ঢাকা, রবিবার, ১২ মাঘ ১৪৩১, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ রজব ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নারী কর্মীদের বৈদেশিক কর্মসংস্থানে আবারও ছন্দপতন

জাফর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৫
নারী কর্মীদের বৈদেশিক কর্মসংস্থানে আবারও ছন্দপতন ফাইল ছবি

করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়া কমে যায়। তারপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসলেও ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় বারের মতো নারী কর্মীদের প্রবাসে যাওয়ার কমলো।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে ৬১ হাজার ১৫৮ জন নারী কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে দেশ ছেড়েছেন। যা ২০২৩ সালের চেয়ে ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম। আগের বছর বিদেশে গিয়েছেন ৭৬ হাজার ১০৮ জন নারী। ২০২২ সালে বিদেশে গিয়েছিলেন এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৬৬ নারী।

বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের শ্রম বাজার কার্যত মধ্যপ্রাচ্য নির্ভর। আর এর অধিকাংশই গৃহকর্মী ও গার্মেন্টস শ্রমিক। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ইন্টারনেট বন্ধ ও ছুটি ঘোষণার ম্তো কিছু পদক্ষেপ নেয়। আন্দোলন চরম আকার ধারণ করলে বৈদেশিক যোগাযোগে বড় ধরনের ছেদ পড়ে। এ সময় চাকরির নিয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও অনেক নারী বিদেশে যেতে পারেননি।  এর প্রভাব পড়ে বিদেশে চাকরি করতে যাওয়া নারীদের সংখ্যায়। ফলে বছর শেষে কমে যায় বিদেশে চাকরি করতে যাওয়া নারীর সংখ্যা।

তবে শুধু দেশের পরিস্থিতির কারণে চাকরি নিয়ে বিদেশে যাওয়া কমেছে বলে মনে করেন না ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান।

তিনি বলেন , যে সব নারী দেশের বাইরে গিয়েছেন তারা গৃহকর্মী হিসেবে গিয়েছেন এবং সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গিয়েছেন। সেখানে নারীর নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে। এ সব কারণে গত কয়েক বছরে ধরে ধারাবাহিকভাবে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছিল। এটাকে আমি অস্বাভাবিক মনে করি না। যে সব নারী শ্রমিকরা প্রবাসে যায় তারা তাদের তার আর্থিক বা সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা থেকে যাচ্ছে। এখন বাংলাদেশের সব নারীরা তো আর যায় না। কয়েকটি জেলার নারীরা বিদেশে যায়।

সামাজিক সংকটকে পুঁজি করে তাদের বিদেশে পাঠানো হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর্থিক বা সামাজিক সংকটের কারণে নারী দেশের বাইরে গিয়েছে এখন সারা দেশে এত সংকটে থাকা নারী পাওয়া কঠিন- যে যারা বিদেশে কাজের জন্য যাবে এবং প্রতি বছরই এক লাখ দেশের বাইরে।  

তিনি বলেন, কত সংখ্যক নারী শ্রমিককে সৌদি আরবে বা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য পাঠালাম, তার চেয়ে বড় বিষয় হলো বিকল্প হিসেবে যদি গার্মেন্টস শ্রমিক বা দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারি তাহলে সংখ্যায় কম গেলেও বেশি রেমিট্যান্স আনতে পারি। সুরক্ষাটাও ভালো থাকে এবং সেদিকেই দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় শ্রম বাজার সৌদি আরবে ২০২৪ সালে নারী কর্মী যান ৪০ হাজার ৩১৫ জন; আগের বছরে ২০২৩ সালে গিয়েছিলেন ৫০ হাজার ২৫৪। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান,বাহরাইন, লিবিয়া, যুক্তরাজ্য ও মরিশাসে চাকরি করতে যাওয়া নারীর সংখ্যাও কমেছে।  

দেশের দ্বিতীয় বড় শ্রম বাজার জর্ডান। দেশটিতে নারীরা যান গার্মেন্টস কারখানাতে চাকরি নিয়ে। ২০২৪ সালে জর্ডানে চাকরি করতে যাওয়া নারীর সংখ্যা বেড়েছে। এ বছর জর্ডানে যান ১৩ হাজার ৭৭২ জন নারী। আগের বছর ২০২৩ সালে গিয়েছিলেন সাত হাজার ৮৩৮ জন।

এর আগে ২০২০ সালের মার্চ থেকে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করলে বিদেশে চাকরি করতে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। বরং বিদেশে থেকে মানুষ দেশে ফিরে আসতে থাকে। সেবছর মার্চের আগে মাত্র ২১ হাজার ৯৩৪ জন নারী বিদেশে যায়। তার আগে ২০১৯ সালে বিদেশে চাকরি করতে যায় এক লাখ চার হাজার ৭৮৬ জন নারী।

করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের দুই-তৃতীয়াংশজুড়ে নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়া বন্ধ থাকে। যার কারণে সেবছর নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়া ৮০ শতাংশ কমে যায়।  

চলতি শতকের শুরু থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীরা চাকরি করতে বিদেশে যাওয়া শুরু হয়।  ২০০৮ সাল থেকে এই সংখ্যা প্রতি বছরই ২০ হাজার অতিক্রম করে যায়। এরপর প্রতিবছর ধারাবাহিক ভাবে বাড়তে থাকে বিদেশে চাকরি করতে যাওয়ার নারীর সংখ্যা।

২০১৪ সাল বিদেশে যান ৭৬ হাজার নারী। ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী বিদেশে যান, সংখ্যাটা এক লাখ ২১ হাজার ৯২৫ জন। এরপর নারীদের বিদেশে যাওয়া প্রতি বছরেই ওঠা-নাম করলেও  ২০২০ ও ২০২৪ সালে  উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৫
জেডএ/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।