ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

কলার কান্দায় বন্দী যে জীবন

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২৩
কলার কান্দায় বন্দী যে জীবন

মৌলভীবাজার: সন্ধ্যা হয়ে এসেছে চারপাশ। ব্যস্ততম সড়কের মাঝে মাঝে লাইটপোস্টগুলো চোখ মেলতে শুরু করেছে।

এরই আলোর নিচে উদ্ভাসিত মানুষের জীবন-সংগ্রাম আর অস্তিত্ব।

সেই আলোর নিচে হঠাৎ মাথায় ভারবহনকারী এক বালককে দেখা যায়, সড়ক ধরে ছুটে চলেছে সে। কিছুক্ষণের অজানা গন্তব্যে- ব্যবসায়িক পসরা থেকে কাঙ্ক্ষিত মুনাফার উদ্দেশ্যে। প্রতিদিনই তার এ শহরময় যাত্রা। লাভের মুখ প্রায় দিনই দেখা হয়। তবে মূল্যবৃদ্ধির সর্বগ্রাসী ক্ষুধা তার সেই সারাদিনে বহুকষ্টে অর্জিত প্রাপ্ত অর্থটুকুকে মুহূর্তে গিলে ফেলে! এই ফেরিওয়ালা শিশুটির সেই অব্যক্ত আর্তনাদ এসিওয়ালা নীতিনির্ধারকদের কানে ভুলেও পৌঁছায় না বলে ওরা সবার অলক্ষ্যে প্রতিদিন একটু একটু করে ঝরে পড়তে থাকে!

বাংলানিউজ তার সঙ্গে কথা বলে। ছেলেটির নাম আকাশ মিয়া। গত ৩ মাস ধরে কলা বিক্রির ব্যবসায় নেমেছে সে। পর্যটন নগরী ও চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল শহরের পথে পথে ঘুরে কলা বিক্রি করে আকাশ। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় চাপা কলা।

আগে খাবার হোটেলে কাজ করতো আকাশ। সেই কাজে পরিশ্রম বেশি হওয়া, ঠিক মতো দৈনিক মজুরি না পাওয়ায় সে স্বাধীন ব্যবসা হিসেবে কলা বিক্রির কথা পরিবারকে জানায়। তারা আগ্রহ দেখালে ভ্রাম্যমাণ কলা বিক্রির ব্যবসা শুরু করে সে।

তার দৈনিক লাভের কথা জিজ্ঞেস করলে অবাক হতে হয় আরও! মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকা! এই টাকা দিয়ে বাজারসদাই করে সেগুলো মায়ের হাতে তুলে দিতে হয়। বাঁচে না কিছুই। আকাশের পরিবারে রয়েছে বাবা, মা ও ছোট ভাই। বাবা রোজগার করলেও তাতে তাদের চলে না। সংসারের বাড়তি খরচ মেটাতেই আকাশের এ ব্যবসা। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার কলা নিয়ে বের হয় সে। তার আগে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা একটি কলার ছড়ি কেনে সে। বাসায় রেখে কলা পাকিয়ে টুকরিতে করে মাথায় নিয়ে বিক্রি করতে বেরোয় আকাশ।

স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েব হেলথএক্সচেইঞ্জ থেকে জানা যায়, কলায় রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি, কিডনির সুরক্ষা, দেহের ওজন হ্রাস, শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সাইড, ত্বকের সুরক্ষা প্রভৃতির জন্য কলা খুবই উপকারী। এই ফল আশ এবং ভিটামিনে ভরপুর বলে একে ‘সুপারফুড’ বা উৎকৃষ্টখাদ্য বলা হয়েছে।

এতে করেই বেঁচে গেছে আকাশ মিয়ার এই ভ্রাম্যমাণ ব্যক্তিনির্ভর বাণিজ্যিক উদ্যোগ। নয়তো কে-ই বা কিনতো এই গুরুত্বপূর্ণ ‘সুপারফুড’?

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেল, আকাশ মিয়ার বাবা নাম রুহুল আমিন পেশায় নৈশপ্রহরী। তারা থাকে শ্রীমঙ্গল শহরের কালিঘাট রোডের একটি কলোনিতে। যে বয়েসে আকাশের বইপত্র-খাতা নিয়ে স্কুলে পড়তে যাওয়ার কথা, সেখানে সে কলা ফেরি করে বিক্রি করছে সংসারে একটু ভালোভাবে বাঁচার জন্য। এমন ব্যক্তিগত শিশুশ্রম বন্ধ বা নিরুৎসাহিতকরণের ব্যাপার উদাসীন সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এই পথশিশুটিকে পড়ালেখা সুযোগ করে দিলে হয়তো সেও এদিক শিক্ষিত সমাজের জনশক্তিতে পরিণত হওয়ার সুযোগ পেতো।

আলাপের সময় বার বার চলে যেতে চাচ্ছিল আকাশ। যাওয়ার আগে বলে গেল, ‘কোন সময় কোন জায়গায় থাকি এটার কোনো ঠিক নাই। আবার দেখা হবে হয়ত!

ঝরে পড়া এই শিশুর ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাফর আল সাদেক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের তো স্কুলভিত্তিক এলাকা ভাগ করা এবং জরিপ করা আছে। আকাশের বাড়ি কোথায় সেটি দেখতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২৩
বিবিবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।