ঢাকা, বুধবার, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ জুলাই ২০২৫, ২৭ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি

‘বাচ্চাদের ঝলসানো শরীর দেখা আমাদের জন্য অসহনীয় ছিল’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:৪১, জুলাই ২২, ২০২৫
‘বাচ্চাদের ঝলসানো শরীর দেখা আমাদের জন্য অসহনীয় ছিল’ ডা. বজলুর রহমান আদিল

ঢাকা: মাইলস্টোন কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর আহতদের নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালে। দুর্ঘটনায় নিহত, দগ্ধ ও আহতদের সামলাতে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

গুরুতর দগ্ধদের জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিএমএইচে পাঠানো হয়। কম আহতরা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও বিভিন্ন হাসপাতালজুড়ে এখনও শোকের ছায়া বিরাজ করছে। চিকিৎসকরা বলছেন, আগুনে পুড়ে শরীর ঝলসে যাওয়া বাচ্চাদের দেখা তাদের জন্য অসহনীয় ছিল।

উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. বজলুর রহমান আদিল বলেন, আহতদের মধ্যে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের অবস্থা ছিল গুরুতর। অনেকের শরীর থেকে চামড়া উঠে গিয়েছিল, যা ছিল মর্মান্তিক ও বিভীষিকাময়। শিশুদের অবস্থা আরও হৃদয়বিদারক ছিল। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যাদের রেফার করা হয়েছে তাদের অর্ধেকের বেশি হয়তো বাঁচবেন না।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, লুবনা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ও উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সর্বত্রই একই করুণ চিত্র। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে এখনও দুইজন আহত ভর্তি আছেন, তবে চিকিৎসকদের মতে তারা শঙ্কামুক্ত। সেখানে ভর্তি মাইলস্টোন কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী আফিফা (১৩)-এর বা-হাত ঝলসে গেলেও অবস্থা উন্নতির পথে।

ডা. আদিল বলেন, দুর্ঘটনা ঘটার পরই আমি জরুরি বিভাগে যাই। খুব ছোট ছোট বাচ্চা ঝলসানো শরীর নিয়ে আসছিল। এটি সহ্য করা আমার জন্য, আমার কলিগদের জন্য অসহনীয় ছিল। কারণ আমাদের সবার সন্তানগুলোওতো একই বয়সী।

তিনি জানান, গুরুতরদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট, ঢামেক ও সিএমএইচে পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, দুর্ঘটনায় আহত ২৭ জনকে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তবে ৬০ জন আহতের তালিকা করা হয়, যাদের মধ্যে অন্তত ৩০ জনকে রেফার করা হয়েছে উন্নত চিকিৎসার জন্য।

লুবনা জেনারেল হাসপাতালে দগ্ধ রোগী আসার পর ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এদের মধ্যে দুইজন হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা যান। হাসপাতালের মানবসম্পদ বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মিরাজুন নাবী চঞ্চল জানান, বাচ্চাদের শ্বাসনালি ও গলা পর্যন্ত পুড়ে গিয়েছিল, যন্ত্রণায় তারা কাঁদতেও পারছিল না।  

তিনি আরও জানান, মৃত অবস্থায় আনা হয় উমায়রা নামের এক ১১ বছরের শিশু। ইউনাইটেড হাসপাতালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হলেও তার চোখ ও ঠোঁট নড়ছিল দেখে মা-বাবা ধারণা করেন সে হয়তো বেঁচে আছে। পরে লুবনায় এনে নিশ্চিত হওয়া যায়, আগুনে পোড়া চামড়ায় টান পড়লে এমন প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

লুবনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ২৮ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসে, যাদের ৬০-৭০ শতাংশই মারাত্মক দগ্ধ ছিল। ১৫ জনকে রেফার করা হয় এবং মাত্র একজনকে ভর্তি রাখা হয়।

উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১২ জন রোগী আসেন, যাদের মধ্যে ৮ জন প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছাড়েন এবং ৪ জনকে রেফার করা হয়। হাসপাতালের সিআরও মো. নয়ন জানান, বেশিরভাগ রোগী ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন এবং তাদের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া হয়।

কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি আছেন ৫ম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল মাওয়া, যার শরীরের ৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। জরুরি বিভাগের নার্স সীমা রায় জানান, বাচ্চাদের ভেইন খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তারা যন্ত্রণায় ছটফট করছিল।

শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শারীরিক ও মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্তদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। স্কুলবাস চালক মো. ইয়াসিন (৩১) উদ্ধারে অংশ নিয়ে প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হন এবং আইসিইউতে ভর্তি হন। পরে সুস্থ হলে তাকে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়।

হাসপাতাল পরিচালক কর্নেল (অব.) ডা. আ স ম জুলফিকার আলী জানান, এখানে যারা এসেছেন তারা গুরুতর আহত ছিলেন না। বেশিরভাগই মানসিক ট্রমা বা উদ্ধারকালে আঘাতপ্রাপ্ত ছিলেন। আটজন প্রাথমিক চিকিৎসা নেন, যাদের মধ্যে পাঁচজনকে ভর্তি করা হয় এবং চারজনের অবস্থা উন্নতি হলে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

ইএসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।