ময়মনসিংহ মুসলিম ইন্সটিটিউট পাঠাগারও প্রায় ৫০ বছর বয়সী। বছর দুয়েক আগে ব্রহ্মপুত্র নদঘেঁষা শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যানে ময়মনসিংহ পৌরসভা গড়ে তুলেছে ভাষাসৈনিক এম এ মতিন স্মৃতি পাঠাগার।
এ পাঠাগারগুলোতে এ শিক্ষা নগরীর পাঠকদের যাতায়াত রয়েছে।
কিন্তু প্রায় ৬ বছর আগে জিকেএমসি সাহা রোডের ভাড়া বাসা থেকে নিজস্ব ভবনে চলে আসার পরও দিন দিন পাঠক হারাচ্ছে ময়মনসিংহ জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার। ‘বাংলাদেশ পরিষদ’ নামের সমৃদ্ধ অতীতের সেই ধারাবাহিকতাও ধরে রাখতে পারেনি।
ময়মনসিংহের কবি-সাহিত্যিকরা অভিযোগ করেন, ‘এখানে দায়িত্বরতরা চাকরি করছেন মাত্র। তারা বই পড়ার লোক কি-না, সন্দেহ রয়েছে। এ লাইব্রেরির ভেতরের পরিবেশ যেমন পাঠক টানে না, তেমনি পঠন-পাঠনের বিকাশেও নেই কোনো উদ্যোগ’।
‘প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও পাবলিক লাইব্রেরিটির দিকে কোনো দৃষ্টি নেই। একে কেন্দ্র করে জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ বিকাশের ব্যাপারেও কখনো কাউকে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য দিতে দেখা যায় না। তারাও কখনো লাইব্রেরিমুখী হন না’- বলেন একজন।
ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক কবি-সাহিত্যিক ইয়াজদানী কোরায়শী কাজল বাংলানিউজকে বলেন, ‘নগরীর জিকেএমসি সাহা রোডে ছিল বাংলাদেশ পরিষদ। তখন বই পড়া সামাজিক আন্দোলন হিসেবে দাঁড়িয়েছিল। প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠাগার আন্দোলনের ওই সময়টাতে সমৃদ্ধ ছিল গ্রন্থাগারটিও’।
‘এ সময়টাতে প্রজন্মের প্রতিভা বিকাশের নানা উৎসাহব্যঞ্জক আয়োজন ও কর্মসূচি ছিল পাঠাগারটিকে ঘিরে। সেই সময়টাকেই ধরা হয় জ্ঞান ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার সোনালি অধ্যায় হিসেবে’।
তিনি বলেন, ‘তারুণ্যে কলেজ থেকে সোজা চলে যেতাম বাংলাদেশ পরিষদে। ওই সময় সেখানে অনুষ্ঠান হতো নিয়মিত। লেখক, কবি ও সাহিত্যিকদের মিলনমেলা বসতো’।
সাহিত্যে এবারের স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ, গবেষক ও অনুবাদক গোলাম সামদানী কোরায়শী’র বড় ছেলে কাজল বলেন, ‘আর এখন সরকারি গণগ্রন্থাগারের পরিবেশ পাঠাগার সুলভ নয়। সমসাময়িক অনুবাদ গ্রন্থও মেলে না সেখানে। সংস্কৃতিকর্মী ও বই পড়ুয়াদের এ পাঠাগারের সঙ্গে যোগাযোগও অনেক কম’।
বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক আশিক চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ পরিষদকে কেন্দ্র করে বই পড়া কর্মসূচি ও পাঠচক্র ছাড়াও শিশুদের সৃজনশীলতা বিকাশে কবিতা আবৃত্তি, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো’।
‘প্রয়াত গোলাম সামদানী কোরায়শী, অধ্যাপক যতীন সরকার, খগেশ কিরণ তালুকদার ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বাংলাদেশ পরিষদ কেন্দ্রিক বই পড়া মানুষ ছিলেন’।
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘সেই সময় ময়মনসিংহে জ্ঞান ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। স্টেশন রোডের তাজমহলের কবিতা আড্ডা ও মুক্ত বাতায়ন পাঠচক্র দীর্ঘদিন সক্রিয় ছিল’।
তকে মুক্ত বাতায়ন ভেঙে যাওয়ার পর ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ প্রতি শুক্রবার বীক্ষণ পাঠচক্র পরিচালনা করছে বলেও জানান তিনি।
কবি স্বাধীন চৌধুরী বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মকে পঠন-পাঠনে উৎসাহিত করার দায়িত্ব পালন করছে না সরকারি গণগ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ। পাবলিক লাইব্রেরিটির পরিবেশও সুবিধার নয়’।
কবি নিহার রঞ্জনের ভাষ্য, ‘গণগ্রন্থাগারে বই অপ্রতুল। নিরিবিলি পড়ার পরিবেশ নেই। গবেষণা, লোক সংস্কৃতির ওপর তথ্য সংক্রান্ত বই দরকার। এ অঞ্চলের গবেষণা গ্রন্থগুলো সহজলভ্য হওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৭
এমএএএম/এএসআর