ঢাকা: গাবতলী সেতুর পাশে ব্যাগ-বোঁচকা নিয়ে সকাল নয়টার দিকে দাঁড়িয়ে আছেন জহুরুল ফকির। গন্তব্য উত্তরের জেলা পাবনা।
এসব পরিবহনকে সেতু পার করাতেই দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের হতে হচ্ছে গলদঘর্ম।
রাজধানী ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার গাবতলী সেতু। দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ পরিবহন এ সেতু পার হয়েই ঢাকায় প্রবেশ করে এবং ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। কিন্তু ঢাকার এ গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখের যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করানোর কারণে এ সড়কে সারাক্ষণ যানজট লেগেই থাকে।
অনেক সময় টেকনিক্যাল থেকে গাবতলী সেতু অতিক্রম করতেই যানজটে পার হয়ে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
রোববার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে গাবতলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য।
শুধুমাত্র সেতু সংলগ্ন এলাকায়ই নয়, বাস টার্মিনালের বাইরে সড়কের ওপর দেখা যায়, চার-পাঁচটি বাস পাশাপাশি এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে। একইসঙ্গে সড়কের ওপর পার্কিং করে রাখা হয়েছে সারি সারি বাস। এছাড়াও সিটি সার্ভিসের বিভিন্ন পরিবহন ও রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুর-মানিকগঞ্জের বিভিন্ন পরিবহনের বাসগুলোকেও সড়কের ওপর এলোমেলো দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে।
তবে এ দৃশ্য শুধুমাত্র বাস টার্মিনালের সামনেরই নয়, টেকনিক্যাল মোড় থেকে গাবতলী সেতু পর্যন্ত সড়কের দু’পাশ জুড়ে এভাবেই যাত্রী ওঠা-নামা করায় পরিবহন বাসগুলো। আর সড়কে এভাবে যাত্রী ওঠা-নামা করায় এ এলাকায় সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট।
টার্মিনাল থেকে না উঠে রাস্তা থেকে বাসে ওঠার কারণ জানতে চাইলে জহুরুল নামে ওই যাত্রী আঞ্চলিক বাংলায় বলেন, ‘এখান থেকে বাসে উঠলে এক-দেড়শ’ টাকাতেই পাবনা যাওয়া যাবে। কিন্তু কাউন্টার থেকে উঠলে তিনশ’ টাকা ভাড়া দিতে হবে’।
তবে সড়কে এলেমেলোভাবে যানবাহন রাখার পাশাপাশি গাবতলী পশুরহাট এবং স্টিমারে আসা বালু শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত ট্রাকগুলোও ব্যস্ত এ সড়কটি অতিক্রম করায় যানজট আরো তীব্র আকার ধারণ করে।
গাবতলী সড়কের পাশের চা দোকানি আব্দুল হাই বলেন, ‘এই যে রাস্তার মইধ্যে দিয়ে বালুর ট্রাক পার হচ্ছে। এজন্যইতো বাসগুলো দাঁড়ায় থাকতে হচ্ছে। যদি ট্রাকগুলো অন্যভাবে রাস্তার এপারে আনা যাইতো, তাইলে এতো জ্যাম হইতো না’।
উত্তরাঞ্চলগামী রজনীগন্ধা নামে একটি পরিবহনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক দাবি করেন, টার্মিনালে বাস রাখার জায়গা না পাওয়ায় বেশিরভাগ সময় বাধ্য হয়ে সড়কে দাঁড়াতে হয়। এছাড়া তারা নিম্ন আয়ের যাত্রীদের পরিবহন করেন। তাই সড়ক থেকে যাত্রী তোলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার (মিরপুর) খায়রুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ সারাক্ষণই এ সড়কের যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সড়কে যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামার যে অভ্যস্ততা, তা একদিনে যাবে না। তবে মেয়র (আনিসুল হক) যেহেতু বলে গিয়েছেন, আশা করি, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে নগরবাসী ভালো কিছু পাবেন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, গাবতলী এলাকার যানজটের বিষয়টি মেয়র অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। ইতোমধ্যে ওই এলাকা পরিদর্শন করে তিনি সড়কে যানবাহন রাখতে নিষেধ করেছেন। তবে এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলাই ভালো।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার সেল ও ল্যান্ডফোনে কল করা হলেও ওপাশ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।
গত বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় পরিদর্শনে এসে সড়কের ওপর এলোমেলোভাবে যাত্রী ওঠা-নামা করানো দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের (মঙ্গলবার) মধ্যে এই এলাকাকে যানজটমুক্ত করতে সড়কে যানবাহন রাখা বন্ধ করার নির্দেশ দেন তিনি। তবে তার সেই নির্দেশ মানছে না কেউ।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
এইচআর/এএসআর