ঢাকা: ভূমিকম্প হওয়ার যে সব সিগমেন্ট থাকে, তা আমাদের অঞ্চলে রয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশে যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আলী সিনেট ভবনে ‘ভূমিকম্প ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল এ আশঙ্কার কথা জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞান বিভাগ ও কার্জন হল এনভায়রনমেন্ট ক্লাব যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনে মাকসুদ কামাল বলেন, প্রত্যেকটি ভূমিকম্প হয়ে থাকে ভূতাত্ত্বিক ফল্ট রেখার মধ্য দিয়ে। এর মধ্যে নর্থ ও ইস্ট প্লেট বাউন্ডারি বরাবর ভূমিকম্পন হওয়ার বেশি সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে আমাদের এ অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, এই বাউন্ডারি দিয়ে ভুটানে বহু দিন ধরে ভূমিকম্প হচ্ছে না। কোনো অঞ্চলে যদি বেশিদিন ধরে ভূমিকম্প না হয়ে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, সে অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
অতীতের ভূমিকম্পের কথা জানিয়ে মাকসুদ কামাল বলেন, ১৮৯৭ সালে ভুটানে যে ভূমিকম্প হয়েছিল, এর চেয়ে বড় ভূমিকম্প এর আগে ও পরে আর হয়নি। ভুটানে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ভুটান আমাদের সিলেট থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ভুটানে ভূমিকম্প হলে বাংলাদেশের মধ্যে সিলেট, রংপুর ও দিনাজপুরে বড় আঘাত আসতে পারে।
আমাদের এ অঞ্চলে যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, এ অঞ্চলে ভূমিকম্প হওয়ার জন্য যে সব সিগমেন্ট থাকে, এর সবগুলো সিগমেন্ট রয়েছে।
সারাদেশে অধিকাংশ ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ২০০৯ সালের এক হিসাবে দেখা যায়, ঢাকায় তিন লাখ ২৬ হাজার ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ভূমিকম্পের ফলে ৭৮ হাজার ভবন ধসে পড়বে। অন্যান্য ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও সিলেটের অধিকাংশ ভবন ভূকম্পনের সম্ভাব্য ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান তিনি।
যদি ভবনের ওজন কমানো যায়, তাহলে সেই ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকি কম থাকে। আবার ভবনের ওজন বেশি হলে সেই ভবনের জন্য ঝুঁকি আরো বেশি থাকে উল্লেখ করে প্রবন্ধ উপস্থাপক বলেন, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের এর ওজন ও উচ্চতার দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে। ঝুঁকি কম এমন নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, যদিও আমাদের দেশে যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু এই ঝুঁকি মোকাবেলা করার মতো সব ধরনের প্রস্তুতি থেকে পিছিয়ে আছি আমরা।
তিনি বলেন, ভূমিকম্পের বিষয়ে বিভিন্ন ফান্ড থেকে এনজিওর মাধ্যমে কিছু কিছু কাজ হলেও সরকারি অর্থায়নে কোনো হয়নি বললেই চলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মুস্তাফিজুর রহমান সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন।
এতে বিসিএসআইআরের সাবেক পরিচালক ড. কাজী নাসরিন ফারুকীও বক্তব্য রাখেন। এছাড়া এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ভবন নির্মাণ সংশ্লিষ্টরাও উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
টিএইচ/এবি