ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

৪ শিশু হত্যায় ৬ জনের কিলিং মিশন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৬
৪ শিশু হত্যায় ৬ জনের কিলিং মিশন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের ৪ শিশুকে চেতনানাশক দ্রব্য প্রয়োগের পর বুক চেপে ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। গ্রাম পঞ্চায়েত আব্দুল আলী ওরফে বাগল মিয়ার নির্দেশে এ কিলিং মিশনে অংশ নেয় ৬ জনের একটি দল।



এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে কিলিং মিশনের সদস্য রুবেল মিয়া (১৭)।

কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারীরা হলো - আব্দুল আলী ওরপে বাগল মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া (১৭), একই গ্রামের আরজু মিয়া (২০) ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক বাচ্চু মিয়া (২৫) সহ মোট ৬ জন। তারা সবাই সুন্দ্রাটিকি গ্রামের বাসিন্দা।

শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত সোয়া ৮টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র।

তিনি জানান, সুন্দ্রাটিকি গ্রামের গ্রাম পঞ্চায়েত আব্দুল আলী ওরফে বাগল মিয়ার সঙ্গে নিহত শিশুদের অভিভাবকদের পক্ষের পঞ্চায়েত খালেক মিয়ার দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। মাসখানেক আগে গ্রামের একটি বড়ইগাছ কাটাকে কেন্দ্র করে বাগল মিয়ার সঙ্গে খালেক মিয়ার আবারও দ্বন্দ্ব হয়। এর পর থেকেই ৪ শিশুকে হত্যার পরিকল্পনা করে পঞ্চায়েত বাগল মিয়া।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বাগল মিয়ার পক্ষের অটোরিকশা চালক একই গ্রামের বাচ্চু মিয়া ৪ শিশুকে গ্রামের খেলার মাঠ থেকে বাড়ি ফেরার পথে তার অটোরিকশায় তুলে নেয়। শিশুদের কাছে পূর্ব পরিচিত হওয়ায় বাচ্চু তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলায় তারা সহজেই অটোরিকশায় উঠে।

কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারীরা অটোরিকশায়ই চেতনানাশক কিছু প্রয়োগ করে শিশুদের অজ্ঞান করে ফেলে। পরে রুবেল, আরজু এবং পলাতক বাচ্চু মিয়াসহ ৬ হত্যাকারী রাতেই বাচ্চু মিয়ার অটোরিকশা গ্যারেজে নিয়ে বুকে চাপসহ বিভিন্ন উপায়ে শ্বাসরোধ করে শিশুদের হত্যা করে। ওই রাতেই হত্যাকারীরা মরদেহ ৪টি গ্রামের পাশের একটি খালের কাছে বালু চাপা দেয়।

পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র আরও জানান, হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে আটক রুবেল মিয়া শুক্রবার বিকেল সোয়া ৫টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে হবিগঞ্জে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) কৌশিক আহম্মদ খোন্দকারের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

জয়দেব কুমার ভদ্র জানান, ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে হত্যার আলামত হিসেবে বাচ্চুর অটোরিকশা, একটি রক্তমাখা পাঞ্জাবি ও আরজুর বাড়ি থেকে শাবল, বস্তা এবং কোদাল উদ্ধার করা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রুবেলের সঙ্গে আটক আরজু ও বশিরকে শুক্রবার সন্ধ্যায় আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করলে বন্ধের দিন থাকায় বিচারক শুনানি নেননি। বিচারক সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) শুনানির দিন ধার্য্য করেন। ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে দ্রুত মামলার অভিযোগ গঠন (চার্জশিট) করা হবে বলে জানান তিনি।

পুলিশের বিরুদ্ধে উঠা গাফিলতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা দেখা হচ্ছে। কোনো সদস্যের অবহেলার দায় সমগ্র পুলিশ বিভাগ নিতে পারে না। এজন্য কেউ দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদুল আলম, সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) মাসুদুর রহমান মনির, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তাদির আলম প্রমুখ।

নিহত শিশুরা হলো- বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র জাকারিয়া শুভ (৮), আবদাল মিয়ার ছেলে প্রথম শ্রেণির ছাত্র মনির মিয়া (৭), আব্দুল আজিজের ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তাজেল মিয়া (১০) ও সুন্দ্রাটিকি আনওয়ারুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসার নুরানী প্রথম শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল মিয়া (১০)। তাদের মধ্যে শুভ, মনির ও তাজেল একে অপরের চাচাতো ভাই।

১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় তাদের অপহরণ করা হয়। পাঁচদিন পর বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে গ্রাম থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের ইছারবিল খালের পাশে বালু মিশ্রিত মাটিচাপা অবস্থায় ওই চার শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৬
পিসি/ আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।