ঢাকা, রবিবার, ১২ মাঘ ১৪৩১, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বিকল্প পেলে তামাক চাষ ছাড়বেন আলীকদমের চাষিরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৬
বিকল্প পেলে তামাক চাষ ছাড়বেন আলীকদমের চাষিরা ছবি- সোহেল সরওয়ার- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আলীকদম (বান্দরবান) থেকে ফিরে: তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ফসলি জমিতে চলা তামাকের চাষ গ্রাস করে নিচ্ছে কৃষিকে। দীর্ঘ সময়ে কৃষি জমির অধিকাংশ এখন তামাক চাষের দখলে।

এমনকি তামাকের চাষ নদীর চর, ঢালু জমিতেও বিস্তার লাভ করেছে।

তামাক চাষের কারণে পরিবেশের বিপর্যয়, রোগ-বালাই, মাটি ও পানি দূষণের বিস্তার ঘটলেও তামাক চাষের জাল ছিঁড়ে বের হয়ে আসতে পারছেন না কৃষকরা।

তামাক চাষিরা বলছেন, নগদ এককালীন আর্থিক মুনাফা ও পণ্যের আকর্ষণীয় মূল্য পাবার কারণে তারা ধান ও সবজি চাষ বাদ দিয়ে তামাক চাষ করছেন। তবে বিকল্প চাষাবাদ বা পেশার সুযোগ পেলে কিংবা তাদের পুনর্বাসন করা হলে তামাক চাষ থেকে ফিরে আসবেন তারা।

গত ১৯ অক্টোবর আলীকদম বাজারে বসে তামাক চাষ নিয়ে আলাপকালে নিজেদের এ ইচ্ছার কথা জানান কয়েকজন চাষি। তবে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে ঋণ নেওয়ার কারণে নিজেদের নাম পরিচয় প্রকাশে রাজি হননি তারা।

উপজেলা যুবলীগের এক শীর্ষ নেতা জানান, ১৯৮৩ সালের দিকে ‍পাশের লামা উপজেলায় তামাকের চাষ শুরু হয়। পরে তা আলীকদমে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। বর্তমানে আলীকদমে অন্তত ১৫০০ চাষি তামাক চাষ করেন।

তিনি নিজেও গত ১৭ বছর ধরে তামাক চাষ করছেন। এবার পাঁচ বিঘা জমিতে তামাকের আবাদ করবেন। তার ভাইয়েরাও তামাক চাষ করেন। তাদের বাড়িতে তামাক চুল্লি রয়েছে।

তিনি আরও জানান, ধান ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনে তারা ন্যায্যমূল্য পান না। তাই তামাক চাষ করতে হয়। তাদের অন্য কোনো ব্যবস্থা করা বা কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য এলাকায় হিমাগার নির্মাণ করা হলে তামাক চাষ বাদ দিয়ে দেবেন।

স্থানীয়রা জানান, এ এলাকায় ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, আবুল খায়ের ও ঢাকা টোবাকোর পৃষ্ঠপোষকতায় তামাক চাষ হয়। এজন্য তামাকের বীজতলা থেকে রোপণ, সার, কীটনাশকসহ সব ব্যয় নির্বাহ করা হয় কোম্পানির পক্ষ থেকে। তবে তামাক বিক্রির সময় ঋণদান বাবদ সব টাকা কেটে রাখে টোবাকো কর্তৃপক্ষ।

তারা জানান, তামাক প্রতিনিধিরা এসে তামাক ক্ষেত, ফসল, চাষ, ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নিয়মিত তাদের সাহায্য করেন। কিন্তু জেলা বা উপজেলা কৃষি কমর্কতা কোনো সহায়তা বা খবর নেন না।

চাষিদের অভিযোগ, তামাক চাষ না ছাড়তে পারার আরেক কারণ মহাজনি প্রথা। মহাজনরা চাষিদের দ্বিগুণ অর্থ ফেরতের শর্তে ঋণ দেন। ঋণের টাকা শোধ দিতে না পারলে সুদ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে। এতে করে ঋণের জাল থেকে বের হতে পারেন না অনেক চাষি।

অন্যদিকে, তামাকের কারণে এ এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা, মাটির উর্বরতা হ্রাস, নদীর পানি দূষণসহ নানা সমস্যা দেখা দিলেও কমছে না তামাকের আগ্রাসন। সাম্প্রতিক সময়ে সমতল ছাড়িয়ে মাতামুহুরী নদীর চরেও শুরু হয়েছে তামাক চাষ।

এছাড়া তামাক পোড়ানোর জন্য কাঠের যোগান দিতে অব্যাহতভাবে বাড়ছে পাহাড় ও বন থেকে কাঠ সংগ্রহ। ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পড়ছে ক্ষতির মুখে।

কৃষকদের দাবি, আলীকদমে একটি হিমাগার নির্মাণ, কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ও তামাক চাষের কুফল তুলে ধরা হলে, সেইসঙ্গে তামাক চাষিদের সঠিকভাবে পুনর্বাসন করা গেলে তাদের তামাক চাষ থেকে ফেরানো সম্ভব।

এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলে তামাক চাষিরা যে কোনো সহায়তা করতে রাজি বলে জানান যুবলীগের ওই নেতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৬
এসআর/টিআই/জেডএম

আরও পড়ুন>>
** একজন শামসুল ও কৃষিতে পরিবর্তনের শুরু ....
** শিশিরভেজা সকালে ম্যারাইংতং পাহাড়ের ম্রো পাড়ায়
** মাতামুহুরী নদীর 'বক দ্বীপ'
** প্রবারণায় বান্দরবান রাজার মাঠে উৎসবের সাজ
** নিরবধি বয়ে চলা 'শৈল প্রপাত'
** দ্য ওয়াটার ল্যান্ড অব রাঙামাটি
** পানির রাজ্যে পাহাড়ের বুদ্ধ...
** প্রশান্তি বিলাতে কাপ্তাইয়ের ‘রিভার ভিউ পিকনিক স্পট’
** দেশের যে শহরে রিকশা নেই!
** খাগড়াছড়ির প্রবারণা উৎসবে…
** 'জিরাফ গলার' ঝুলন্ত সেতুর আকর্ষণও কম নয়
** রেল স্টেশনে বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি
** রাবার ড্যামে চেঙ্গী নদীপাড়ের কৃষকদের সুদিন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।