খুলনা: ‘চারদিকে থৈ থৈ পানি। পানিবন্দি রয়েছি।
শনিবার (১ জুন) বিকেলে তিনি বাংলানিউজকে তিনি আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত এ গ্রামের মানুষ কোনো সরকারি ত্রাণ পায়নি। কামিনী বাসিয়ার মানুষদের কান্না কেউ শোনে না। ’
অঞ্জনা সরকার নামের এক গৃহবধূ বলেন, ‘আমরা যে কি কষ্টের ভিতর আছি..., আমাগের বাড়িঘরের পানি সরতিছে না। বাচ্চাগাচ্চাগুলো বাইরে জাতি পারতিছে না। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে কতডা কষ্টের ভিতর আছি সে আপনাগে বলে বুঝাতে পারব না। আজকে যদি চেয়ারম্যান এলাকার রাস্তাডা করতো আমরা তালে এভাবে ভাসতাম না। আমরা শনিবার থেকে কোনদিন এক সাক খাচ্ছি আর কোনদিন খাচ্ছি না। খেয়ে না খেয়ে যাচ্ছে আমাগের দিন। পুরুষের কোন কাজ নেই, আমাগের মহিলাগের কোন কাজ নেই। আমাগে কাপড় চোপড়গুলো আমরা মেলাতেই পারতেছি না। কোথায় মেলবো, মেলার কোন জায়গা নেই। রান্না করে খাব কি কইরে, কাঠ কুটোগুলো সব ভিজে গেছে। রান্না করে খেতে পারতিছি না। ঘর ভেঙে গেছে রাতি ঘুমাতে পারতিছি না। ’
অর্চনা মণ্ডল নামের অপর এক গৃহবধূ বলেন, ‘আমাগে বাড়িটা জলে ভরে আছে। দুটো ছোট বাচ্চা বাড়ির ভিতরে তারা উঠানে নামতে পারছে না। তারা তো সাঁতার জানে না। তার জন্য সংকটের ভিতর আছি। জোয়ারের সময় ডুবে থাহি। ভাটায় একটু পানি কমে। ঘরগুলো খুব নোংরায হয়ে আছে। খুব সাপ কুকুরের ভয়ে আছি। উনুনে জল উঠে গেছে। ’
নিজেদের দুরবস্থার কথা বর্ণনা করে সুমন গাইন বলেন, ‘এটা আমাদের কামিনীবাসিয়া ৫ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে যে রাস্তাটি দেখছেন তার পাশে আমার বাড়ি। রাত দুইটে বাজে রাস্তা থেকে এক দেড় হাত ওপর দিয়ে পানি যাচ্ছে। তখন এই সম্পূর্ণটা ভেঙে গেছে। সামনেও ভেঙে গেছে। আমরা কি করি কহন কি করব আসলে কিছু বুঝতে পারতেছিলাম না। তখন রাত দুইটার সময় যে যার মত বাচ্চা-গাচ্চা নিয়ে গেছে সাইক্লোন শেল্টারে। পাশেই আমার জেঠিমার দোকান। এই যে এখানে আইসে দেখি, এইখানে ভাঙ্গা ওইখানে ভাঙ্গা। পানির যে চাপ আমরা ঢুকতে পারতিছি না। এহন আমাদের বাচাই দুষ্কর বিষয়। আমাদের আইলার পর থেকে এই যে রাস্তাডা দেখছেন, এখনো পর্যন্ত এই রাস্তায় কখনো মাটি দেওয়া হয়নি। আমরা কোন ত্রাণ চাই না। আমাদের বাঁচতে হলে টেকসই বেড়িবাঁধ লাগবে। ’
সুবোল গাইন বলেন, ‘আইলার আঘাতের পরে হলো বিশাল বেগে এই ঝড়ডা। আমাদের হলো নদীর কূলে বাড়ি। তো এইজন্য বেশি ভাঙ্গে। রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তার পরে চাপ আসে। আমাদের রাস্তারই দরকার, আমরা চাই রাস্তা। আমরা কিভাবে বাঁচব। বেড়ি বাঁধ উঁচু করে দিলে হয়। আমাদের ত্রাণ দরকার নেই রাস্তা চাই। ’
সরেজমিনে কামিনীবাসিয়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাড়িঘর ঝড়ের তোড়ে ভেঙে গেছে। বেড়িবাঁধের রাস্তা ক্ষত-বিক্ষত। অনেক বাঁধ শিবসা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কোথাও হাঁটু কিংবা কোমর পর্যন্ত পানি। পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে রাস্তা-ঘাট, নলকূপ, টয়লেট। তীব্র লবণ পানির কারণে ঠিকমতো গোসল করতে পারছেন না গ্রামবাসী। গবাদিপশু পালন নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন তারা। অনেকে স্বল্প দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন গরু, ছাগল, ভেড়া ও হাঁস-মুরগি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রায় সপ্তাহ হতে যাচ্ছে এখনও পানিবন্দি জীবন যাপন করছেন প্রায় ৩ হাজার মানুষ। কিন্তু কেউ তাদের খোঁজ-খবর নেয়নি। পাননি কোনো ত্রাণ সহযোগিতা।
তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জালাল উদ্দীন গাজী বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কামিনীবাসিয়া গ্রামের মানুষ। ওই এলাকায় প্রায় দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে, যা এখনো সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। দুর্গত এলাকায় সরকারিভাবে কিছু চাল দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২৪
এমআরএম/এমএম