মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর শুক্রবার (২০ জুলাই) লোকসভায় আলোচনার প্রারম্ভেই তীব্র আক্রমণ শুরু করেন রাহুল। তার আক্রমণাত্মক ভাষায় হট্টগোল শুরু হয় লোকসভায়।
এরপর ফের বক্তব্য শুরু করে রাহুল বলেন, বিজেপি-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এই চুক্তিতে হাজার হাজার কোটি রুপি লুটে নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি দেশের চৌকিদার। তিনি আসলে দুর্নীতির ভাগীদার।
মোদীকে তোপ দেগে রাহুল বলেন, আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলার হিম্মত নেই প্রধানমন্ত্রীর। ডোকলামে আমাদের সেনারা যখন চীনা সেনাদের রুখে দেয়, তখন প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্টের (শি জিনপিং) সঙ্গে দোলনা চড়েন। বিজ্ঞাপনে মুখ দেখাতে বড়লোকদের সাহায্য করেন তিনি। গরিবদের জন্য তার হৃদয়ে কোনো জায়গা নেই।
রাহুল তার বয়স কম বলে বিজেপির নেতাদের কটাক্ষের জবাবে বলেন, আপনাদের জন্য আমি পাপ্পু হতে পারি, তবে এই ধারণা আমি বদলেই ছাড়বো। ক্ষমতা হারাতে ভয় পান প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি (অমিত শাহ)। ক্ষমতা-খর্ব হলেই তাদের বিরুদ্ধে ‘অন্য প্রক্রিয়া’ শুরু হবে।
সরকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র চালনায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে কংগ্রেস সভাপতি বলেন, আপনাদের মন্ত্রীরাই সংবিধান বদলে ফেলার মন্তব্য করেন। আমরা এটা সহ্য করবো না। এই প্রথম দেশের নারীদের রক্ষা করতে ব্যর্থ রাষ্ট্র।
হট্টগোল এবং স্পিকারের বারবার ‘ভাষা সংযত’ করতে দৃষ্টি আকর্ষণের মধ্য দিয়ে রাহুল বক্তব্য শেষ করেন। তবে বড় চমক দেন তিনি এরপরই।
বক্তব্য শেষে সোজা হেঁটে চলে যান প্রধানমন্ত্রীর আসনের দিকে। আচমকাই আলিঙ্গন করেন মোদীকে। ঘটনার আকস্মিকতা সামলে রাহুলকে কানে কানে কিছু একটা বলেন প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেস সভাপতি বিরোধীদের আসনের দিকে ফিরতে গিয়েও আবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে যান। তখন দু’জনকে হাত মেলাতে দেখা যায়। রাহুলের পিঠ চাপড়ে দেন মোদী। এরপর বিরোধীদের আসনে এসে বসেন রাহুল। তখন সতীর্থ এমপিদের দিকে তাকিয়ে তাকে চোখ টিপতেও দেখা যায়।
রাহুলের এই আক্রমণ ও আলিঙ্গন-কাণ্ড সহজে নিতে পারছে না মোদীর দল বিজেপির নেতৃত্ব। ঘটনার পর কয়েকজন বিজেপি নেতা টুইট করেন। কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়া শিল্পমন্ত্রী হরসিমরত কউর বলেন, ‘এটা মুন্নাভাইয়ের ঝাপ্পি-পাপ্পির জায়গা নয়, এটা সংসদ। আজ এক নতুন কমেডি হিরোর জন্ম হল। ’ কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার কংগ্রেস সভাপতির ভাষণকে কটাক্ষ করেন ‘খোকলা’ বলে।
অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর শুক্রবার দিনভর আলোচনা হবে। সন্ধ্যায় বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। রাহুল গান্ধীর অভিযোগ নিয়েও তিনি জবাব দেবেন সেখানে। আলোচনার শেষে হবে ভোটাভুটি। অনাস্থা উতরে যাওয়ার ব্যাপারে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ এনডিএ তথা বিজেপি জোট আত্মবিশ্বাসী থাকলেও ঝাঁকুনি দেওয়ার আশায় কংগ্রেসসহ বিরোধীরা। সন্ধ্যার পরই বোঝা যাবে, অনাস্থা প্রস্তাব কতটুকু কাঁপিয়ে দিতে পেরেছে ‘মোদীর সিংহাসন’।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের কাছ থেকে ভারতের রাফালে যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগে এ অনাস্থা প্রস্তাব উঠেছে লোকসভায়। কংগ্রেস ও সমমনাদের অভিযোগ, এই চুক্তির ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ বিজর্সন দিয়ে সরকারি কোষাগারের লোকসান ঘটিয়ে বিজেপির পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তবে, মোদীর দল শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৮
এইচএ/