ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশে ২ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আসছেন।
করোনা মহামারির শুরুর পরে প্রায় দেড় বছর পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এটাই প্রথম বিদেশ সফর।
ভারত কেবল প্রতিবেশীই প্রথম- এই নীতিতে শুধু বিশ্বাসই করে না বরং সেই অনুযায়ী কাজও করে। মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোকে বিভিন্ন ইস্যুতে সহায়তা করছে। আর এটি দিন দিন বাড়ছে।
ভারতীয় সরকার পার্শ্ববর্তী দেশের- বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল, ভূটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা- মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা বৃত্তি দিচ্ছে।
এর পাশাপাশি ভারতীয় সরকার ২০১৯-২০ অর্থবছরে মালদ্বীপের মাওবাদী সরকারকে ১ হাজার ২০০ কোটি ভারতীয় রুপির অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে ভারতের অর্থায়নে ১৫০টিরও বেশি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। যা নেপালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ৩০ শতাংশ।
এদিকে, ২০২০ সালে ভারত ১৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার অর্থ সহায়তা দেয় শ্রীলঙ্কা সরকারকে। গত সেপ্টেম্বরে সেখানে মিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করেছে ভারতীয় সরকার। যেটা আগামী পাঁচ বছর চলমান থাকবে।
যুদ্ধের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত আফগানিস্তানও ভারতের প্রতিবেশীই প্রথম নীতির কারণে উপকারভোগী হয়েছে। দেশটিতে ভারতীয় সরকারের অর্থায়নে আফগান-ভারত বন্ধুত্ব বাঁধ নামে একটি জলবিদ্যুৎ এবং সেচ বাঁধ নির্মানের কাজ চলছে। এর ফলে দেশটির চিশতী শরীফ জেলার ৭৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে সেচ দেওয়া যাবে এবং একই সঙ্গে ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। বর্তমানে আফগানিস্তানে চার’শর বেশি উন্নয়ন প্রকল্প চালু রয়েছে। যেখানে ভারতীয় সরকার প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করছে।
এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগের অংশ হিসেবে ভারত পাকিস্তানকেও করোনার ভ্যাকসিন দিতে রাজি হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত প্রমাণ করেছে তারা প্রতিবেশীই প্রথম নীতিতে শুধু বিশ্বাসই করে না, বরং সেটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বাস্তবায়নও করে।
উল্লেখ্য, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ১৯৪৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিদেশ নীতি ঘোষণা করে। তবে এই নীতি উপেক্ষা করে দেশটি ১৯৪৯ সালে পূর্ব তুর্কিস্তান, ১৯৫০ সালে তিব্বত, ১৯৫৩ সালে মঙ্গোলিয়া দখল করে। এরপর ১৯৬২ সালে চীন ভারতে হামলা করে আকসাই চীনকে দখল করে নেয়। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে (বিআরআই) আঞ্চলিক দাসত্ব বিবেচনা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশটি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
অন্যদিকে, ভারতের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তিন কোটি ২৮ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ বর্গকিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তারপরও ভারত কোনো প্রতিবেশী দেশে আক্রমণ চালিয়ে দখল করেনি।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও বেশি উষ্ণ করতে নরেন্দ্র মোদি ২৬ মার্চ দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আসছেন। দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জ এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগরে অবস্থিত যোগেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করবেন।
বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে। আর এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। আর এতে ভারতীয় সরকার বিভিন্ন ইস্যুতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রতিযোগিতামূলক অর্থনৈতিক বৈশ্বিক পরিবেশে মোদির বাংলাদেশ সফর আঞ্চলিক রাজনীতির এক নতুন অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। যা দুই দেশের মধ্যে একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২১
নিউজ ডেস্ক