ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

হত্যা মামলার রায় রোববার

ন্যায়বিচার চান রাজনের মা-বাবা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৫
ন্যায়বিচার চান রাজনের মা-বাবা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট: আলোচিত শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার রায় দেওয়া হবে রোববার (০৮ নভেম্বর)। বিচার শুরুর ১৬ কার্যদিবসের মধ্যে এ রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছেন সিলেট মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধা।


 
রোববার বেলা ১১টার দিকে এ রায় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আদালত সূত্র।

দেশে-বিদেশে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রায় এখন টক অব দ্য সিটি। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস-আদালতে একই আলোচনা। সবাই অধীর আগ্রহে রায়ের অপেক্ষায়। কি হবে রায়?
তবে ছেলের হত্যাকারীদের সকলেরই ফাঁসি দাবি করেছেন রাজনের বাবা আজিজুল রহমান আলম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার সন্তানকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে, রায়ে তাদের সকলের ফাঁসি হোক। তাতে আমার অন্তরের জ্বালা কিছুটা হলেও কমবে।
 
দ্রুততম সময়ে বিচার সম্পন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, খুনিদের এমন শাস্তি হওয়া উচিত যাতে দেশে আর কেউ এ ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়। এতে অন্তত শিশু নির্যাতন বা হত্যার ক্ষেত্রে রাজন হত্যা মামলার রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

রাজনের মা লুবনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ছেলেকে ফিরে পাবো না জানি। তবে ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি হলে অন্তত মা হিসেবে এই শান্তনা পাবো যে, এ ধরনের বিচার হলে সন্ত্রাসীর হাতে আর কোনো মায়ের বুক খালি হবে না। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। কেবল ন্যায়বিচার চাই।

মামলার ১৩ আসামির মধ্যে সৌদি আরবে আটক প্রধান আসামি কামরুলসহ ১১ জন কারাবন্দি ও দু’জন পলাতক রয়েছেন। কারাগারে রয়েছেন মামলার চার্জশিটভুক্ত ১১ আসামি - মহানগরীর জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৪) তার সহোদর মুহিত আলম (৩২) ও আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪), চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না (৪৫), হত্যাকাণ্ডের ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ ওরফে নুর মিয়া (২০), দুলাল আহমদ (৩০), আয়াজ আলী (৪৫), তাজ উদ্দিন বাদল (২৮), ফিরোজ মিয়া (৫০), আছমত আলী (৪২) ও রুহুল আমিন (২৫)। আর পলাতক রয়েছেন শামীম ও পাভেল।

আসামিদের মধ্যে কামরুল, তাজ উদ্দিন বাদল ও রুহুল আমিন ছাড়া অন্য ৮ জন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

নিহত রাজন সদর উপজেলার কান্দিরগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের আজিজুল ইসলাম আলমের ছেলে। গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে তাকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।

নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের পর মরদেহ গুম করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক হন প্রধান আসামি কামরুলের ভাই মুহিত আলম। নির্যাতনের ২৮ মিনিটের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশে-বিদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। খুনিদের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে জনতা।

হত্যাকাণ্ডের পর মহানগরীর জালালাবাদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে মুহিত আলমসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে গিয়ে হত্যাকারীদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতার অভিযোগে বরখাস্ত হন জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন, এসআই জাকির হোসেন ও আমিনুল ইসলাম।

গত ১৬ আগস্ট সৌদি আরবে আটক কামরুল ইসলামসহ ১৩ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ হত্যা মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর সুরঞ্জিত তালুকদার।

গত ৭ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক সাহেদুল করিম।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর এ আদালতে মামলার প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর আদালতের বিচারক চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায়  সৌদি আরবে আটক কামরুলসহ ১৩ আসামির বিরুদ্ধে ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় চার্জ গঠন করে বিচার কার্যক্রম শুরু করে।

গত ১ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ কার্যদিবসে মোট ৩৬ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। কামরুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ অক্টোবর ১১ জন সাক্ষী ফের সাক্ষ্য দেন তার উপস্থিতিতে। ২৫ অক্টোবর এ মামলায় ৩৪২ ধারায় আসামিদের মতামত গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শুরু হয়।  

গত ২৭ অক্টোবর তিন কার্যদিবসে মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আসামিদের উপস্থিতিতে ৮ নভেম্বর রায়ের দিন নির্ধারণ করেন আদালতের বিচারক।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৫
এনইউ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।