কেরামখালী (সুন্দরবন) থেকে: ঘড়ির কাটা সকাল সোয়া সাতটায়। বায়ান্ন জন পুণ্যার্থী আর দর্শনার্থী নিয়ে ট্রলার সুন্দরবনের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীরে এসে ভিড়লো।
ট্রলারের পরিচালক শাহজাহান সিরাজ জানালেন জায়গাটির নাম কেরামখালী। আমাদের গন্তব্য দুবলার চরের রাসমেলা। দুবলার চরের কাছাকাছি একটি স্থানে রাত কাটিয়ে ভোরে ট্রলারে করে সাগর দেখাতে নিয়ে এসেছেন তিনি।
সাগর দেখেই আমরা মেলা স্থলে প্রবেশ করবো। সাগর তীর ঘেঁষে র্যাবের একটি নিরাপত্তা চৌকিও আছে। তার পাশ দিয়ে আমরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে সাগর ও এর তীরবর্তী বন দেখতে বের হলাম।
সাগরের তীর ঘেঁষে কিছুদূর হাঁটতেই চোখে পড়লো হরিণের পায়ের ছাপ। পায়ের ছাপগুলো সোজা বনের ভেতর চলে গেছে। ছাপটা যেমন স্পষ্ট তেমনই টাটকা।
পায়ের ছাপ ধরেই বনের ভেতর ঢোকার সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা। একদল হরিণের পায়ের ছাপ। সমুদ্রের ভেজা বালিতে ছাপ স্পষ্ট। পথের দু-ধারে হরিণের আধখাওয়া টাটকা পাতা তখনও পড়ে রয়েছে।
আমাদের দলে আছেন বহুবার বনে আসা ট্রলারের মাঝি মোহাম্মদ আলী। তার বর্ণনা মতে, কম করে হলেও বিভিন্ন সময় বনে অর্ধশতাধিক বাঘ দেখার অভিজ্ঞতা তার আছে। তিনিই প্রথম একটা বাঘের পায়ের ছাপ দেখেন।
তখনই চিৎকার করে আমাদের ডেকে বললেন-দেখুন, দেখুন এটা বাঘের পায়ের ছাপ। হরিণগুলো যে সময় এখানে ছিলো, সে সময়েরই ছাপ এগুলো।
অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বললেন, ঘণ্টাখানেক আগেই হয়তো বাঘটি হরিণের দলটিকে তাড়িয়ে নিয়ে গেছে। বালিতে বাঘের থাবার ছাপ দেখে তার ধারণা, বাঘটি বেশি বড় না।
বাঘের থাবা, দেখে হঠাৎই রক্ত হিম হয়ে এলো। হরিণের পায়ের ছাপ দেখে যে আনন্দে বনের ভেতর ঢুকেছিলাম তার ছন্দ পতন ঘটলো।
ভয়ে গা ছমছম করছে। জোয়ারের পানি বনের খাল দিয়ে হু হু করে ঢুকছে। দেখতে দেখতে আমাদের আসার পথটিও জোয়ারের পানিতে ভরে গেলো। সামনে যাওয়ার আর কারও সাহস হলো না। যে পথে ঢুকেছিলাম সে পথেই জোয়ারের পানি পাড়িয়ে ট্রলারের
ফিরে এলাম।
বনে ৩০ বারেরও বেশি ট্রলার নিয়ে আসা পরিচালক শাহজাহান সিরাজকে থাবার ছবি দেখালাম। তিনিও দেখেই বলে দিলেন, এটি বাঘেরই পায়ের ছাপ।
ট্রলারে ফিরে অন্য একটি দলের প্রধান এবাদুল জানালেন, আমরা হরিণের বাচ্চা দেখলাম। বনের ভেতর ছোট একটি ঝোপে মা হরিণ ও বাচ্চাটি লুকিয়ে ছিলো। হয়তো কিছুক্ষণ আগেই জন্ম নিয়েছে হরিণ শাবকটি।
**লক্ষ চোখে খুঁজে ফিরি তারে
**রাস পূজায় রাজস্ব মওকুফ চান পূণ্যার্থীরা
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৬
এমআই/এমএ