মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ সংস্থা ব্ল্যাকরকের কাছে পানামা খালের দুটি প্রধান বন্দর বিক্রি করতে সম্মত হয়েছে হংকংভিত্তিক কোম্পানি সিকে হাচিসন।
বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হংকংভিত্তিক কোম্পানি সিকে হাচিসন ২ হাজার ২৮০ কোটি ডলারের বিনিময়ে বন্দর দুটির সিংহভাগ শেয়ার বিক্রি করতে রাজি হয়েছে।
সিকে হাচিসন হোল্ডিংস জানিয়েছে, তারা হাচিসন পোর্ট হোল্ডিংস এবং হাচিসন পোর্ট গ্রুপ হোল্ডিংসের সব শেয়ার ব্ল্যাকরক কনসোর্টিয়ামের কাছে বিক্রি করবে। চুক্তিটির মোট মূল্য প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার দায়-দেনাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাছাড়া ২৩টি দেশে অবস্থিত কোম্পানিটির মোট ৪৩টি বন্দর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে পানামা খালের দুটি টার্মিনালও রয়েছে। ব্ল্যাকরক পানামায় দুটি বন্দরের মালিকানা ও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের ৯০ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করবে।
পানামা খালে চীনা প্রভাব নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট চাপের কারণে হংকংয়ের কোম্পানি তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে বলে ট্রাম্প প্রশসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও সেই দাবি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো।
পানামা সরকার বলছে, তারা পানামা খালের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই রেয়েছে এবং হংকংভিত্তিক গ্রুপের বন্দরের পরিচালনা কখনোই জলপথের ওপর চীনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে না। তাই, একটি মার্কিন কোম্পানির কাছে বিক্রির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পুনরুদ্ধার’ দাবি করার কোনো ভিত্তি নেই। পানামা সরকার এই বিক্রিকে একটি বেসরকারি লেনদেন হিসেবেই দেখছে।
বুধবার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় মুলিনো লেখেন, এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে হয়নি। তিনি লিখেছেন, পানামা এবং সমস্ত পানামীয়দের পক্ষ থেকে আমি এই নতুন মিথ্যাচার এবং আমাদের জাতির মর্যাদার প্রতি আঘাতটি অস্বীকার করছি।
তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প আবারও মিথ্যা বলছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯০০ সালের শুরুতে পানামা খালটি নির্মাণ করেছিল, যাতে তাদের বাণিজ্যিক এবং সামরিক জাহাজ দুই উপকূলের মধ্যে সহজে চলাচল করতে পারে। পরে, ওয়াশিংটন ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর, প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার কর্তৃক স্বাক্ষরিত ১৯৭৭ সালের এক চুক্তির অধিনে খালের নিয়ন্ত্রণ পানামার হাতে তুলে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্পের দাবি কার্টার ‘অবুঝভাবে’ খালটি পানামাকে হস্তান্তর করেছিলেন।
গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ের পর কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ বলে দাবি করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প অভিযোগ করে আসছেন, পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ চীনের হাতে চলে গেছে। তিনি হুমকি দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র জলপথটি আবারও নিয়ন্ত্রণে নেবে। ট্রাম্প প্রশাসন পানামাকে চীনা প্রভাব কমানোর জন্য চাপ দেওয়ার পাশাপাশি দাবি করে, বন্দরে বেইজিংয়ের সম্পৃক্ততা খালের নিরপেক্ষতাসংক্রান্ত চুক্তি লঙ্ঘনের শামিল।
সূত্র: বিবিসি
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২৫
এমএম