কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হাজার হাজার প্রার্থী, নিয়োগের দাবি জানাতে বুধবার (৯ নভেম্বর) কলকাতার রাজপথে নেমেছিল। চাকরিপ্রত্যাশীদের পুলিশ বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) তাদের কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হয়। ধৃতদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। তারপর মুহূর্তে উত্তাল হয়ে ওঠে কলকাতার আদালত কক্ষ। চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী ইয়াসিন রহমান বলেন, পুলিশ যাকে কামড়েছেন তিনি লক আপে। অথচ যিনি কামড়েছেন, তিনি হাসপাতালে শুয়ে আছেন। কোন যুক্তিতে তাদের পুলিশ হেফাজত চাইছে?
সরকার পক্ষের আইনজীবীর দাবি, আন্দোলন করার অধিকার সকলের আছে। কিন্তু গতকাল আন্দোলনের নামে হিংসাত্মক হয়ে উঠেছিল বলেই পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। পুলিশের যা কর্তব্য, পুলিশ তাই করেছে।
এরপরই চাকরিপ্রার্থীদের অপর এক আইনজীবী অমিত হালদার বলেন, তাদের কাছ থেকে কি লাঠি পাওয়া গিয়েছে? কামড়েছে তো পুলিশ। রক্ষকই তো এখানে ভক্ষক হয়ে গিয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণই ছিল। পুলিশই আক্রমণাত্মক হয়ে লাঠিচার্জ করেছে। চাকরিপ্রার্থীরা আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা তাদের জামিনের আবেদন করছি। এরপরই বিচারক শৌনক মুখোপাধ্যায় সবার জামিন মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে বাম আমলে নন্দীগ্রামে গুলি চালনার ঘটনার পর কলকাতার রাজপথে নেমেছিলেন বাংলার বিদ্বজনেরা। সেই সময় পুলিশি অত্যাচারের ঘটনা ঘটলেই প্রতিবাদে সোচ্চার হতেন বুদ্ধিজীবীরা। তাদের অনেককেই পাশে পেয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু, ‘বদলা নয় বদল চাই’ সেই পরিবর্তনের ১১ বছর পর চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলনে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিরক্ত মমতা ঘনিষ্ঠ বিদ্বজনেদের একাংশ। আন্দোলনকারীদের দাবী সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত বলেও মন্তব্য করছেন অনেকে।
পুরাতত্ত্ববিদ নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ি বলেন, একটা চাকরির জন্য আন্দোলন কোন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। তা দেখতে পাচ্ছি। কামড়াকামড়ি পর্যন্ত গিয়েছে। রাজ্য সরকারের ভালই দোষ আছে। আমার মনে হয়, এই সব বিষয়ে নিয়ে কামড়াকামড়ির প্রয়োজন নেই। আদালত দেখছে ব্য়পারটা। আমি শুধু বলব, তারা আদালতে যাক, গিয়ে বলুক তারা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে পারবে কি পারবে না!
শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, পুলিশ এখন অস্ত্র ছেড়ে দিয়ে নখ-দাঁতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। সেটাই তো খুব আশ্চর্যের ব্যাপার। আমরা পশুদের সম্বন্ধে বলে থাকি, নখি-দন্তী প্রাণী, কিন্তু এখন দেখছি পুলিশও নখ-দাঁত ব্যবহার করছে। এটাই অবাক লাগছে।
আন্দোলনকারীদের সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন শাসক দলের কবি ও অধ্যাপক সুবোধ সরকার। দ্রুত সমস্যার সমাধান করার কথা বলেছেন তিনি। তার অভিমত, সবাই সহানুভূতিশীল হয়ে কাজ করবেন আশা করি। সবাই মিলে এই ছেলেমেয়েগুলির দিকে তাকিয়ে সমস্যার সমাধান করা উচিত বলে আমি মনে করি। মহামান্য আদালত এ বিষয়ে দৃষ্টিপাত করুক।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২২
ভিএস