সিলেট: সিলেটের চাঞ্চল্যকর শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার রায় পড়া শুরু হয়েছে।
রোববার (০৮ নভেম্বর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে আলোচিত এ হত্যা মামলার ৭৬ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেছেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা।
এ হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া ১৫ কার্যদিবসে সম্পন্ন হয়েছে। ১৬তম কার্যদিবসে রায় ঘোষণা করা হচ্ছে।
রাজনের মা লুবনা বেগমকে নিয়ে আদালতে উপস্থিত আছেন বাবা আজিজুল রহমান আলম। বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও আদালতে উপস্থিত রয়েছেন।
মামলার ১৩ আসামির মধ্যে কামরুলসহ ১১ জন কারাগারে আটক ও দু’জন পলাতক রয়েছেন। কারাগারে রয়েছেন মামলার চার্জশিটভুক্ত ১১ আসামি- মহানগরীর জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৪), তার সহোদর মুহিত আলম (৩২) ও আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪), চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না (৪৫), হত্যাকাণ্ডের ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ ওরফে নুর মিয়া (২০), দুলাল আহমদ (৩০), আয়াজ আলী (৪৫), তাজ উদ্দিন বাদল (২৮), ফিরোজ মিয়া (৫০), আছমত আলী (৪২) ও রুহুল আমিন (২৫)। আর পলাতক রয়েছেন শামীম ও পাভেল।
বেলা ১১ টা ২১ মিনিটে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়েছে।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে বাড়তি নিরাপত্তায় পোশাকে-সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি-প্রসিকিউশন) আব্দুল আহাদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আলোচিত এ হত্যা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আদালতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। অর্ধশতাধিক বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।
গত ০৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে রাজনকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। নিহত রাজন সদর উপজেলার কান্দিরগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের আজিজুল ইসলাম আলমের ছেলে।
নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের পর মরদেহ গুম করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক হন কামরুলের ভাই মুহিত আলম। হত্যাকারীরা নির্যাতনের ২৮ মিনিটের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে দেশে-বিদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। খুনিদের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে জনতা।
রাজন হত্যাকাণ্ডের পর মহানগরীর জালালাবাদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে মুহিত আলমসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে গিয়ে হত্যাকারীদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতার অভিযোগে বরখাস্ত হন জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন, এসআই জাকির হোসেন ও আমিনুল ইসলাম।
গত ১৬ আগস্ট সৌদি আরবে আটক কামরুল ইসলামসহ ১৩ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ হত্যা মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর সুরঞ্জিত তালুকদার।
গত ০৭ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক সাহেদুল করিম।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর এ আদালতে মামলার প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর আদালতের বিচারক চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় সৌদি আরবে আটক কামরুলসহ ১৩ আসামির বিরুদ্ধে ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচার কার্যক্রম শুরু করেন।
গত ০১ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ কার্যদিবসে মোট ৩৬ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।
সাক্ষীরা হচ্ছেন- রাজনের বাবা আজিজুর রহমান আলম, মামলার বাদী জালালাবাদ বরখাস্তকৃত উপ পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম, রাজনের মা লুবনা বেগম, চাচা আল আমিন, স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউল হক ও মাসুক মিয়া, বাদেআলী গ্রামের ইশতিয়াক আহমদ রায়হান ও নিজাম উদ্দিন, অনন্তপুর গ্রামের আব্দুজ জাহির মেম্বার, শেখপাড়া এলাকার পংকী মিয়া, কুমারগাঁওয়ের লুৎফুর রহমান, বাবুল মিয়া ও কাচা মিয়া, পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের বাসিন্দা কাঁচা মিয়া ওরফে কছি, পশ্চিম জাঙ্গাইল গ্রামের আনোয়ারুল হক, কুমারগাঁওয়ের বেলাল আহমদ, দক্ষিণ গ্রামের আবদুল হান্নান, গিয়াস মেম্বার, আফতাব মিয়া, আব্দুল করিম ও কোরবান আলী, পুলিশ কনস্টেবল জাকির আহমদ, মনির আহমদ, মাইক্রোবাসচালক মালিক আব্দুল মান্নান, ওয়ার্কশপের মালিক সুদীপ কপালী, সিলেট মহানগর মুখ্য হাকিম প্রথম আদালতের বিচারক মো. সাহেদুল করিম, তৃতীয় আদালতের বিচারক আনোয়ারুল হক, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক তাহমিনা ইসলাম, জালালাবাদ থানার পুলিশ কনস্টেবল ফয়সল আহমদ ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন, মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা একই থানার বরখাস্তকৃত (ওসি-তদন্ত) আলমগীর হোসেন, এসআই আরিফুল আমিন, এসআই শামীম আকঞ্জি ও এএসআই সোহেল রানা ও সুনামগঞ্জের দিরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহাদেব বাঁছাড় এবং মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার।
কামরুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ অক্টোবর ১১ জন সাক্ষী ফের সাক্ষ্য দেন তার উপস্থিতিতে। তারা হচ্ছেন- সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক সাহেদুল করিম, দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আনোয়ারুল হক, মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগরীর জালালাবাদ থানার বরখাস্ত হওয়া (ওসি-তদন্ত) আলমগীর হোসেন, মামলার বাদী একই থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম, রাজনের বাবা আজিজুল রহমান আলম, মা লুবনা বেগম, চাচা আল আমিন, স্থানীয় বাসিন্দা ইশতিয়াক আহমদ, বেলাল আহমদ, কোরবান আলী ও আফতাব আহমদ।
২৫ অক্টোবর এ মামলায় ৩৪২ ধারায় আসামিদের মতামত গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শুরু হয়।
আসামিদের মধ্যে প্রধান আসামি কামরুলের ভাই মুহিত আলম, অপর ভাই আলী হায়দার, ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ, আয়াজ আলী, আজমত উল্লাহ, ফিরোজ আলী নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতে লিখিত আবেদন করেন। অপর আসামি নূর আহমদ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রত্যাখ্যান করেন তার আবেদনে।
২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত আলোচিত এ মামলায় কামরুল ইসলামসহ ১১ আসামির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তাদের আইনজীবীরা।
২৭ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আসামিদের উপস্থিতিতে ০৮ নভেম্বর রায়ের দিন নির্ধারণ করেন আদালতের বিচারক।
নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের পর মামলার প্রধান আসামি কামরুল ইসলাম পালিয়ে সৌদি আরবে চলে যান। সেখানে গিয়েও তার শেষ রক্ষা হয়নি। প্রবাসীরা তাকে ধরে বাংলাদেশ দূতাবাসে হন্তান্তর করেন। পুলিশ সৌদি আরবে গিয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গত ১৫ অক্টোবর তাকে দেশে নিয়ে আসে।
আসামিদের মধ্যে গ্রেফতারকৃত কামরুল, তাজ উদ্দিন বাদল ও রুহুল আমিন ছাড়া অন্য ৮ জন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৫
এনইউ/এএসআর
** কঠোর নিরাপত্তায় সিলেটের আদালতপাড়া, জনতার ভিড়
** রাকিব-রাজন হত্যা মামলার রায় বেলা ১২টায়