একথা শুনে রোগীর স্বামী ছুটলেন দায়িত্বরত সেবিকাদের কাছে। কিন্তু সেবিকারা জানালেন, হাসপাতালে অক্সিজেন নেই।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগীয় শহর খুলনার একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র এই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এখানে ৫০০ আসনের বিপরীতে গড়ে প্রতিদিন আট শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। কিন্তু এতো বিপুল সংখ্যক রোগীর জন্য রয়েছে মাত্র চারটি অক্সিজেন সিলিন্ডার। ফলে অনেক মুমূর্ষু রোগীকে করুণ পরিণতি বরণ করতে হয় বলে জানালেন একাধিক দায়িত্বরত সেবিকা।
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) রাতে স্টোকজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন খুলনা নগরীর শিববাড়ি মোড় এলাকার মিনতি রায় সরকার। হাসপাতালে আনা হয় যখন তখন অবস্থা ছিলো আরও খারাপ। জরুরি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ২য় তলার মেডিসিন ওয়ার্ডে। নিশ্বাস যেনো তখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এমন পরিস্থিতিতে নার্সদের হাত-পা ধরেও মেলেনি অক্সিজেন।
একই অবস্থা খুলনার খালিশপুরের বয়রা মহিলা কলেজ এলাকার বর্ণি শিখা, কয়রা উপজেলার হাতিয়ারডাঙ্গার প্রীতিলতা, খুলনা ডিকে মেইন রোড এলাকার পুষ্পিতার (১৬)। অক্সিজেনের অভাবে কাতরাচ্ছেন সবাই।
এসব রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে অক্সিজেন না পেয়ে বাইরের অ্যাম্বুলেন্স চালকদের কাছ থেকে প্রতি ঘণ্টা ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা দরে অক্সিজেন সিলিন্ডার ভাড়া করে এনেছেন। রোগীকে বাঁচাতে তো হবে!
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ৭-৮ ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স লাবনী মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, স্টোকসহ বিভিন্ন ধরনের রোগীকে জরুরিভাবে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন হলেও সংকটের কারণে সম্ভব হয় না।
তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে এই ওয়ার্ডে দু’টি সিলিন্ডারে অল্প অক্সিজেন রয়েছে, সেটা দুই রোগীকে দেওয়া হয়েছে। এখন রাতভর অন্তত আরও ২০টি প্রয়োজন, যেটা সাপ্লাই দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে যা আছে তা দিয়েই তারা কাজ চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এভাবে অক্সিজেনই মৃত্যুফাঁদ হয়ে গেছে খুলনা মেডিকেলের। রোগীদের অক্সিজেন না পাওয়ার ঘটনা নিত্যদিনের। বাইরে থেকে এনে অক্সিজেন দেওয়ার সক্ষমতাও সবার থাকে না। আর রাতে এটা সংগ্রহ করা হয়ে ওঠে দুরূহ। তবু কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৭
ইউজি/এএ