ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ চান ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ চান ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ’ ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: আইন বিভাগ বর্তমানে একদলীয় হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে এ থেকে উত্তোরণে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ।

রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ’ আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।



সভায় সঞ্চালনা করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা। আরও উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন, ড. শওকত আলী, অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরসহ স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা।

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমানে আইন বিভাগ এক দলীয় হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা প্রয়োজন। তা না হলে অবস্থা আরও খারাপ হবে।

আলোচনায় এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। আমার উদ্দেশ্যে হলো জনগণের ক্ষমতায়ন ও গণতন্ত্রকে টেকসই করা। তবে আমরা এটি পারবো না, আমাদের সেই ক্ষমতা নেই। আমরা চাই ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। দেশের গণতন্ত্র সুসংহত ও পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রের জন্য শুধু নির্বাচনই যথেষ্ট নয়। আমাদের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করতে হবে। রাজনীতিবিদদেরই এ কাজটি করতে হবে। দেশের আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এসব প্রতিষ্ঠানে এখন দলীয়করণ হচ্ছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা না থাকলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব নয়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব, তার সর্বশেষ প্রমাণ শ্রীলঙ্কা। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের জন্য ঐকমত্য প্রয়োজন। ভারতে রাজনৈতিক বিভাজন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমাদের চেয়ে প্রকট। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো এক হয়ে যায়, শামসুল হুদা বলেন।

ড. তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, অতি কেন্দ্রীভূত অতিরিক্ত ক্ষমতা, এককেন্দ্রীক সমতা- শুধু রাষ্ট্র নয়, সংগঠন, পরিবার সবক্ষেত্রে ক্ষতিকর। অতিরিক্ত ক্ষমতা মানুষকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে। ক্ষমতার প্রতি অতি অনুরাগ ও উন্মাদনায় কিছু কিছু মানুষ পাগল হয়ে যায়।

তিনি বলেন, সচিব কখনো মন্ত্রীর কর্তৃত্বের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবেন না। সচিব যদি রাজনৈতিক কর্মী হয়ে যান, তাহলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে মন্ত্রী কতটুকু ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন, সেটাও বিবেচ্য বিষয়। নাকি সব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের, সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। স্থানীয় নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হতে পারে, কিন্তু দলীয় বিবেচনায় পুরস্কার, শাস্তি, অর্থায়ন হতে পারে না।

ড. শওকত আলী বলেন, আমাদের দেশে স্থানীয় সরকার নিয়ে অনেক আইন রয়েছে, কিন্তু ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হয়নি। স্থানীয় সরকারকে ফলপ্রসূ করতে হলে প্রথমেই কেন্দ্র থেকে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ একটি একক রাষ্ট্র। এর কোনো অঙ্গরাজ্য নেই। একক রাষ্ট্রে ক্ষমতার পুরোপুরি বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব নয়। এটা কেন্দ্রের হাতেই থাকবে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, এমপিরা অসাংবিধানিকভাবে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করেন। এটা বন্ধ করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিকশিত করতে হলে এর আর্থিক স্বাধীনতা অবশ্যই প্রয়োজন।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার বলেন, আমলারা কোনোদিন কোনোভাবেই চান না, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হোক। বিকেন্দ্রীয়করণ না হওয়ার জন্য আমলারাই দায়ী। আমাদের কাগজপত্রে অনেক কাজ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তেমন ক্ষমতা বা অর্থ দেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ সময়:১৬৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
এসকে/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।