ফলাফল চূড়ান্ত না হলেও পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হার মোটামুটি নিশ্চিত। এতে ক্ষোভে ফুঁসছেন দলের নেতাকর্মীরা।
বর্তমান পরিসংখ্যান বলছে দুইশর বেশি আসন পেতে চলেছে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস।
এমন পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দিকে আঙুল তোলা শুরু করে দিয়েছেন পদ্মের রাজ্য নেতাদের একাংশ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের দিকে নাম করে আঙুল না তুললেও তাদের ইঙ্গিত স্পষ্ট। রাজ্যের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘সেনাপতি হয়েছিলেন যারা জিতলে তারা কৃতিত্ব নিতেন। এখন হারের দায়ও নিতে হবে। ’
তবে ভোট গণনার প্রথম পর্বে সেই স্লোগানের বদলে রাজ্য বিজেপি কার্যত ১০০ আসন পাওয়া নিয়েই শঙ্কায় রয়েছে। হারের জন্য দায়ী করে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তথা নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহর দিকে আঙুল তোলা শুরু করেছেন বিজেপির রাজ্য নেতাদের একাংশ।
সরাসরি মোদী-শাহর নাম মুখে না নিলেও রাজ্যের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘সেনাপতি হয়েছিলেন যারা জিতলে তারা কৃতিত্ব নিতেন। এখন হারের দায়ও তাদেরই নিতে হবে। ’
আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের দায়িত্ব রাজ্যের হাত থেকে নিয়ে নেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কোন এলাকায় দল কেমন অবস্থায় রয়েছে তা দেখভাল করতে কেন্দ্রীয় পাঁচ নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পরে কী কী না করেছে বিজেপি!
পাঁচটি পরিবর্তন রথ থেকে ২৯৪ কেন্দ্রে আলাদা আলাদা রথযাত্রা। কৃষক সুরক্ষা যাত্রা থেকে কৃষকদের সঙ্গে ‘সহভোজ’ কর্মসূচির পর কর্মসূচি ঠিক করেছে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে রাজ্যে সাংগঠনিক কাজে জোর দেওয়া যায়নি বলে সেই সময়েই পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির অনেক নেতা অভিযোগ তুলেছিলেন। তারা বলেছিলেন, ‘আমরা জিতলে রাজ্যের সংগঠনেই জিতব। আর হারতে হলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তামঝামের জন্য। ’
রোববার ফলের প্রাথমিক ধারণা মেলার পরেই সেই নেতারা আরও স্পষ্ট করে একই অভিযোগ তুলছেন। রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘জেলায় জেলায় অন্য রাজ্য থেকে আসা পর্যবেক্ষকরা স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি অবিশ্বাস দেখিয়েছেন। বাংলার রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা না থাকলেও নিজেদের রাজ্যের অভিজ্ঞতা বাংলায় প্রয়োগ করতে চেয়েছেন। বারবার বলেও কাজ হয়নি। যে ফল হতে চলেছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, সেটা ঠিক হয়নি। ’
বিজেপির ভেতরের পারস্পারিক দোষারোপ এখনো সামনে না এলেও এমন আলোচনাও শুরু হয়েছে যে, অনেক জায়গাতেই দলের পুরনো নেতাকর্মীদের ওপরে ভরসা না করে নবাগতদের অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য বিজেপির এক ক্ষুব্ধ নেতা বলেন, ‘প্রার্থী ঠিক করার ক্ষেত্রেও রাজ্য নেতাদের কথা অনেক সময়েই শোনা হয়নি। তাতে নিচুস্তরের কর্মীদের মনোবল ভাঙা হয়েছিল। এখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, সমর্থকদের মনোবলও ভেঙে গিয়েছিল। ’
অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটে বিজেপি-র বিপর্যয়ের কারণ জানতে চেয়েছেন অমিত শাহ। রোববার দুপুরে এ কথা জানান রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। কার্যত ভোট গণনাপর্বের মধ্যেই কৈলাস মেনে নিয়েছেন বিধানসভা ভোটে বিজেপি-র ভরাডুবি হয়েছে।
পাশাপাশি, টালিগঞ্জে বাবুল সুপ্রিয় এবং চুঁচুড়ায় লকেট চট্টোপাধ্যায়ের পিছিয়ে থাকার ঘটনাকে ‘আশ্চর্যজনক’ বলেন কৈলাস।
তিনি জানান, ভোটের পূর্ণাঙ্গ ফল মেলার পর বিজেপি নেতৃত্বের তরফে পর্যালোচনা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, মে ০২, ২০২১
এএ