিয়া, তৈয়ব আলী পর্বত প্রমুখ।
মানববন্ধনে অধিকার’র তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৮২ ব্যক্তি নির্যাতনের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে ২০২৪ এর ৯ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ২০ জুন পর্যন্তও ১০ ব্যক্তি নির্যাতনে মারা গেছেন। নির্যাতনের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে দায়মুক্তির সংস্কৃতি চালু থাকা এবং এটি বন্ধে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩- এর বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার হেফাজতে নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের ঘটনাগুলো অব্যাহতভাবে ঘটছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা একে প্রকট করে তুলেছে।
এমআরএম