পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কারাক জেলায় পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে গত শুক্রবার ১৭ টিটিপি সদস্য নিহত হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশি এক তরুণ রয়েছেন।
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) হয়ে যুদ্ধ করছিলেন তিনি।
দর্শখেলের শাহ সেলিম থানার কাছে সেনাবাহিনীর চালানো অভিযানে ওই তরুণ নিহত হন। গতকাল রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই তরুণের পরিচয় ছড়িয়ে পড়লে জনমনে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, নিহত ফয়সাল মাদারীপুরের কালিকাপুর ইউনিয়নের ছোট দুধখালী গ্রামের আউয়াল মোড়লের ছেলে। প্রায় দুই বছর আগে পরিবারের কাছে দুবাই যাওয়ার জন্য টাকা চান তিনি। তবে পরিবার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে হঠাৎ একদিন 'নিখোঁজ' হয়ে যান ফয়সাল। এর প্রায় ছয় মাস পর ফয়সাল তার বড় ভাই আরমান মোড়লকে মোবাইল ফোনে জানান, তিনি দুবাই চলে এসেছেন। এবং এখানে ভালো আছেন। নানা উপায়ে টাকা সংগ্রহ করে দুবাই এসেছেন জানিয়ে তার জন্য চিন্তা না করতে বলেন পরিবারকে।
বাড়িতে থাকা অবস্থায় ফয়সাল টুপি-তসবি বিক্রি করতেন এবং খুব কম খরচ করতেন। ধারণা করা হচ্ছে বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকা জমাতেন তিনি।
এদিকে নিহত ফয়সালের ছবি দেখে মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেন তার চাচা আব্দুল হালিম মোড়ল। তবে তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ফয়সালের বয়স ২১-২২ বছর। পরিবারের সহযোগিতায় দুবাই যেতে চেয়েছিলেন। পরিবার সম্মত হয়নি। পরে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে দেশ ছেড়ে চলে যান তিনি। দেশে থাকতে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলা ফয়সাল হাটবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে তাসবিহ, টুপি, আতরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় বইপত্র ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বিক্রি করতেন।
গত ঈদুল আজহার সময় মাদারীপুরের গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা খোঁজ-খবর নিতে ফয়সালদের বাড়ি যান। তখন পরিবার জানতে পারে, ফয়সাল আফগানিস্তান আছেন। গতকাল (রোববার) সকালে ফয়সালের পরিবারের সদস্যরা পাকিস্তানে তার মৃত্যুর খবর জানতে পারেন।
ফয়সালের চাচা হালিম মোড়ল বলেন, ‘ভাতিজার বিষয়ে জানতে পারি গত ঈদুল আজহার সময়। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, সে আফগানিস্তান আছে। ২০২৪-এর মার্চে দেশ ছাড়ার প্রায় ৬ মাস পরে তার বড় ভাই আরমান মোড়লের কাছে মোবাইল ফোনে কল করে জানায়, দুবাই আছে এবং ভালো আছে। তবে বিস্তারিত জানতে চাইলে জবাব দিত না সে। ’
পাকিস্তানি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নিহত বাংলাদেশির কাছ থেকে পরিচয়পত্র, টাকা এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পাওয়া গেছে। অভিযানে ১৭ জঙ্গি নিহত হয়।
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে বাংলাদেশের মাদারীপুরের এই তরুণ নিহত হওয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে জেলাজুড়ে সমালোচনা ছড়িয়ে পড়েছে।
আরএ