যশোর: যশোর সিটি প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সের লটারি প্রতারণা ফাঁস হয়ে গেছে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে শপিং কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান এস এম ইয়াকুব আলী দফায় দফায় বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে, প্রথম পুরস্কার ১৫০ সিসি পালসার মোটরসাইকেল বিজয়ীর কূপনটি পাল্টে নেওয়ার ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়ায় গোপনে মীমাংসার আশার গুড়েবালি পড়েছে বলে মন্তব্য ভুক্তভোগীদের। তবে, ফুটেজ নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ায় গত ৭ দিনেও প্রথম পুরস্কার বিজয়ীর হদিস পাওয়া যায়নি।
এ কারণে সাধারণ ক্রেতাদের ধারণা, আয়োজকরাই এর সঙ্গে জড়িত। জানাজানি হওয়ায় তারা এখন সেই কূপনটি দেখাচ্ছে না। আর প্রথম পুরস্কারের টিকিট এখনও কেউ জমা দেয়নি বলেও স্বীকার করেছেন সিটি প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি সমিতির সভাপতি সালাউদ্দিন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর ঈদ-পূজার আগে ক্রেতা টানতে প্রতি ৩০০ টাকার পণ্য ক্রয়ে একটি করে ‘লাকী কূপন’ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এই লাকী কূপনের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষা করতে তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সী ক্রেতা শপিং করে সিটি প্লাজায়। এভাবে চলে আসছে কয়েক বছর। ঠিক এবারও এ কূপনের আয়োজন করা হয়। গত ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা ও দুর্গা পূজা উপলক্ষে সিটি প্লাজার ক্রেতাদের প্রতি ৩০০ টাকার কেনাকাটায় একটি করে লাকি কূপন বিতরণ করা হয়। সে হিসেবে লক্ষাধিক কূপন পান ক্রেতারা।
এবারের র্যাফেল ড্রতে প্রথম পুরুস্কার ১৫০ সিসি পালসার মোটরসাইকেল, এছাড়াও একাধিক মোটরসাইকেল, স্বর্ণের হারসহ আকর্ষণীয় ৪০টি পুরস্কারের নাম ঘোষণা দেওয়া হয়। অবশেষে গত ৩১ অক্টোবর রাতে কূপনের লটারির ড্র উপলক্ষে অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সিটি প্লাজা কর্তৃপক্ষ।
ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি শিশুকে দিয়ে কূপন তোলানো হচ্ছে। কিন্তু এরপরই আয়োজকদের মধ্যে এক ব্যক্তি চোখের পলকে সেই কূপনটি ফেলে দিলেন। একইসময় তার পাশে থাকা আয়োজকদের অপর ব্যক্তি অন্য আরেকটি কূপন দিলে তিনি ওই কূপনের নম্বরটিকে প্রথম পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেন।
এ দৃশ্য দেখতে পেয়ে দর্শকদের কেউ কেউ কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করলে তার সুফল মেলেনি। অবশেষে গত ৫ নভেম্বর ওই টিকেট পাল্টানো দৃশ্যের ভিডিও ধারণকারী এক দর্শক সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলে ফুটেজ ছড়িয়ে দিলে গোটা যশোরাঞ্চলে তোলপাড় শুরু হয়। এমনকি এ ঘটনাকে ভয়াবহ প্রতারণা আখ্যায়িত করে সিটি প্লাজা শপিং কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী মালিক সমিতির মধ্যে দুইটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়।
যশোর সরকারি এমএম কলেজে মাস্টার্স পড়ুয়া স্বপন বসু নামে এক ভুক্তভোগী বাংলানিউজকে বলেন, দুর্গা পূজাতে তিনি সিটি প্লাজা থেকে ৩ হাজার টাকার অধিক পণ্য কিনে ১০টি কূপন পেয়েছেন। শুধু এ বছর নই, প্রতি বছর পূজার সময় তিনিসহ তার বন্ধুরা কূপনের আশায় সিটি প্লাজা থেকে কেনাকাটা করেন। তবে, এ পর্যন্ত কেউ বিজয়ী হতে পারেননি। তবুও নিজেদের ভাগ্য দোষ হিসেবে ভাবতাম। কিন্তু এ বছর লটারি জালিয়াতির দৃশ্য নিজ চোখে দেখে অবাক হলাম। তিনি এ ঘটনার তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করেছেন।
যশোর সরকারি সিটি কলেজের ছাত্র মহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি উপরে উপরে ভালো সাজলেও তারা গরিব মেরে বড় লোক হচ্ছেন। শুধু কূপনের ক্ষেত্রে নয়, সিটি প্লাজার ৬ষ্ঠ তলাতে খালি আকাশের নিচে ফুলের চারা লাগানো রয়েছে। সেখানে ফাস্টফুড জাতীয় একটি দোকান করে নাম দেওয়া হয়েছে সিটি প্লাজা রুফটব।
অথচ, ওই রুফটবে যাওয়ার জন্য প্রবেশমূল্য করা হয়েছে ১০ টাকা। দেখার কিছুই নেই তবুও বিনা কারণে ১০টাকা দিয়ে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা ‘বিশেষ’ সুবিধার জন্য যায় রুফটবে। এ কাজেও প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করে সিটি প্লাজা কর্তৃপক্ষ।
শুধুমাত্র স্বপন বসু কিংবা মহিদুল নয়। বাংলানিউজকে একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, সরাসরি ভিডিও ফুটেজের তদন্ত করে অবিলম্বে সিটিপ্লাজা কর্তৃপক্ষ ও তাদের সহযোগিতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ বিষয়ে সিটি প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি সালাউদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাদের কাছেও ভিডিও ফুটেজটি রয়েছে। তারা ভিডিও ফুটেজটির রহস্য উদঘাটন করতে র্যাবের সহযোগিতা নেবেন।
এ বিষয়ে সিটি প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান এসএম ইয়াকুব আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোনটি কেটে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৫
পিসি/