ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কুয়াশা তো নয় যেন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি!

শরিফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২৩
কুয়াশা তো নয় যেন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি!

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে জেঁকে বসেছে শীত। বিকেল থেকেই বইতে শুরু করে ঠণ্ডা বাতাস আর কুয়াশা পড়া।

ভোর থেকে বেলা ১০-১১ টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলে না। আর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির মতো ঝিরঝির করে পড়তে থাকে ফোঁট ফোঁটা কুয়াশা বিন্দু। এমন কনকনে ঠাণ্ডায় চরম বিপাকে ও দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।

উত্তরের ঠাকুরগাঁও জেলা হিমালয়ের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় প্রতি বছর এখানে শীতের প্রকোপ বেশি হয়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নভেম্বর থেকে এ জেলায় শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকলেও গত কয়েক সপ্তাহ থেকে জেলায় শুরু হয়েছে ঠাণ্ডা হাওয়া ও প্রচণ্ড কুয়াশা পড়া। দুপুরে সূর্যের দেখা মিললেও রোদের কোনো তাপ থাকে না।

দিনে ও রাতে স্থানীয়সহ দূরপাল্লার যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। তারপরেও যেন হেডলাইটের আলোও কুয়াশা ভেদ করতে পাচ্ছে না। এতে দুর্ঘটনার শঙ্কায় চলাচল করছেন গাড়ি চালকরা।

তেঁতুলিয়া থেকে পাথর বোঝাই ট্রাক নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন সাহাদত হোসেন। রাত ৯টার দিকে ঠাকুরগাঁও ট্রাকটার্মিনালে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, তেঁতুলিয়া থেকে লোড ট্রাক নিয়ে ঠাকুরগাঁও আসলাম খুব কষ্ট করে। রাস্তায় এতো কুয়াশা যে হেডলাইটের আলোতেও দুই হাত দূরের কিছু ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। এতে রাস্তায় দুর্ঘটনার শঙ্কা ছিল অনেক।

ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড গোল চোত্বরে অটোচালক মানিক বলেন, আমি প্রায় ২০ বছর ধরে ঠাকুরগাঁওয়ে অটো চালাচ্ছি। এবারের মতো এমন ঘন কুয়াশা অগে কখনও দেখিনি। সকালে ও রাতে কুয়াশার কারণে অটো চালাতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। অনেক দূরঘর্টনাও ঘটছে। কিন্তু তারপরেও ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও রেনু মার্কেটের নৈশ্য প্রহরী হিরা বলেন, শীতে থাকা যাচ্ছে না। কাথা-কম্বল কিছু নাই। তাই কাঠ-খড় পুড়িয়ে আগুন পোহাচ্ছি। এভাবেই কষ্ট করে ডিউটি করছি।

প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে তেমন কেউ বের হচ্ছেন না। শীতের কারণে মাঠ-ঘাটে কাজেও যেতে পারছেন না অনেকে। এমন অবস্থায় শ্রমজীবী, দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষরা পড়েছেন চরম বিপাকে।

তবে অনেকে দরিদ্রতার কষাঘাতে নিরুপায় হয়ে শীতের মধ্যেও মাঠে-ঘাটে কাজ করছেন। সরকারের কাছে তাদের আকুতি শীতবস্ত্রের।

সদর উপজেলার মোহাম্মদপুরের ফেঁসাডাঙ্গী এলাকায় আলুর ক্ষেতে কাজ করছিলেন কয়েজন শ্রমিক। তাদের মধ্যে তমিজ উদ্দিন নামে এক বৃদ্ধ বলেন, বাবা দুঃখের কথা আর কাকে ও কি বলবো! দুই দিন থেকে গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। তারপরেও এই অবস্থায় ঠাণ্ডার মধ্যে মাঠে আসতে হয়েছে। কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না।

তিনি আরও বলেন, আমার দুই ছেলে আছে। কিন্তু তারা বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে। আমাদের বুড়া বুড়িকে (উনার স্ত্রী) তারা আর দেখে না। তাই আমরা দুইজনই কাজ করে খাই।

আউলিয়াপুর ইউনিয়নের রতন নামে এক শ্রমিক গায়ে পাতলা একটি শার্ট (সেটিও আবার পিছনে অর্ধেকটা ছেঁড়া) পরে মাঠে কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, সরকার বা চেয়াম্যানের কাছ থেকে আমি একটা কিছুাও পাইনি। তাই সরকার যদি একটু দয়া করে শীতে কাপড় দিতো, তাহলে এই প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থেকে রেহায় পেতাম।

সেনুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দ মতিউর রহমান বলেন, এবার শীতটা খুবই বেশি মনে হচ্ছে। দুপুরেও সূর্যের দেখা মেলে না। আর মিললেও তাতে তাপ তেমন নেই। কিন্তু তারপরেও যতো কষ্টই হোক, আমাদের মাঠে কাজ করতেই হবে। নইলে পেটে ভাত যুটবে না।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এবার এ জেলার জন্য ২৮ হাজার কম্বল বরাদ্দ এসেছে। তা ছিন্নমূল ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। তবে এটি চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাই আরও ২০ হাজার কম্বল ও ২০ লাখ টাকা শীতবস্ত্রের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও ধনাঢ্যরা এগিয়ে এলে নিম্ন আয়ের মানুষেরা অনেক উপকৃত হবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।