যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে ঘোষণা করেছেন, কাতারের ওপর আবার কোনো দেশ আক্রমণ চালালে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে। প্রয়োজনে প্রতিশোধমূলক সামরিক পদক্ষেপও নেবে।
বুধবার (১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারের সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
খবরে বলা হয়, ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাসে নেতারা কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থান করছেন, এমন অজুহাতে গত মাসে বিমান হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। এ হামলায় হামাসের কয়েকজন সদস্য নিহত হন, তবে শীর্ষ নেতারা রক্ষা পান। এক কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তাও নিহত হন।
ইসরায়েলের দাবি ছিল, দোহায় অবস্থানকারী হামাস নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারের মধ্যস্থতায় বৈঠক করছিলেন।
এ ঘটনার আঞ্চলিক ও বৈশ্বিকভাবে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘কাতারে কেউ হামলা চালালে পাল্টা হামলার’ ঘোষণাটি এলো।
গত সোমবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের সময় যৌথ ফোনালাপে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান বিন জাসিম আল থানির কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। কাতারি নাগরিক হত্যার জন্য ক্ষমা চান তিনি।
সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা, অভিন্ন স্বার্থ এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সম্পর্ক দ্বারা আবদ্ধ। ’ তিনি কাতারকে ‘শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির পথে দৃঢ় মিত্র’ হিসেবে আখ্যা দেন। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রকে দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংঘাতের মধ্যস্থতায় সহায়তা করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।
ট্রাম্প বলেন, এই ইতিহাসের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং কাতারের বিরুদ্ধে চলমান বিদেশি আগ্রাসনের হুমকি বিবেচনায়, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হলো কাতারের নিরাপত্তা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা বাহ্যিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করা।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, ‘কাতারের ভূখণ্ড, সার্বভৌমত্ব বা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর যেকোনো সশস্ত্র আক্রমণকে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হিসেবে গণ্য করা হবে। ’
গত ৯ সেপ্টেম্বর দোহায় ইসরায়েলি হামলার পর ওয়াশিংটন একদিকে কাতারের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করেছে, অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রতি তাদের ‘আয়রনক্ল্যাড’ সমর্থনও বজায় রেখেছে। কাতার সেই হামলাকে আখ্যা দিয়েছিল ‘কাপুরুষোচিত’ ও ‘বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ’ বলে।
হামলার এক সপ্তাহ পর, গত ১৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দোহায় পৌঁছান। তার আগের দিন দোহায় অনুষ্ঠিত জরুরি সম্মেলনে আরব ও ইসলামি নেতারা কাতারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছিলেন।
এক্সে পোস্টে রুবিও লিখেছিলেন, তিনি কাতারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র-কাতার নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি যৌথ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আলোচনার পর কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, তাদের দেশ সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বদ্ধপরিকর এবং ভবিষ্যতে কোনো হামলা ঠেকাতে পদক্ষেপ নেবে।
তবে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির পরিধি নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। সাধারণত, কোনো বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের অনুমোদন সাপেক্ষ। তবে রাষ্ট্রপতিরা অনেক সময় সিনেটের অনুমোদন ছাড়াই চুক্তিতে প্রবেশ করেছেন। যেমন ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ওবামার পরমাণু চুক্তি। তবুও শেষ পর্যন্ত সামরিক পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি প্রেসিডেন্টের হাতেই থাকে।
কাতার বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অংশীদার। বিশাল আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের অগ্রবর্তী ঘাঁটি রয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২২ সালে কাতারকে ‘মেজর নন-ন্যাটো অ্যালাই’ ঘোষণা করেছিলেন।
কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ ও উপসাগরীয় বিষয়ে বিশ্লেষক বাদের আল-সাইফ বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে উপসাগরের কেন্দ্রীয় অবস্থান এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এর গুরুত্ব দাবি করে যে, দেশটি কেবল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আশ্বাস বা নৈশভোজ নয়, বরং নির্দিষ্ট নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিক।
এমজে